হাই কোর্টের রায় বহাল রেখে বারাসত থেকে বনগাঁ পর্যন্ত যশোর রোডের উপর ৩৫৬টি শিরীষ গাছ কাটার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে মিশ্র প্রতিক্রিয়া এলাকায়। কেউ সুপ্রিম কোর্টের রায়কে স্বাগত জানিয়েও একটি গাছ পিছু পাঁচটি গাছ লাগানোর নির্দেশেরও সঠিক পালনের কথা বলছেন। কেউ বলছেন, সুপ্রিম রায়ে যশোর রোডে চলাচল আরও মসৃণ হবে।
উত্তর ২৪ পরগনার পেট্রাপোল থেকে বারাসাত পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশে থাকা শিরীষ গাছের জন্য ১১২ নম্বর জাতীয় সড়কের সম্প্রসারণ থমকে গিয়েছিল। পূর্ণবয়স্ক গাছগুলি কাটার বিরোধিতা করে পথে নেমেছিল পরিবেশপ্রেমী সংগঠন। ২০১৮ সালে ৫টি রেল ওভারব্রিজের জন্য হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ৩৫৬টি গাছ কাটার নির্দেশ দেয়। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন পরিবেশপ্রেমীরা। গত ৮ ফেব্রুয়ারি হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের রায়কেই বহাল রেখে ৩৫৬টি গাছ কাটার নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। এর মধ্যে ঝড়ে কয়েকটি গাছ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। বর্তমানে ৩০৬টি গাছ কাটতে হবে। আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, একটি গাছ কাটার পরিবর্তে পাঁচটি করে নতুন গাছ লাগাতে হবে। একমাত্র এই শর্তেই কাটা যাবে যশোর রোডের ৩৫৬টি গাছ।
গাছ কাটার নির্দেশের খবরে খুশি গাড়িচালক থেকে স্থানীয় দোকানদারদের একাংশ। গাছের কারণেই ব্যস্ততম যশোর রোডে যানজটের সমস্যা বলে মনে করেন তাঁরা। যদিও যানজটের কারণ গাছ নয়, এমনটাই মনে করছেন পরিবেশবিদরা। তাঁদের চিন্তা জীববৈচিত্র এবং বাস্তুতন্ত্র নিয়ে। এই প্রসঙ্গেই জোশীমঠের কথাও মনে করিয়ে দিচ্ছেন তাঁরা। মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর কর্মী দেবাশিস রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘রাস্তা যখন সম্প্রসারিত হবে তখন স্বাভাবিক ভাবেই আশপাশে বাড়ি, ঘর ভাঙা পড়বে। সে জন্য সরকার ক্ষতিপূরণও দেবে। কিন্তু যে গাছ কাটা পড়বে, সেই গাছে যে পাখি, কাঠবিড়ালি, কীটপতঙ্গের বাস, তারা কোথায় যাবে? একটা সময় চাকদহ রোড সম্প্রসারণের সময়ও বনগাঁয় প্রচুর টিয়াপাখি উড়ে বেড়াত। এখন আর দেখা যায় না। এ ভাবে বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি হতে থাকলে তার প্রভাব সুদূরপ্রসারী হবে। জোশীমঠের কথা যেন আমরা কেউ ভুলে না যাই। আমরা যেমন সুপ্রিম কোর্টের রায়কে মান্যতা দিচ্ছি, তেমন সরকারও কোর্টের রায়কে মান্যতা দিয়ে গাছ লাগাবে এবং গাছগুলিকে বেড়ে ওঠার সুযোগ দেবে।’’
বনগাঁ পুরসভার তৃণমূল চেয়ারম্যান গোপাল শেঠ বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আমরা খুশি। বনগাঁ থেকে বারাসত পর্যন্ত যানজট অনেকটাই কমবে। আমরা চাই, একটি গাছ যেমন কাটা হবে, তেমনই পাঁচটি গাছও লাগাতে হবে। আমরা সব পক্ষকে সহযোগিতার আবেদন করছি। আগামী দিনে সীমান্তের স্থলবন্দরে যাতায়াত আরও সুগম করতে এ ছাড়া পথ নেই।’’