১০০ বছর পার করলেন ঠাকুমা, নাতি দিলেন বড় উপহার

 ঠাকুমা নাতির মধুর সম্পর্ক চিরন্তন। এই মধুর সম্পর্কের মধ্য দিয়ে ঠাকুমা আজ ১০০ বছরে পা দিলেন। তাই আনন্দে আত্মহারা নাতিপুতি সহ বাড়ির সকলে। আজ এই আনন্দের দিনটাকে স্মরণীয় করে রাখতে ঠাকুমার জন্মদিন পালন করছে নাতিপুতি, ছেলে, ছেলের বউ সবাই মিলে। ঠাকুমাকে বসানো হল সিংহাসনে, বাজল ব্যান্ড, করানো হল মিষ্টিমুখ। রাতে খাওয়ানো হল অতিথি এবং নিমন্ত্রিতদের।

উত্তর ২৪ পরগনার সুখচর জয়প্রকাশ নগরের বাসিন্দা মীনারানী অধিকারী আজ ১০০ বছর পূর্ণ করলেন। আর এই জন্মদিনকে স্মরণীয় করে রাখতে এবং ঠাকুমাকে আনন্দ দিতে তাঁর জন্মদিন পালন করলেন দুই নাতি, নাতবউ, ছেলের বউ।

গত কয়েকদিন ধরেই সময়ের অপেক্ষায় ছিলেন বড় নাতি বিশ্বজিৎ অধিকারী। অবশেষে সেই দিন এসে গেছে। তাই আজ সকাল থেকে বাড়িতে আনন্দের বন্যায় ভেসেছে সবাই। নিমন্ত্রণ করা হয়েছে বহুজনকে। আত্মীয়স্বজনদের অনেকেই সকাল থেকে আসতে শুরু করেছেন। তাই খুব ব্যস্ত মীনাদেবীর বৌমা এবং বড় নাতবউ। ব্যস্ততার মাঝেই বড় নাতবৌ শর্মী অধিকারী বললেন, আজ আমাদের বাড়ির বড় মেয়ের জন্মদিন। অন্যদিকে পঞ্চাশোর্ধ ছেলের বউও আনন্দে আপ্যায়ন করছেন বাড়িতে আসা আত্মীয়স্বজনদের। আর যার জন্মদিন সেই মিনা দেবী ঘুরে ঘুরে আনন্দ উপভোগ করছেন। আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে কথা বলছেন।

বড় নাতি বিশ্বজিৎ অধিকারী জানালেন, “অনেকদিন আগেই আমার ইচ্ছাটা জেগেছিল। তাই সমাজের কাছে একটা বার্তা দিতে আজ এই আনন্দের অনুষ্ঠান।” তাঁর মূল উদ্দেশ্য, ‘বয়স্কদের শ্রদ্ধা ভালবাসা দিয়ে রাখলে রাখলে শুধু পরিবার নয়, পরিবেশ এবং সমাজ আরো সুন্দর হতে পারে।”

রাতে হল মূল অনুষ্ঠান। এজন্য বাড়ির কাছেই একটি ব্যাঙ্কোয়েট ভড়া করা হয়েছিল। আত্মীয়-স্বজনের পাশাপাশি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বসহ সমাজের বিশিষ্টদের নিমন্ত্রিত ছিলেন।

মিনা দেবীর জন্ম অখন্ড ভারতের বরিশালে, ১৯২৩ সালে। বাংলাদেশেই বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের ছ’বছরের মাথায় ছেলের বয়স যখন এক বছর তখন তাঁর স্বামী মারা যান। এরপর নানা টানাপোড়েনের মধ্যে দিয়ে চলতে চলতে একসময় দেশ ভাগের অভিশাপ নেমে আসে। তখন তাঁর ছেলে জীবন অধিকারীর বয়স ৮ বছর। সেই আট বছরের ছেলেকে নিয়ে অনিশ্চিত জীবনের উদ্দেশ্যে পশ্চিমবঙ্গে চলে আসেন। তারপর সারাদিন হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে সেই ছেলেকে বড় করেছেন। ছেলের বিয়ে দিয়েছেন। বর্তমানে ছেলে, ছেলের বউ, দুই নাতিপুতি নিয়ে তার ভরা সংসার।

ঠাকুমার জন্মদিনে বড় নাতি বিশ্বজিৎ অধিকারী বাড়ির পাশেই একটি ব্যাংক ওয়েট ভাড়া করে মূল অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। সন্ধ্যায় ঠাকুমাকে সিংহাসনে বসিয়ে কেক কাটা হল।

তবে, এই আনন্দের দিনেও তাঁর শেষ ইচ্ছার কথা আরও একবার নাতিকে জানিয়ে দিলেন। শেষযাত্রায় তিনি গাড়িতে নয়, কাঁধে করে যাবেন। আর ইলেকট্রিক চুল্লিতে নয়, কাঠের আগুনেই তাঁর সৎকার করতে হবে। তাঁকে নিয়ে যাওয়ার সময় পয়সা ছড়াতে হবে। এজন্য দশ বছর আগেই ২০০ টাকার খুচরো পয়সা ছেলের কাছে রেখে দিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.