পুজোর মুখে, ‘অস্থির’ সময়ে ৫ ঘণ্টায় ৪ নির্দেশ কলকাতা পুলিশের! জারি বিবিধ সতর্কতা

আরজি কর-কাণ্ডের জেরে কলকাতার পুলিশ কমিশনারের পদ থেকে সরানো হয়েছে বিনীত গোয়েলকে। সেই পদে মনোজ বর্মাকে আনা হয়েছে। ‘কঠিন সময়ে’ দায়িত্ব নিয়ে হাসপাতালগুলির নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখেছেন তিনি। পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় বজায় রাখার জন্য বৈঠক করেছেন শহরের সব বড় পুজো উদ্যোক্তাদের সঙ্গে। এরই মাঝে মহালয়ার ঠিক আগের দিন রাতে মাত্র পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে চারটি নির্দেশিকা জারি করল কলকাতা পুলিশ। মনোজের সই করা সেই সব নির্দেশিকায় ভাড়াটে বা পেয়িং গেস্ট সংক্রান্ত নিয়মাবলির পাশাপাশি সাইবার কাফে পরিচালনা, পরিবেশ রক্ষার্থেও বিভিন্ন নির্দেশের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়াও ওই সব নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, বেশ কিছু এলাকায় হিংস্র কার্যকলাপের খবর রয়েছে কলকাতা পুলিশের কাছে। ওই সব এলাকায় ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতার ১৬৩ ধারা জারি করার কথা জানিয়েছে পুলিশ।

ভাড়াটে সংক্রান্ত নির্দেশিকা।

নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, যে কেউ নিজের ঘর ভাড়া দিতেই পারেন। কিন্তু সেই ভাড়াটের পরিচয় সম্পর্কে সবিস্তার জানতে সর্বদা তৎপর কলকাতা পুলিশ। ভাড়াটের আড়ালে যে কোনও দুষ্কৃতী বা জঙ্গি ঠাঁই নিতে পারে। এর ফলে এলাকার শান্তিশৃঙ্খলা ভঙ্গ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এমনকি, প্রাণনাশের ঘটনাও ঘটতে পারে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, কোনও বাড়িওয়ালা কাউকে তাঁর বাড়ি ভাড়া বা পেয়িং গেস্টদের ব্যবহারের জন্য দিলে তা লিখিত আকারে স্থানীয় থানাকে জানিয়ে রাখতে হবে। এর পাশাপাশি, ভাড়াটে সম্পর্কিত সকল তথ্যও জমা দিতে হবে পুলিশের কাছে।

জমায়েত সংক্রান্ত নির্দেশিকা।

দ্বিতীয় নির্দেশিকায় পুলিশ জানিয়েছে, বিশ্বস্ত সূত্রে তাদের কাছে খবর আছে আগামী কিছু দিনে বেশ কিছু মিছিল, সমাবেশ রয়েছে। সেই সব মিছিল বা সমাবেশের কারণে বেশ কিছু এলাকার শান্তিভঙ্গ হতে পারে। শান্তি বজায় রাখতে ওই সকল এলাকায় ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতার ১৬৩ ধারা জারি করার কথা জানিয়েছে পুলিশ। ২ অক্টোবর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত অর্থাৎ আগামী দু’মাসের জন্য ওই সকল এলাকায় এক সঙ্গে পাঁচ জনের জমায়েত নিষিদ্ধ থাকবে। ময়দান থানার আওতায় থাকা প্রেস ক্লাব চত্বর, নিউ রোড এবং মেয়ো রোড ক্রসিং, খিদিরপুর ক্লাব এবং বিধান মার্কেটের মাঝের রাস্তা এবং মেয়ো রোডের উত্তরের ফুটপাথে জমায়েত নিষিদ্ধ। হেয়ার স্ট্রিট থানার অন্তর্গত ফেয়ারলি প্লেস এবং ইন্ডিয়ান এক্সচেঞ্জ, শহিদ ক্ষুদিরাম বসু সরণি এবং রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ, ব্রাবোর্ন রোড, ডালহৌসি, ওল্ড কোর্ট হাউস স্ট্রিট, স্ট্র্যান্ড রোড এবং লালবাজার চত্বরেও সব রকম জমায়েত নিষিদ্ধ।সা

সাইবার কাফেগুলিকে নির্দেশ।

তৃতীয় নির্দেশিকা সাইবার কাফেগুলির জন্য। ওই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, শহরের সাইবার কাফেগুলিতে বহু লোকের যাতায়াত রয়েছে। সেখানে ইন্টারনেট সংযোগ সহজলভ্য। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দুষ্কৃতী বা জঙ্গিরা রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ চালাতে পারে। যার ফলে দেশের নিরাপত্তা তথা এলাকার শান্তি ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে। সাইবার কাফেগুলিকে পুলিশের নির্দেশ— সচিত্র পরিচয়পত্র ছাড়া কাউকে সাইবার কাফে ব্যবহার করতে দেওয়া যাবে না। কারা আসছেন কাফেতে তার নথি রাখতে হবে। যে বা যাঁরা আসছেন কাফেতে তাঁদেরকে দিয়ে রেজিস্টারে নাম লিখিয়ে নিতে হবে। ছয় মাসের জন্য যে কোনও কম্পিউটারের সার্ভারের তথ্য জমা রাখতে হবে। কারও প্রতি সন্দেহ হলে স্থানীয় থানাকে তৎক্ষণাৎ সেই বিষয়ে অবহিত করতে হবে এবং তিনি কোন কম্পিউটার ব্যবহার করেছেন সেই সম্পর্কিত তথ্যও রাখতে হবে।

পরিবেশ সংক্রান্ত নির্দেশিকা।

চতুর্থ নির্দেশিকা পরিবেশ সংক্রান্ত। শহরকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করতে এবং পরিবেশ রক্ষার্থে সব রকমের বর্জ্য পোড়ানো নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে কলকাতা পুলিশ।

এই সব ক’টি নির্দেশিকা ২ অক্টোবর থেকে জারি হবে। আগামী দু’মাস অর্থাৎ ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত তা বলবৎ থাকবে। নির্দেশ ভঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিক অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে পারবে বলেও জানানো হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.