“জটিল অপারেশনের সময় প্রসূতির মুখে গান,” শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালেই এ দৃশ্য দেখে তাজ্জব গোটা নেট দুনিয়া

অপারেশন থিয়েটারে চলছে অস্ত্রোপচার সাথে গান.. “মিলন হবে কত দিনে… আমার মনের মানুষেরই সনে…”
ভাবছেন, মেডিকেল টিম এবং পেশেন্টের মানসিক চাপ মুক্তির কারণে এ আর নতুন কি? তবে কোনো নার্সিংহোম বা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নয়, নদীয়ায় শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। তবে কোনো সাউন্ড সিস্টেমে নয়, কিংবা কোনো ডাক্তার বাবুও নয়, প্রসবকালীন অস্ত্রপ্রচারের সময় খোদ প্রসূতি ডাক্তারের অনুরোধে শোনালেন নিজের গলায় গান। আবার অপারেশন যে খুব একটা স্বাভাবিক তাও নয়। কারণ বিয়ের সাড়ে তিন বছরের মধ্যে দুবার অকাল গর্ভপাত হয়েছে ইতিমধ্যেই। যা নিয়ে দুশ্চিন্তার অবসান ঘটলো আজ, শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে গাইনোকোলজিস্ট ডঃ পবিত্র ব্যাপারীর আবারো এক চমকে।

শান্তিপুর হরিপুর এলাকার সঙ্গীত শিল্পী গৌতম মন্ডল তার স্ত্রী চন্দ্রা পোদ্দার মন্ডলকে প্রচন্ড রক্তক্ষরণ হওয়ার কারণে গতকাল রাতে ভর্তি করার শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। পূর্বের চিকিৎসার কাগজপত্র দেখে, হাসপাতাল থেকে জানানো হয়, রোগীর কমপ্লিট প্লাসেন্টা প্লিডিয়া অর্থাৎ জরায়ুর ফুল প্রসব মুখে আটকে রয়েছে। এ ধরনের অপারেশনে প্রচুর পরিমাণে রক্তক্ষরণ হওয়ার সম্ভাবনার কারণে ব্লাড ব্যাঙ্কহীন শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে অপারেশন করানো যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ। তবে রোগীর স্বামী গৌতমবাবু এই হাসপাতালের চিকিৎসক ব্যাপারীর একের পর এক সাফল্যের কথা জানতেন, আর সেই কারণেই তিনি অন্যত্র কোথাও না গিয়ে এই হাসপাতালের উপরেই ভরসা রাখেন। ডক্টর ব্যাপারী হাসপাতাল সুপারিনটেন্টেন্ড ডক্টর তারক বর্মনের সাথে আলাপ আলোচনা করে, নিজের সংগ্রহের রক্তক্ষরণ কম হওয়ার ইনজেকশন দিয়ে রক্ত জোগান রাখতে বলেন পরিবারকে। আজ দুপুর একটা নাগাদ সফলভাবে অস্ত্রপ্রচার সম্ভব হয়, এবং সম্পূর্ণ সুস্থ স্বাভাবিক কন্যা সন্তান জন্ম নেয়।

নবজাতকের বাবা গৌতমবাবু ডঃ ব্যাপারীকে ভগবান আখ্যায়িত করেছেন। শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে অস্ত্র প্রচারের সময় তার স্ত্রীর গান গাওয়া ওটির বিভিন্ন স্টাফের মুখ থেকে শুনে, তিনি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। বলেন, এসব বিদেশে সম্ভব হয় জানতাম, তবে আমাদের হাসপাতালে এ ধরনের ঘটনা বিরল এবং আশ্চর্যের।

ডাক্তারবাবু অবশ্য এই সফলতার পেছনে অ্যানাস্থিসিস ডক্টর টিনামণি বিশ্বাস, গায়নি, ওটি, ফুল টিম, সিস্টার স্টাফ এবং মেটারনিক ওয়ার্ডের সমস্ত স্বাস্থ্যকর্মীদের মিলিত প্রচেষ্টা বলেই জানিয়েছেন।

তবে গান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একদিকে নিজেদের দুশ্চিন্তা অন্যদিকে প্রসূতির রক্তচাপ, স্নায়বিক দুর্বলতা কাটাতে তিনি রোগীর সাথে অস্ত্রপ্রচারের সময় কথা বলেন। গান কবিতা জানা থাকলে, শুনতে চান, কিন্তু আজকের চন্দ্রার গান তাকে মুগ্ধ করেছে। গানের লাইন অনুযায়ী তিনি বলেন, চন্দ্রার সঙ্গে তার মনের মানুষ অর্থাৎ কন্যা সন্তানের মিলন হয়েছে, তাই নবজাতকের নামকরণ করেছি “আত্মজা”।

অপারেশন সম্পর্কে তিনি বলেন, প্লাসেন্টা জরায়ুর মুখ থেকে প্রসবদ্বারের দিকে অনেকটাই এগিয়ে থাকার কারণে তা কেটে বাচ্চার কাছে ঢুকতে হয়েছিলো, তার উপর বাচ্চা ছিলো আড়াআড়ি ভাবে, গলায় পেঁচানো ছিলো কড, বৃহদান্ত জরায়ুর সাথে ঠেকে ছিলো, আর সেই কারণেই তার দু’বার অকাল গর্ভপাত হয়ে যায়। তবে এখন মা বাচ্চা দুজনেই সম্পূর্ণ সুস্থ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.