পাঁচতলা থেকে ঝাঁপ দিয়ে ৪০ মিনিট পড়েই রইলেন ম্যাকাউটের এমটেক ছাত্রী, ডেকেও এল না অ্যাম্বুল্যান্স!

অধ্যাপিকা এবং ছাত্রের ‘বিয়ে’ নিয়ে শোরগোলের পর এ বার ছাত্রীমৃত্যু নিয়ে শোরগোল নদিয়ার হরিণঘাটার মৌলানা আবুল কালাম আজ়াদ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ম্যাকাউট)-এ। অভিযোগ, পরীক্ষা চলাকালীন এক শিক্ষকের হেনস্থায় অপমানিত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচতলা থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন এমটেকের প্রথম বর্ষের এক ছাত্রী। এর মধ্যে অভিযোগ উঠেছে কর্তৃপক্ষের গাফিলতিরও। পড়ুয়াদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে রক্তাক্ত অবস্থায় প্রায় ৪০ মিনিট পড়ে ছিলেন সায়নী সেন নামে ওই ছাত্রী। পরে পুলিশ গিয়ে দেহ উদ্ধার করেছে।

পড়ুয়াদের দাবি, সোমবার সন্ধ্যায় উপর থেকে ভারী কিছু পড়ার শব্দ পেয়ে ছুটে গিয়েছিলেন কয়েক জন। দেখা যায়, সায়নী পড়ে রয়েছে। তত ক্ষণে রক্তে ভেসে গিয়েছে তাঁর শরীরের চারপাশ। তবে শ্বাসপ্রশ্বাস চলছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অ্যাম্বুল্যান্স থাকা সত্ত্বেও দীর্ঘ ৪০ মিনিট সেটির দেখা মেলেনি। বিক্ষোভ শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। গোটা বিষয়টি জানাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে ফোন করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি ফোনে সাড়া মেলেনি।

ওই ভাবে আধ ঘণ্টা পেরিয়ে যাওয়ার পরে পুলিশ আসে ক্যাম্পাসে। তারা সায়নীকে উদ্ধার করে হরিণঘাটা গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু কর্তব্যরত চিকিৎসক জানিয়ে দেন, আগেই মৃত্যু হয়েছে ওই ছাত্রীর। পড়ুয়ারা প্রশ্ন তুলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাম্বুল্যান্স থাকা সত্ত্বেও কেন ওই ভাবে পড়ে থাকতে হল ছাত্রীকে? অর্কদীপ চক্রবর্তী নামে এক পড়ুয়া বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করা যায়নি। তার পর অ্যাম্বুল্যান্স পাওয়া গেল, কিন্তু চালক মিলল না। ঠিক সময়ে সায়নীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারলে হয়ত ওকে বাঁচানো যেত।’’ কেকা কর্মকার নামে এক ছাত্রীর অভিযোগ আরও মারাত্মক। তিনি বলেন, “পরীক্ষাকেন্দ্রের ভিতরে একপ্রকার হেনস্থা করা হয়েছিল ওকে (সায়নীকে, সোমবার তাঁর দ্বিতীয় সিমেস্টারের পরীক্ষা ছিল। এক শিক্ষক ওই ছাত্রীকে হেনস্থা করেন বলে অভিযোগ উঠেছে)। বারবার আত্মপক্ষ সমর্থনের চেষ্টা করলেও সেই সুযোগ দেওয়া হয়নি ওকে। বাইরে বেরিয়েও বেশ কিছু খারাপ কথা বলা হয়েছিল বলে জানতে পারছি। ওই শিক্ষকের উদ্দেশ্য এবং ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যথাযথ তদন্ত করে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে কর্তৃপক্ষকে।’’

এই ঘটনায় এখনও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সরকারি ভাবে কোনও বিবৃতি দেননি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্রে দাবি করা হয়েছে, পরীক্ষার সময় টোকাটুকি করতে গিয়ে ধরা পড়ে যান সায়নী। এ জন্য ছাত্রীকে ‘শাসন’ করেছিলেন এক শিক্ষক। তার পরেই নাকি সায়নী সকলের নজর এড়িয়ে পাঁচতলা থেকে ঝাঁপ দেন।

কিন্তু কী ভাবে সকলের নজর এড়িয়ে পাঁচতলায় পৌঁছে গেলেন ওই ছাত্রী? ঠিক কী কারণে আত্মহত্যা করলেন? উঠছে একাধিক প্রশ্ন। মৃত ছাত্রীর বাড়ি পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুরে। তাঁর পরিবারের সঙ্গে পুলিশ যোগাযোগ করছে বলে খবর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.