তপনের দণ্ডিকাণ্ডের সেই আদিবাসী শিউলিকে প্রার্থী করল তৃণমূল, বিরোধীদের কটাক্ষ, ‘প্রায়শ্চিত্ত’

দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটে চার আদিবাসী মহিলাকে ‘প্রায়শ্চিত্ত’ করাতে দণ্ডি কাটানোর অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। মাস দুয়েক আগে ওই ঘটনা গোটা রাজ্যেই শোরগোল ফেলেছিল। এ বার পঞ্চায়েত ভোটে সেই চার আদিবাসী মহিলার এক জনকে প্রার্থী করল শাসকদল। বিরোধীদের কটাক্ষ, শাসকদল যে ঘটনা ঘটিয়েছিল, তার ‘প্রায়শ্চিত্ত’ করতেই এই চমক। পাল্টা জবাব দিয়েছে তৃণমূলও।

গত ৭ এপ্রিল রাতে বালুরঘাটের তপনে অন্তত ২০০ জন স্থানীয় মহিলা এবং তাঁদের পরিবার তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যেই ছিলেন ছিলেন শনকইর গ্রামের বাসিন্দা মার্টিনা কিস্কু, শিউলি মারডি, ঠাকরান সোরেন এবং মালতী মুর্মু। সেই সময় অভিযোগ উঠেছিল, এই চার মহিলা আবার পুরনো দলে ফিরে আসতে চাইলে তাঁদের দণ্ডি কাটিয়ে ‘প্রায়শ্চিত্ত’ করানো হয়। বালুরঘাট কোর্ট মোড় থেকে তৃণমূল পার্টি অফিস পর্যন্ত দণ্ডি কাটিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁদের। সেই ঘটনার একটি ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসতেই শাসক তৃণমূলের বিরুদ্ধে ‘আদিবাসী বিরোধী’ স্লোগান তুলে সমালোচনায় সরব হয়েছিল বিরোধীরা। দণ্ডিকাণ্ডের সেই শিউলিকেই পঞ্চায়েতে প্রার্থী করল তৃণমূল। তপনের গোফানগর পঞ্চায়েতের চকবলরাম এলাকা থেকে দাঁড়াচ্ছেন শিউলি। তাঁর বিপক্ষে বিজেপির প্রতীকে লড়ছেন সোনামণি মুর্মু এবং আরএসপির প্রার্থী সালোমি হেমব্রম।

শিউলিদের ‘ঘর ওয়াপসি’র সময় তাঁদের দিয়ে দণ্ডি কাটানোর অভিযোগ যাঁর বিরুদ্ধে উঠেছিল, মহিলা জেলা তৃণমূলের সভানেত্রী সেই প্রদীপ্তা চক্রবর্তীকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। দায়িত্ব দেওয়া হয় আদিবাসী স্নেহলতা হেমব্রমকে। শুধু তা-ই নয়, জেলায় ‘নবজোয়ার’ কর্মসূচিতে এসে দণ্ডিকাণ্ডের ওই চার আদিবাসী মহিলার সঙ্গে দেখাও করেছিলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

তৃণমূলের প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর শিউলি বলেন, ‘‘আমার স্বামী ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে জিতে গোফানগরে তৃণমূলের প্রধান হয়েছিলেন। তৃণমূল এলাকার উন্নয়ন, রাস্তাঘাট ও মানুষের কাজ করেছে। আমি এলাকার মানুষের উন্নয়ন করতে চাই।’’

বিজেপি যদিও শিউলির প্রার্থী হওয়া নিয়ে কটাক্ষ করেছে। বিজেপি নেতা বাপি সরকার বলেন, ‘‘এটা জুতো মেরে গরু দান। আদিবাসী মহিলাদের যে ভাবে অপমান করা হয়েছিল প্রকাশ্য রাস্তায় দন্ডি কাটিয়ে, তা এই সমাজ কখনও ভুলে যাবে না এবং তাঁদের যথাযথ জবাব আগামী পঞ্চায়েত ভোটেই দিয়ে দেবে আদিবাসী সমাজ।’’

তবে শিউলি বিপুল ভোটে জিতবেন বলে আশাবাদী শাসকদল। দলের জেলা সভাপতি মৃণাল সরকার বলেন, ‘‘কোনও প্রায়শ্চিত্ত নয়। এলাকায় আদিবাসী সংগঠন যথেষ্ট শক্তিশালী এবং শিউলি মারডি অনেক পুরনো নেত্রী। সেই জন্যই তাঁকে প্রার্থী করা হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস অত্যন্ত শক্তিশালী এই এলাকায়। অনেক ভোটে জিতবেন শিউলি।’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.