Kali Puja| Jalpaiguri: জলপাইগুড়ির এই শ্মশানকালীর দেখভাল করেন চান্দু-নিজাম-মমতাজরা, এভাবেই চলছে বছরের পর বছর

 বাবা চান্দু মোহাম্মদের সঙ্গে ছেলে নিজাম ও বন্ধু মমতাজ মোহাম্মদ বছরের পর বছর ধরে এভাবেই  মন্দিরে পরিষেবা দিয়ে আসছেন। মন্দির ধোঁয়া মোছা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা থেকে পুজোর কাজকর্ম সবেতেই অংশ নেন তারা। সম্প্রীতির এমনই মেলবন্ধন লক্ষ্য করা গেল আড়াইশো বছরেরও বেশি পুরানো জলপাইগুড়ির এই গোশালা মোড় দেবীচৌধুরানী শ্মশানকালী মন্দিরে। ২৫০ বছরেরও বেশি পুরোনো এই মন্দিরে মাকে পুজোয় শোল মাছ, বোয়াল মাছ দিয়ে আমিষ ভোগ দেওয়ার পাশাপাশি মদ বা সুরা লাগে। এখানে বলির প্রথাও রয়েছে। এই মা শ্মশানকালী মন্দিরে প্রবেশ করলে এখনো ভক্তদের গা ছমছম করে।

জলপাইগুড়ি শহরের শেষ প্রান্তে জাতীয় সড়কের পাশে গোশালা মোড় সংলগ্ন শ্মশানের গায়ে রুকরুকা নদীর ধারে শ্মশানকালী মন্দির যা দেবী চৌধুরানী মন্দির নামে পরিচিত। স্থানীয়দের দ্বারাই মূলত পরিচালিত হয়ে আসছে এই মন্দিরের কালী পুজো। বছরে ৩৬৫ দিন এখানে নিত্য পূজিত হন মা। এলাকার মানুষ বলেন এই মন্দিরের বয়স প্রায় ২৫০ বছরেরও বেশি। বর্তমানে তেমনভাবে মন্দিরটির সংস্কার না হলেও সেরকম কিছু পরিবর্তন হয়নি। কিন্তু এখানে শিব চতুর্দশীতে উপচে পড়ে ভক্তদের ভিড়। এখানে ২৫০ বছরেরও বেশি পুরনো বটগাছের নিচে শিবলিঙ্গ রয়েছে। সেখানেই জল ঢালতে আসে দূর দূরান্তের ভক্তরা। সামনেই কালীপূজো তাই তার আগেই মন্দির পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা চলছে জোরকদমে।

শোনা যায় এই মন্দিরের চারপাশ আগে জঙ্গলে ভোরে ছিল। সেই সময় আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজন প্রদীপ জ্বালিয়ে মন্দিরে পুজো দিতেন। এখন আর জঙ্গল নেই। কালী পুজোর বেশ কয়েকদিন আগে থেকে মন্দির পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ধোয়া মোছার কাজ শুরু হয়ে গেছে। কালী পূজার রাতে উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি সহ পাশ্ববর্তী জেলা থেকেও মানুষের ঢল নামে। বহু পর্যটক এই মন্দির দর্শন করতে আসেন।

মন্দিরের পুরোহিত সুভাষ চৌধুরী বলেন, ভক্তরা যেটুকু আর্থিক সাহায্য দেন সেদিয়েই চলে মন্দির পরিচালনা। তেমনভাবে কোন অর্থ আসে না সরকারের পক্ষ থেকে। সাধারণ মানুষের অর্থ দিয়ে চলে মন্দির। এখানে বছর পর ধরে পুজো পুজো করে আসছি। কালী পূজোর রাতে রীতি অনুযায়ী এখনও ছাগ বলি দেওয়া হয়। পুজোতে মাকে আমিশ ভোগ দেওয়া হয়। মাকে মূল ভোগে খিচুড়ি ভোগের বদলে দেওয়া হয় সাদা ভাত, শোল মাছ ও বেয়াল মাছ, পাঁচ রকম সবজি, মাছের মাথা দিয়ে মুগডাল, লুচি,পায়েস, চাটনি  ইত্যাদি। প্রথা অনুযায়ী মা এর হাতে যে বাটি রয়েছে তাতে সূরা বা মদ দেওয়া হয়।

মন্দিরের সম্পাদক দেবাশীষ সরকার বলেন এই মন্দির বহু পুরনো, সংস্কারের অভাবে ধুঁকছে, যদি সরকার এই মন্দিরের জন্য একটু নজর দেন তাহলে ভালো হয়। চার লেনের কারণে এই শ্মশানকালী গোশালা দেবীচৌধুরানী মন্দিরের তেমনভাবে সংস্কার হচ্ছে না। অন্যদিকে মন্দির এর জমি গ্রাস করছে পাশের এই রুকরুকা নদী।

ভক্তদের কথায় এখানে মা খুব জাগ্রত। মায়ের কাছে মানত করলে ফলে। এক ভক্ত বললেন, তাই স্ত্রী, পুত্রকে নিয়ে সুদূর হাওড়া থেকে ছুটে এসেছি পুজো দিতে। পুজোর ডালায় ফল, মিষ্টি, নতুন শাড়ি, আলতা, সিঁদুর সহ পুজোর বিভিন্ন সামগ্রীর পাশাপাশি মা এর জন্য মদ বা  সূরাও নিয়ে আসা হয়েছে।

মন্দিরে ঘুরতে এসে এক দর্শনার্থী বলেন বহু ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে জলপাইগুড়ির দেবী চৌধুরানী মন্দিরের। এখনও মন্দিরে প্রবেশ করলে গা ছম ছম করে। দূরদূরান্তের মানুষ এখনো ছুটে আসে পুজো দিতে। এখানে বট গাছের নিচে শিবলিঙ্গ রয়েছে সেখানেই পুজো হয়। রয়েছে মন্দিরে পুরানো আমলেই সেই ঘর, আর ঘরের ভিতরে ঢুলতেই দেখা মিলবে ওম লেখা ত্রিশূল লাগানো  প্রায় ২৫০ বছরের বেশি পুরোনো মন্দির। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে বলি দিয়ে আসছেন প্রদীপ মৈত্র। তিনি বলেন, এই ঘরেই মা আসতেন বলে শুনেছি। তবে এখানে মা জাগ্রত। আগে অনেক ছাগ,পায়রা বলি হত। তবে বর্তমানে ১০- ১২ টা ছাগ বলি হয়। এই মন্দিরে কালীপুজোর গভীর রাতে ১ টার পর বলি দিয়ে আসছি। কালী পূজার রাতে এই মন্দিরে সারারাত ধরে চলে পুজো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.