Evetizing, Durgapur, ইভটিজিংয়ের আতঙ্ক! দুর্গাপুরের বিধাননগরে ছিনতাইবাজদের দৌরাত্ম, জখম ১ তরুণী

শুনশান রাস্তায় ইভটিজিংয়ের আতঙ্ক! অন্ধকার নামলেই ছিনতাইবাজদের দৌরাত্ম। কর্মস্থলে যাওয়ার পথে মহিলা নিরাপত্তারক্ষীর ব্যাগ ছিনতাইয়ের চেষ্টা। বরাত জোরে প্রাণে বাঁচল ওই মহিলা নিরাপত্তারক্ষী। তিন দিনে দু-দুটি ঘটনায় প্রশ্ন উঠল রাতের শহরের নিরাপত্তায়। বুধবার সন্ধ্যায় চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে, দুর্গাপুরের বিধাননগরের আরণ্যক বাসস্ট্যান্ড থেকে দিল্লি পাবলিক স্কুল রোডে। পুলিশি টহলের দাবি জানিয়েছে শহরের এক বেসরকারি নার্সিং কলেজ কর্তৃপক্ষ। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে কমিশনারেট পুলিশ।

ঘটনায় জানাগেছে, দুর্গাপুরের বিধাননগরের আরণ্যক বাসস্ট্যান্ড থেকে দিল্লি পাবলিক স্কুলের রাস্তার ওপর রয়েছে নার্সিং কলেজের হোষ্টেল, বেসরকারি সংস্থার আইটি প্রতিষ্ঠান। একাধিক ইংরাজি মাধ্যম স্কুল। স্বাভাবিকভাবেই রাস্তাটি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। অভিযোগ, গত কয়েকদিন ধরে ছিনতাইবাজদের দৌরাত্ম শুরু হয়েছে। নম্বরবিহীন মোটর বাইকে জনা কয়েক দুষ্কৃতির অবাধ বিচরণ শুরু হয়েছে। আর সুযোগ বুঝেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও কলেজের মেয়েদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে। তাদের কাছ থেকে মোবাইল, ব্যাগ গয়না ছিনতাইয়ের চেষ্টা চলছে। আর তাতেই আতঙ্ক ছড়িয়েছে ওই এলাকায়। ছিনতাইবাজদের গ্রাস থেকে ফেরা

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষিকা সুরভি দত্ত জানান,
“আমরা দুই সহকর্মী অন্যান্য দিনের মতই গত ২২ অক্টোবর কলেজ থেকে বেরিয়ে ওই রাস্তা দিয়ে হোষ্টেলে যাচ্ছিলাম। সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ আইটি পার্কের পিছনের রাস্তার ওপর নম্বর বীহিন মোটর বাইকে তিন যুবক আমার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। সেটা আটকাতেই, কিছুটা দূরে আমাদের সামনে দাঁড়ায় ওই যুবকরা। বাইক থেকে নেমে আমাদের দিক আসছিল, ওই সময় সামনের দিক থেকে একটা চারচাকা গাড়ি আসতেই, গাড়ি গাড়ি বলে আমরা চিৎকার শুরু করি। গাড়ি দেখে তিনজনই সেখান থেকে চম্পট দেয়।”

আর এক শিক্ষিকা অর্পিতা মিশ্র জানান, “কলেজের পিছনের ওই রাস্তার দু’পাশে ঝোঁপ জঙ্গলে ভর্তি। সন্ধ্যার পর যানবাহন খুব বেশি যাওয়া আসা করে। যুবকরা যখন টার্গেট করেছিল, ওই সময় চারচাকা গাড়িটা আসতেই আমরা বরাত জোরে অঘটন থেকে বেঁচে যাই। আমাদের ওপর অসভ্যতা করার টার্গেট করছিল। চারচাকা গাড়িটা না আসলে হয়তো আমাদের ওপর হামলা করত। ঘটনার পর চরম আতঙ্কে রয়েছি। গোটা বিষয়টি কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।”

বুধবার রাতে একইরকমভাবে আক্রান্তের শিকার হয় কবিতা রজক নামে ওই কলেজের হোষ্টেলের এক মহিলা নিরাপত্তারক্ষী। এদিন রাতে ডিউটিতে আসার পথে একইরকমভাবে নম্বর বিহীন মোটরবাইকে দুই যুবক পিছু ধাওয়া করে বলে অভিযোগ। কবিতা রজক জানান, “নাইট শিফট ডিউটি ছিল। আরণ্যক বাস স্ট্যান্ডে বাস থেকে নেমে হোস্টেলের দিকে হেঁটে আসছিলাম। মাঝপথে দু’জন দুষ্কৃতি মোটর বাইকে আসে এবং আমার হাত থেকে ব্যাগ ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে। হাতের ব্যাগ ধরে টানা হ্যাঁচড়া করার সময় দু’জন পড়ে যায়। আমিও রাস্তার ওপর পড়ে যাই। আমার মাথায় লাগে। ওইসময় পিছন থেকে একটা মোটর বাইক আসতেই ওই দুই যুবক পালিয়ে যায়। আহত পড়ে থাকতে দেখে পরে আসা ওই মোটর বাইক আরোহী আমাকে হোষ্টেলে পৌঁছে দেয়। তারপর সেখান থেকে হাসপাতালে নিয়ে যায় আমাকে। ঘটনার পর চরম আতঙ্কে রয়েছি।”

বৃহস্পতিবার বেসরকারি ওই ডিএসএমএস নার্সিং কলেজ কর্তৃপক্ষ দুর্গাপুর নিউ টাউনশিপ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। কলেজের সুপার বিধান সরকার জানান, “গত কয়েকদিন ধরে যেভাবে ছিনতাইবাজদের দৌরাত্ম বেড়েছে তাতে আতঙ্কিত। ওই রাস্তার ওপর পুলিশি টহলের দাবি জানিয়েছি।”

এদিকে একের পর এক ঘটনায় শহরে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। উল্লেখ্য, গত ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের গোড়াতে বিধাননগরে হাসপাতালের কর্মস্থল থেকে ফেরার পথে দুষ্কৃতিদের পাশবিক আক্রমনের শিকার হন এক ভিনরাজ্যের তরুণী নার্স। ঘটনায় এক যুবক গ্রেফতার হয়েছিল। তারপর ওই বছরই ১৭ ডিসেম্বর বিকেলে নিউটাউনশিপ থানার এবিএলের জঙ্গলে বাড়ি পৌঁছানোর নাম করে এক মূক ও বধির তরুণীকে জঙ্গলে টেনে নিয়ে গিয়ে জোরপূর্বক শারীরিক নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ। পরে তরুণীর জামাইবাবুর নজরে পড়তেই তরুণীকে উদ্ধার করে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বিধাননগরে ওইসব এলাকায় সন্ধ্যার অন্ধকার নামতেই ওই রাস্তার পাশে ঝোঁপজঙ্গলে মদ, গাঁজা ও সমাজ বিরোধীদের আসর বসে। ফলে রাতের অন্ধকারে মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।

এদিকে প্রতিবাদে সরব হয়েছে বিজেপি। বিজেপি বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘড়ুই বলেন, “দুর্গাপুর শহরে সমাজ বিরোধীদের আঁখড়া তৈরী হয়েছে। শহরে নিরাপত্তা তলানিতে। তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অপরাধীর গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি।”

আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেট ডিসি (পূর্ব) অভিষেক গুপ্তা জানান, “অভিযোগের বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.