‘নাট্যাচার্য গিরিশচন্দ্র ঘোষ বঙ্গ নাট্যমেলা’র আয়োজন করল ‘সংস্কার ভারতী পশ্চিমবঙ্গ(দক্ষিণবঙ্গ প্রান্ত)’ এবং ‘ভারতীয় সংস্কৃতি ন্যাস’

২২ শে নভেম্বর,পানাগর,পশ্চিম বর্ধমান। ‘সংস্কার ভারতী পশ্চিমবঙ্গ(দক্ষিণবঙ্গ প্রান্ত)’ আয়োজিত এবং ‘ভারতীয় সংস্কৃতি ন্যাস’-এর সহোযোগিতায় পশ্চিম বর্ধমানের পানাগরের নিকটবর্তী ‘তেপান্তর নাট্যগ্রাম’-এর ‘ব্ল্যাকবক্স থিয়েটার’-এ দু’দিন ব্যাপী নাট্যাচার্য ‘ নাট্যাচার্য গিরিশচন্দ্র ঘোষ বঙ্গ নাট্যমেলা’র আয়োজন করা হয়। প্রথম দিন নাট্যৎসবের উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট নাট্য নির্দেশক কল্লোল ভট্টাচার্য। উপস্থিত ছিলেন সংস্কার ভারতী পশ্চিমবঙ্গ(দক্ষিণবঙ্গ প্রান্ত)-এর কার্যকরী সভাপতি সুভাষ ভট্টাচার্য এবং বিশিষ্ট সমাজসেবী সারদা প্রসাদ পাল। ‘সংস্কার ভারতী’ অখিল ভারতীয় সম্পাদিকা নীলাঞ্জনা রায় নাট্যাচার্য গিরিশচন্দ্র ঘোষের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করেন এবং প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ক’রে নাট্যৎসবের শুভ সূচনা হয়।

প্রথম দিনের নাট্য মেলায় বাংলার নাটক ও গিরিশ চন্দ্র ঘোষের অবদান – এই নিয়ে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সভায় এই বিষয়ে বক্তব্য রাখেন নাট্যকার ও নির্দেশক কল্লোল ভট্টাচার্য।

নাট্যাচার্য গিরিশচন্দ্র ঘোষ এর প্রতি উৎসর্গীকৃত প্রথম বঙ্গ নাট্য মেলাও হল সাত কাহনিয়ার তেপান্তর নাট্যগ্রামে। এই নাট্য মেলার উদ্বোধন হয় ‘এবং আমরা’ নাট্য দলের নতুন নাট্য প্রযোজনা ‘একটি ভালোবাসার গল্প’ অভিনয়ের মধ্যে দিয়ে।

‘এবং আমরা’ নাট্য দল যে অঞ্চলে কাজ করেন সেই অঞ্চলে বসবাস করেন অনেক আদিবাসী সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মানুষ। এই মানুষদের একটি প্রচলিত লোককথাকে অবলম্বন করে নির্মিত হয়েছে নাটকটি। গল্পটি সাঁওতাল সম্প্রদায়ের লোককথা কিন্তু গল্পের আবেদন সমকালীন এবং সর্বজনীন। মানুষের সাথে মানুষের ভালোবাসা এবং প্রকৃতির সাথে মানুষের ভালোবাসাকে রক্ষা করার কথা বলা হয়েছে নাটকটিতে। গাছপালা, পশু, পাখি, প্রকৃতি এই সব কিছুকে রক্ষা করা, ভালোবাসার মধ্যেই রয়েছে মানুষের ভালো ভাবে বেঁচে থাকার আসল রহস্য – সেই কথাটাই বলা হয়েছে সাঁওতাল সম্প্রদায়ের লোককথা অবলম্বনে নির্মিত ‘একটি ভালোবাসার গল্প’ নাট্য প্রযোজনা টিতে।

এদিনই নাট্যমেলার উদ্বোধন সত্রে সংস্কার ভারতী পশ্চিমবঙ্গ-এর নতুন প্রয়োজনা ‘কেন চেয়ে আছ গো মা’- নাটকটির নামাঙ্কন প্রকাশ হয়।

সংস্কার ভারতীর নতুন প্রয়োজনা অনামী বিপ্লবী ননীবালা দেবীকে কেন্দ্র করে। আগামী তিন মাসের মধ্যে এই নাটক পশ্চিমবঙ্গের মানুষ দেখতে পাবেন বলে ঘোষণা করেন নাট্য নির্দেশক অমিত দে।

তিনি বলেন,”ননীবালা দেবী ভারতবর্ষের সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে বাংলার প্রথম মহিলা রাজবন্দী। তিনি ছিলেন সেই অগ্নিযুগের ঐতিহাসিক ‘যুগান্তর’ বিপ্লবী দলের অন্যতম একনিষ্ঠ কর্মী। তার লৌহসম দৃঢ় ব্যক্তিত্ব ব্রিটিশ পুলিশের ভীত নাড়িয়ে দিয়েছিল। আজকের যুগে দাঁড়িয়েও আমরা শিহরিত হই ননীবালা দেবীর উপরে পুলিশের অকথ্য, পাশবিক নির্যাতনের কথা শুনে। জেলে বন্দী থাকাকালীন তাঁর পুলিশ অফিসারকে সজোরে চড় মারার অতিবিরল ঘটনাটিও আমাদেরকে চমকিত করে। তবু তিনি উপেক্ষিতা। আত্মীয়-পরিজন, সংসার, সমাজের আড়ালে তিনি একাকিনী, অসহায় অথচ প্রবল আত্মমর্যাদাজ্ঞানসম্পন্না এক মহীয়সী নারী। তাই দেশ স্বাধীন হবার পরে অসুস্থ অবস্থাতেও সরকারি পেনশন নিতে তিনি অস্বীকার করেছিলেন। তাঁর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে সংস্কার ভারতী পশ্চিমবঙ্গ(দক্ষিণবঙ্গ প্রান্ত)-এর নাট্য নিবেদন- ‘কেন চেয়ে আছ গো মা’। আজকের যুগের বাঙালিকে এই নাটক ভাবিয়ে তুলবে বলে আমি বিশ্বাস করি। বাঙালির রক্তে প্রতিবাদ আছে। সমস্ত অন্যায়ের বিরুদ্ধে গর্জে উঠবে তারা। এ নাটক মানুষের ভাবনার পরিবর্তন করবে।”

এই বঙ্গ নাট্যমেলা সম্পর্কে ‘সংস্কার ভারতী পশ্চিমবঙ্গ(দক্ষিণবঙ্গ প্রান্ত)’-এর সাধারণ সম্পাদক তিলক সেনগুপ্ত বলেন,” ভারতে নাটক অত্যন্ত প্রাচীন কাল থেকেই জনপ্রিয়। ভরত মুনির নাট্যশাস্ত্র সে কথা প্রমাণ করে। আধুনিক সময়ে বঙ্গের নাটককে বিশেষ ভাবে জনপ্রিয় করে তোলে নাট্যাচার্য গিরিশচন্দ্র ঘোষ। নাটকে ‘লোক শিক্ষে হয়’ বলে শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব মন্তব্য করেছিলেন। তিনি নিজে গিরিশ চন্দ্র ঘোষের নাটক দেখেছিলেন। বঙ্গের ‘কুনাট্য’ দেখে শ্রী মধুসূদন দত্ত নিজেও দু:খ পেয়ে নাটক রচনা করেছিলেন। সেই নাট্যশিল্পকে বিশেষ ভাবে জনপ্রিয় ও দেশাত্মবোধ জাগরণের আধার করে গড়ে তোলেন গিরিশ চন্দ্র ঘোষ ও তাঁর ন্যাশনাল থিয়েটার। আমরা সেই মহান ব্যক্তিত্বকে শ্রদ্ধা জানাতেই আয়োজন করেছি ‘নাট্যাচার্য গিরিশচন্দ্র ঘোষ বঙ্গ নাট্য মেলা’র এবং প্রতিবছর উৎসাহের সাথেই পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে এই নাট্যমেলার আয়োজন করা হবে।”

মিলন খামারিয়া

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.