ফাঁসি দিতে হাত কাঁপবে না, বুকও কাঁপবে না! সঞ্জয়ের শাস্তি ঘোষণার আগে বলে দিলেন নাটা মল্লিকের ছেলে

আরজি কর-কাণ্ডে দোষী সঞ্জয়ের ফাঁসির শাস্তি হলে তা কার্যকর করতে হাত কাঁপবে না ফাঁসুড়ে নাটা মল্লিকের পুত্র মহাদেব মল্লিকের। আদালতের নির্দেশের আগের রাতে আনন্দবাজার অনলাইনকে সে কথাই জানিয়ে দিলেন ৬০ ছুঁইছুঁই প্রৌঢ়। ফাঁসির নির্দেশ কার্যকর করার দরকার পড়লে যে তাঁর ডাক পড়তে পারে, জানেন মহাদেব। তার জন্য তিনি প্রস্তুতও। শনিবারই সঞ্জয়কে দোষী সাব্যস্ত করে শিয়ালদহ আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাস জানিয়ে দিয়েছেন, এই অপরাধে সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে তাঁর।

কলকাতা পুরসভায় কাজ করেন মহাদেব। ২০০৪ সালে ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের ফাঁসির সময় প্রেসিডেন্সি জেলে বাবার সহকারী হিসাবে ছিলেন তিনি। এখনও পর্যন্ত এ রাজ্যে সেটাই শেষ ফাঁসির ঘটনা। সোমবার সঞ্জয়কে ফাঁসির শাস্তি দেওয়া হলে তার জন্য কি মানসিক ভাবে প্রস্তুত? মহাদেব বললেন, “ফাঁসি দিতে হলে সরকার আমাকে ডাকবে। এই কাজটা তো সবাই করতে পারে না। ডাকলে যাব! আমি বাবার কাছ থেকে যতটা শিখেছি, করতে পারব। অসুবিধা হবে না।”

ফাঁসি দিতে হাত কাঁপবে না? মহাদেব নিরুত্তাপ, “হাত কাঁপবে না, বুকও কাঁপবে না। আগেও এই কাজ করেছি। বাবার শরীর খারাপ থাকলে তো আমাকেই করতে হত সব!”

এখনও পর্যন্ত মোট তিনটি ফাঁসির নির্দেশ কার্যকর করিয়েছেন মহাদেব। প্রতি ক্ষেত্রেই অবশ্য বাবার সঙ্গে ছিলেন। ধনঞ্জয়ের আগে ১৯৯১ সালের জোড়া ফাঁসির স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে বললেন, “লোক দুটোর নাম ছিল কার্তিক শীল আর সুকুমার বর্মন। সম্পত্তির লোভে নিজের কাকার পুরো পরিবারকে খুন করেছিল কার্তিক। সঙ্গ দিয়েছিল তার বন্ধু সুকুমার। ১২-১৩ বছরের একটি মেয়ে ওদের হাত থেকে বেঁচে গিয়েছিল। সে-ই রাজসাক্ষী হয়। ওই ফাঁসিতে আমি ছিলাম।”

সঞ্জয়ের উপর ক্ষোভ চেপে রাখতে পারেননি মহাদেব। বলেন, “যিনি মারা গিয়েছেন, তিনি তো ডাক্তার ছিলেন! তাঁকে কী ভাবে মারল! ডাক্তার তো আমাদের কাছে ভগবান। কত লোকের প্রাণ বাঁচান। কী হচ্ছে চারপাশে! এ সব লোকের উপর কি মায়া থাকে আর?” আইনে না-থাকলেও ব্যক্তিগত ভাবে তিনি চান, এই ধরনের অপরাধীদের হিংস্র বাঘের মুখে ছেড়ে দেওয়া উচিত, তা জানাতেও দ্বিধা করেননি মহাদেব।

অনেকের মতো মহাদেবও অবশ্য বিশ্বাস করেন না, সঞ্জয়ের একার পক্ষে এই কাজ সম্ভব। আরও কেউ কেউ এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে তাঁর মনে হয়। মহাদেবের আক্ষেপ, “সঞ্জয় একা এই কাজ করেনি। একা এটা ও করতেই পারে না। আরও যারা আছে, তারা তো ধরাই পড়ছে না।” তবে সঞ্জয়ের মৃত্যুদণ্ডই চান, সাফ জানিয়ে দিয়েছেন নাটার পুত্র। তাই বাকিদের মতো সোমবার তাঁর চোখও থাকবে শিয়ালদহ আদালতের বিচারক দাসের এজলাসে।

সোমবার শিয়ালদহ আদালতে ফাঁসির নির্দেশ হলেই যে সঞ্জয়ের ক্ষেত্রে তা কার্যকর করা হবে, তা নয়‌। যে শাস্তিই হোক, নিম্ন আদালতের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে যেতে পারবেন সঞ্জয়। প্রথমে তাঁকে হাই কোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চে আবেদন জানাতে হবে। সেখানে নিম্ন আদালতের নির্দেশ বহাল থাকলে সঞ্জয় আবেদন জানাতে পারবেন ডিভিশন বেঞ্চে। সেখানেও না-হলে সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারবেন তিনি। যদি ফাঁসির নির্দেশ হয় এবং শীর্ষ আদালত তা বহাল রাখে, সে ক্ষেত্রে সঞ্জয়ের শেষ ভরসা রাষ্ট্রপতি। তাঁর কাছে ক্ষমাভিক্ষা করতে হবে সঞ্জয়কে। রাষ্ট্রপতি ক্ষমা না-করলে মহাদেবের ডাক পড়বে। তার আগে নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.