হিমাচলে এ বার হড়পা বানে ভেসে মৃত্যু সাত জনের, দুর্যোগের বলি বেড়ে ৩৩, ধসে চাপা পড়ে অনেকে

ভারী বর্ষণের জেরে বিধ্বস্ত হিমাচল প্রদেশ। তার মধ্যেই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, বর্ষার তাণ্ডবে গত দু’দিনে সে রাজ্যে ৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। গতরাতে সোলান জেলায় মেঘভাঙা বৃষ্টিতে সাত জনের মৃত্যু হয়েছে। অন্য দিকে, শিমলা শহরের একটি শিবমন্দিরে ধসে এখনও পর্যন্ত ন’জনের মৃত্যু হয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ভেঙে পড়া কংক্রিটের চাঁইয়ের নীচে এখনও চাপা রয়েছেন ১৫-২০ জন পুণ্যার্থী। মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে প্রশাসন। পাশাপাশি, মান্ডি জেলার সম্বল গ্রামে হড়পা বানে ভেসে গিয়েও সোমবার সে রাজ্যে সাত জনের মৃত্যু হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে খবর, সোমবার সকালে শিমলার সামার হিলের ওই শিবমন্দিরে অন্তত ৫০ জন পুণ্যার্থী জড়ো হয়েছিলেন। ভারী বর্ষণের কারণে মন্দিরের একাংশ হঠাৎ করেই হুড়মুড়িয়ে ধসে পড়ে। কংক্রিটের নীচে চাপা পড়ে যান মন্দিরের ভিতরে থাকা পুণ্যার্থীদের অনেকে। এখনও পর্যন্ত ৯টি দেহ উদ্ধার করা গিয়েছে। তবে আরও অনেকে ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়ে রয়েছেন বলে আশঙ্কা প্রশাসনের। শুরু হয়েছে উদ্ধার কাজও।

হিমাচল প্রদেশের পরিস্থিতি নিয়ে সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিংহ সুখু টুইট করে দুঃখপ্রকাশ করেছেন। শিমলার ডেপুটি কমিশনার আদিত্য নেগি সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে জানিয়েছেন, ভূমিধসের ঘটনায় অনেক মানুষ মাটিচাপা পড়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অন্য দিকে, ফাগলি এলাকায় বেশ কয়েকটি বাড়ি মাটির নীচে চাপা ধসে গিয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

প্রবল বৃষ্টিপাতে মেঘভাঙা বৃষ্টিতে সাত জনের মৃত্যু হয়েছে। সেই প্রসঙ্গে সোলানের ডিভিশনাল কমিশনার মনমোহন শর্মা জানিয়েছেন, রবিবার রাতে মেঘভাঙা বৃষ্টির কবলে পড়ে হিমাচলের সোলান এলাকার জাডোন গ্রাম। জলের তোড়ে ভেসে যায় একাধিক বাড়ি। এই ঘটনায় মোট সাত জনের মৃত্যু হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে ছ’জনকে।

মুখ্যমন্ত্রী সুখু হিমাচলের সাধারণ জনগণকে বাড়ির ভিতরে থাকার এবং নদীর ধারে না যাওয়ার আবেদন করেছেন। সংবাদমাধ্যম ‘এনডিটিভি’র সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে তিনি জনগণকে ভূমিধসপ্রবণ এলাকাগুলি থেকে দূরে সরে যাওয়ার বার্তা দিয়েছেন। পাশাপাশি এই সঙ্কটসময়ে পর্যটকদের সে রাজ্যে প্রবেশ না করার অনুরোধও তিনি করেছেন।

কয়েক দিন ধরেই হিমাচলে ভারী বৃষ্টিপাত চলছে। গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টির পরিমাণ আরও বেড়েছে। বৃদ্ধি পেয়েছে নদীর জলস্তর। ফুঁসছে খরস্রোতা বিপাশা নদী। মুহুর্মুহু পাহাড়ি ধসে ব্যাহত হয়েছে জনজীবন। বৃষ্টি এবং ভূমিধসের কারণে সে রাজ্যে এখনও পর্যন্ত ৭৫২টি রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে এবং পড়ুয়াদের নিরাপত্তার কথা ভেবে হিমাচলের সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সোমবার থেকে বন্ধ থাকছে।

বৃষ্টিপাতের ফলে হিমাচলের মানুষ ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। এই ‘তাণ্ডব’ কবে বন্ধ হবে, এই প্রশ্নই এখন পাহাড়ি রাজ্যের জনগণের মনে। তবে মৌসম ভবনের পূর্বাভাস অনুযায়ী, হিমাচলে এখনই থামছে না বৃষ্টিপাত। হিমাচলের চাম্বা, কাংড়া, হমিরপুর, মান্ডি, বিলাসপুর, সোলান, শিমলার বিচ্ছিন্ন জায়গায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে কুলু এবং সিরমাউরে।

বন্যা এবং ভূমিধসের কারণে হিমাচল প্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ড দেশের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ রাজ্য। রবিবার প্রশাসনের তরফে ঘোষণা করা হয়েছে যে, বর্ষার বিধ্বংসী রূপে হিমাচলে সাত হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। হিমাচলে বর্ষার মরসুম শুরুর পর থেকে প্রায় ২৫৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.