প্রসূতি মৃত্যু কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রীর সাংবাদিক বৈঠকের পরেই তাঁর মন্তব্যের বিরোধিতা করে সরব হলেন সুকান্ত মজুমদার। সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছেন, চিকিৎসকদের গাফিলতির কারণেই এত বড় বিপর্যয়। মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের পাল্টা দিয়ে সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, এই ঘটনায় খোদ মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্য মন্ত্রীই দায়ী।
সুকান্ত মজুমদার বলেন, মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, তিনি রাজ্যে ৪২টি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল করেছেন, কিন্তু এই হাসপাতালগুলি নামেই সুপার স্পেশালিটি, আসলে এগুলি সুপার ফ্লপ, কতগুলো নীল সাদা বিল্ডিং। কাজের কাজ কিছুই হয় না সেখানে।
চ্যালেঞ্জের সুরে সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর যদি ক্ষমতা থাকে তাহলে নিজের পরিবারের সদস্যদের রাজ্যের বিভিন্ন জেলার একেকটি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে চিকিৎসক করান। যেমন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় চিকিৎসা করাতে পারেন ডায়মন্ড হারবারের সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে।
সেলাইন কান্ডে সুকান্ত মজুমদার প্রশ্ন তোলেন, যখন এই সেলাইন উৎপাদন বন্ধ করা হয়েছে, তখন হাসপাতালে ব্যবহার করা বন্ধ হয়নি কেন? এতে সাধারণ মানুষের কোনো লাভ হয়নি, বরং এই সময়কালে যতদিন পর্যন্ত এই স্যালাইন ব্যবহার হয়েছে ততদিন পর্যন্ত প্রতিটি রোগী হাই রিস্কে ছিল। কেউ মারা গেছে, কেউ ভাগ্যের জোরে বেঁচে গেছে। তাঁর দাবি, এবার কেঁচো খুঁড়তে হয়তো কেউটে বেরবে। দেখা যাবে আরো হয়তো কেউ এসবের সঙ্গে যুক্ত। নিশ্চিত ভাবে এর পেছনে কোনো আর্থিক চাপ ছিল। পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউক্যালকে অর্ডার দেওয়ার সময় স্বাস্থ্য ভবন থেকে পয়সা কড়ি নেওয়া হয়েছিল। স্বাস্থ্য মন্ত্রীর তরফ থেকে হয়তো পয়সা নেওয়া হয়েছে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি বলেন, কর্ণাটক রাজ্যে পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানির ওষুধ এবং স্যালাইন ব্ল্যাকলিস্ট করা হয়েছে। তার পরও কেন এই রাজ্যে এই কোম্পানির সেলাইন ব্যবহার করা হল।
একই সঙ্গে আন্দোলনকারী চিকিৎসক আসফাকুল্লা নাইয়ার বিরুদ্ধে পুলিশের যে পদক্ষেপ করেছে সেই প্রসঙ্গে সুকান্ত মজুমদার বলেন, আগেই বলেছিলাম, আরজিকর কান্ডে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে দুই থেকে চার মাসের মধ্যে প্রতিহিংসা পরায়ণ পদক্ষেপ করবে মুখ্যমন্ত্রী। তাই হচ্ছে এখন। মুখ্যমন্ত্রীর মেদিনীপুরে প্রসূতি মৃত্যু পরে ১২ জন চিকিৎসককে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্তের বিষয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার বলেন, এটা খুন। মুখ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজের ঘাড়ে কিছু নেবেন না। সব দোষ অন্যের ঘাড়ে। অন্যের কাঁধে বন্দুকটা ভালোই ফাটাতে পারেন তিনি। এটা নতুন কিছু না। মুখ্যমন্ত্রী শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছেন। কিন্তু ঢাকা যাচ্ছে না। সব দেখা যাচ্ছে। টাকা দিয়ে মানুষকে চাকরি দিয়ে কতদিন মুখ বন্ধ করে রাখবেন? এভাবে মুখ বন্ধ করা যায় না।
তিনি আরো বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী যদি আগে তার দায়িত্ব পালন করতেন, তাহলে এই ধরনের ঘটনা ঘটতো না। আলিপুরদুয়ারের একজন ডাক্তারবাবু যখন ওষুধের কোয়ালিটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সেই প্রশ্ন তোলার জন্য তাকে শোকাজ করা হয়েছে। যতদিন না তিনি চাকরি ছেড়েছেন তাকে ব্যতিব্যস্ত করে মারা হয়েছে। উনি প্রথমে দুর্নীতি নিয়ে সরব হন। তখন তার নিরাপত্তা পাওয়ার কথা। তা না করে তাকে বাধ্য করা হয়েছিল সরকারি চাকরি ছেড়ে দিতে। ভুল ধরিয়ে দেওয়ার পরেও তাকে যদি সরিয়ে দেওয়া হয়, তার মানে ভুলটা ছিল ইচ্ছাকৃত।