স্পর্শকাতর বুথের সংখ্যা বললেও তালিকা জানানো হয়নি, কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন নিয়ে কমিশনের দিকেই তীর বিএসএফ ডিআইজির

২০১৮- এর পঞ্চায়েত নির্বাচনের অভিজ্ঞতার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় তাই ২৩-এর পঞ্চায়েত নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়নের দাবি তুলেছিল বিরোধীরা। আদালতের হস্তক্ষেপে শেষ পর্যন্ত বাহিনী পাঠিয়েছিল কেন্দ্র। কিন্তু তারপরেও ভোট গ্রহণে বাংলা হলো রক্তস্নাত। অশান্তি, হিংসা, ব্যালট বাক্স লুট, প্রাণহানি কোনোটাই এড়ানো যায়নি। সবমিলিয়ে রাজ্যে ভোটের বলি এখনো পর্যন্ত ৩৬ জন। ফলে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কিন্তু এরজন্য কেন্দ্রীয় বাহিনীর দায়িত্ব প্রাপ্ত বিএসএফ ডিআইজি কমিশনের দিকেই আঙ্গুল তুলেছেন।

শনিবার ভোটগ্রহণ চলাকালীন বিভিন্ন জেলা থেকে চরম অশান্তি, হিংসা, প্রাণহানীর খবর যখন সামনে এসেছে, তখন বিভিন্ন জায়গায় দেখা গেছে কেন্দ্রীয় বাহিনী চুপচাপ বসে আছে। প্রশ্ন উঠেছে যখন ভোট চলছিল তখন কেন্দ্রীয় বাহিনীর চুপ ছিল। সাধারণ মানুষ সরব হলেও উপর মহল এই বিষয়ে একে অপরের উপরে দোষারোপ করে গেছে।

কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের দিকে আঙ্গুল তুলেছেন বিএসএফের ডিআইজি এস এস গুলেরিয়া। তাঁর অভিযোগ, রাজ্য নির্বাচন কমিশন স্পর্শকাতর বুথের তালিকা তাদের হাতে তুলে দেয়নি। স্পর্শকাতর বুথের তালিকা চাওয়া হলেও তা এসে পৌঁছায়নি তাদের হাতে। কমিশনের তরফে যে চিঠি তাদের কাছে পৌঁছেছিল তাতে শুধুমাত্র স্পর্শকাতর বুথের সংখ্যা জানানো হয়েছিল। স্পর্শ কাতর বুথের তালিকা দেওয়া হয়নি। কার্যত কেন্দ্রীয় বাহিনীকে নজরদারি চালাতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।

বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ডিআইজির এই বক্তব্যকে তুলে ধরে দাবি করেছেন, মুখ্যমন্ত্রী নিজের পদ ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে নির্বাচন জেতার চেষ্টা করেছেন।

অন্যদিকে কমিশনের তরফে সেনা পাঠানো নিয়ে গরিমসি এবং নিষ্ক্রিয়তাকে দায়ী করা হয়েছে। প্রথমে ৩১৫ কোম্পানি বাহিনী পাঠিয়ে বাকিটা আর পাঠানো যাবে না বলে জানিয়েছিল কেন্দ্র। পরে তা পাঠালেও একেবারে শেষ মুহূর্তে গরিমস করে পাঠানো হয়েছিল বলে অভিযোগ কমিশনের। শনিবার ভোটের শেষে মাঝ রাতে ভাঙড়ে বাহিনী এসে পৌঁছানো নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

কিন্তু কমিশনের এই বক্তব্যের পাল্টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে বিবৃতি জারি করে বলা হয়, কেন্দ্রীয় বাহিনী আসতে দেরি হয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের তরফে যথাযথ সহযোগিতা না পাওয়ার কারণে। যুক্তি দিয়ে তারা জানিয়েছে, কিছু বাহিনী শনিবার সন্ধ্যাতেও পৌঁছানোর কথা। বাংলায় নোডাল অফিসার কমিশনকে বলেছিলেন, এই বাহিনীকে স্ট্রংরুমের পাহাড়ার জন্য ব্যবহার করা হোক। কিন্তু তাতে রাজি হয়নি কমিশন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বক্তব্য, সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কিছু বাহিনীকে স্ট্রং রুমের নিরাপত্তার জন্য ব্যবহার করতে রাজি হয়নি কমিশন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বলেছে, যে সমস্ত বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী ছিল সেখানে কোনো অশান্তি হয়নি, বরং কোনো বুথ দখলের ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা দেখলেই কড়া হাতে দমন করেছে তারা। কিন্তু কোন বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে আর কোন বুথে থাকবে না সেই সিদ্ধান্ত জেলাশাসক নিয়েছিলেন। বুথগুলিকে চিহ্নিত করে সেখান থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার কথা ছিল তাদের।

কংগ্রেসের অধীর চৌধুরী বলেছেন, মমতার সঙ্গে সমঝোতা করে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করেছে দিল্লি। তৃণমূলকে সুযোগ করে দিতেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এই গড়িমসি করেছে। তাঁর দাবি, বাংলার বিজেপির নেতাদের এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা উচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.