বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয়ে যেতে পারত আরও কম রানে। কিন্তু ভারতীয় ফিল্ডারদের একের পর এক ভুলে সহজেই ২২৮ রানে পৌঁছে গেল নাজমুল হোসেন শান্তর দল। ন’ওভারে ৩৫ রানে ৫ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশ ইনিংসের শেষ ওভার পর্যন্ত ব্যাট করে গেল। দুবাইয়ে বুধবার রোহিত শর্মাদের ফিল্ডিংয়ের যে প্রদর্শনী দেখা গেল, তাতে আগামী ম্যাচগুলির জন্য বেশ চিন্তাই রইল। প্রশ্ন উঠছে, ফিল্ডিং কোচ টি দিলীপের ভূমিকা নিয়ে।
ক্যাচ ফস্কানো শুরু করেছিলেন রোহিত। তিনি স্লিপে ক্যাচ ফেলেছিলেন। হার্দিক পাণ্ড্য ক্যাচ ফেলেছিলেন মিড অফে। স্টাম্প করার সুযোগ পেয়েও হাতছাড়া করেছিলেন লোকেশ রাহুল। রান আউট সুযোগ ফস্কেছিলেন শ্রেয়স আয়ার। একের পর এক ভুলে বাংলাদেশের তোহিদ হৃদয় এবং জাকের আলি ১৫৪ রানের জুটি গড়ে ফেলেন। কিন্তু রোহিত ক্যাচ নিলে শূন্য রানে ফিরতে হত জাকেরকে। সেই তিনিই ১১৪ বলে ৬৮ রান করেন।
রাহুল দ্রাবিড় কোচ হয়ে ফিল্ডিং কোচ হিসাবে নিয়ে এসেছিলেন টি দিলীপকে। কোচ গৌতম গম্ভীরের সময়েও তাঁকে রেখে দিয়েছে বোর্ড। ২০২৩ বিশ্বকাপের সময় ভারতীয় দলের ফিল্ডিংয়ে উন্নতি করার লক্ষ্যে প্রতি ম্যাচ শেষে সাজঘরে অভিনবে ভাবে সেরা ফিল্ডারের পুরস্কার দেওয়ার রীতি শুরু করেছিলেন দিলীপ। এখনও ভারতের সাজঘরে সেই পুরস্কার দেওয়া হয়। কিন্তু বৃহস্পতিবার ভারতের ফিল্ডিংয়ের যে হাল দেখা গেল, তার পর আদৌ কাউকে পুরস্কার দেওয়া যাবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।
রোহিতের ভুল
অক্ষর পটেলের বলে স্লিপে ক্যাচ ফস্কেছিলেন রোহিত। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ম্যাচে নবম ওভারে বল করতে এসেছিলেন অক্ষর। সেই ওভারেই দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বলে তিনি তানজিদ হাসান এবং মুশফিকুর রহিমকে আউট করেন। দু’টি ক্ষেত্রেই ব্যাটে খোঁচা লেগে বল চলে যায় উইকেটরক্ষক লোকেশ রাহুলের হাতে। হ্যাটট্রিকের সুযোগ ছিল অক্ষরের কাছে। কিন্তু চতুর্থ বলে ব্যাটার জাকের আলির ব্যাটে খোঁচা লেগে বল চলে যায় স্লিপে দাঁড়ানো রোহিতের কাছে। সহজতম সুযোগ ছিল সেটি। বল সোজা রোহিতের হাতে আসছিল। কিন্তু রোহিত ক্যাচ ধরতে পারেননি। তাঁর হাত থেকে পড়ে যায় বল। রোহিত সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারেন কত বড় ভুল করে ফেলেছেন। মাটিতে চাপড় মারতে থাকেন তিনি হতাশায়। পরে উঠে দাঁড়িয়ে অক্ষরের কাছে হাত জোড় করে ক্ষমা চান। কিন্তু ভুল যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে।
হার্দিকের ভুল
২০তম ওভারে ক্যাচ ফস্কেছিলেন হার্দিক। কুলদীপ যাদবের বলে মিড-অফে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন তোহিদ। বল সোজা হার্দিকের হাতে আসছিল। শটে জোর থাকলেও ওই ক্যাচ ধরা উচিত ছিল তাঁর। কিন্তু হার্দিক পারেননি। বল ফস্কে যায় তাঁর হাত থেকে। নিজের ভুলের কথা মাথায় রেখে হার্দিক ক্যাচ ফেলায় খুব বেশি হতাশা দেখাননি অধিনায়ক রোহিত। কিন্তু সেই সময় তোহিদ আউট হয়ে গেলে ২৩ রানে শেষ হয়ে যেত বাংলাদেশি ব্যাটারের ইনিংস। কিন্তু সেখান থেকে তিনি দলকে বড় রানের পথে পৌঁছে দেন শতরান রান করে।
রাহুলের ভুল
উইকেটের পিছনে ভুল করেন রাহুলও। কোচ গৌতম গম্ভীর তাঁকে এক দিনের দলের প্রধান উইকেটরক্ষক হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু রাহুল স্টাম্প করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট দুর্বল। ২৩তম ওভারের প্রথম বলে রবীন্দ্র জাডেজাকে ক্রিজ় ছেড়ে বেরিয়ে এসে মারতে গিয়েছিলেন জাকের। কিন্তু তিনি ব্যাটে বল লাগাতে পারেননি। রাহুল সেই বল ধরতেও পারেননি। জাকের এতটাই এগিয়ে গিয়েছিলেন যে, বল ধরতে পারলে অনায়াসে স্টাম্প করতে পারতেন রাহুল। সেটা সম্ভব হয়নি। বেশ কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় রাহুল বল ধরলেও এত বেশি সময় নিচ্ছেন উইকেট ভাঙতে যে, ব্যাটারের ফিরে আসতে অসুবিধা হচ্ছে না।
শ্রেয়সের ভুল
রান আউটের সুযোগ ফস্কেছিলেন শ্রেয়স আয়ার। চতুর্থ ওভারে হর্ষিত রানার বলে রান নিতে গিয়েছিলেন তানজিদ হাসান। কিন্তু নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির কারণ মাঝ ক্রিজ় থেকে ফেরত যান। সেই সময় শ্রেয়স সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলেন রান আউট করার। কিন্তু বল উইকেটে লাগাতে পারেননি তিনি।
হর্ষিতের ভুল
৪৩তম ওভারে বাউন্ডারিতে ভুল করেন হর্ষিত। সেই সময় বল করছিলেন শামি। তাঁর বলে তোহিদ চার মারেন। ডাইভ দিয়েও বল আটকাতে পারেননি হর্ষিত। তিনি পৌঁছে গিয়েছিলেন, কিন্তু বল তাঁর হাতের মাঝখান দিয়ে চলে যায় বাউন্ডারিতে। চার রান পেয়ে যায় বাংলাদেশ।
একের পর এক ভুলে বাংলাদেশ প্রচুর সুযোগ পেয়ে যায়। ২৪০ রান উঠত না ভারত ফিল্ডিংয়ে এত উপহার না দিলে। ৩৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা দলকে অক্সিজেন দিলেন রোহিতেরাই।