এনামুলের ব্যবসার কয়েকশো কোটি ধাপে ধাপে পাচার করা হয়েছে আরবের বিভিন্ন দেশে, দাবি সিআইডি-র

গরু পাচারের মামলায় অন্যতম মূল অভিযুক্ত ব্যবসায়ী এনামুল হকের ভাগ্নেদের বিভিন্ন অফিসে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে তল্লাশি চালিয়েছে সিআইডি। সেই তল্লাশির ভিত্তিতে গোয়েন্দাদের ঘোরতর সন্দেহ, এনামুলের ব্যবসার কয়েকশো কোটি টাকা ধাপে ধাপে দুবাই-সহ আরবের বিভিন্ন দেশে পাচার করা হয়েছে। ওই অফিসে হানা দিয়ে যে-সব নথিপত্র আটক করা হয়েছে, তাতে এনামুলদের সংস্থার সঙ্গে বিদেশি যোগাযোগের প্রমাণ আছে। শুক্রবার সংস্থার তিন কর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পাওয়া তথ্যও ওই নথির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।

সিআইডি সূত্রের দাবি, গরু পাচার মামলায় এ বার এনামুলের তিন ভাগ্নেকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চান তদন্তকারীরা। আজ, শনিবার ভবানী ভবনে হাজিরা দেওয়ার জন্য তাঁদের মুর্শিদাবাদের লালগোলার বাড়িতে নোটিসও পাঠিয়েছে সিআইডি। তবে ওই তিন জন এ দেশে নেই বলে একটি সূত্রে জেনেছে সিআইডি। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, বাংলাদেশ ও আরব দুনিয়ায় এনামুল এবং তাঁর ভাগ্নেদের সংস্থার ব্যবসা আছে। সেই তথ্য এবং বাজেয়াপ্ত করা নথি ঘেঁটেই টাকা পাচার নিয়ে সন্দেহ জোরালো হয়েছে।

গরু পাচার মামলায় সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয়ে এনামুল এখন জেলবন্দি। সিবিআইয়ের পাশাপাশি সম্প্রতি গরু পাচার নিয়ে তদন্তে নামে সিআইডি-ও। তারা গ্রেফতারও করে কয়েক জনকে। ধৃতদের জেরা করে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই এনামুলের তিন ভাগ্নের বিভিন্ন অফিসে হানা দেন গোয়েন্দারা। সেই তালিকায় বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটের দু’টি অফিসও আছে। বুধবার রাতে এবং বৃহস্পতিবার সারা দিন ওই সব অফিসে তল্লাশি চালানো হয়।

গত সপ্তাহে মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জের উমরপুর মোড় সংলগ্ন এলাকায় এনামুলের তিন ভাগ্নের একটি মার্বেলের দোকানে হানা দিয়ে সেটি সিল করে দেয় সিআইডি। গোয়েন্দারা জানান, ২০১৯ সালে এনামুল গ্রেফতার হওয়ার আগে সেটি ছিল হোটেল। মামা ধরা পড়তেই হোটেল বন্ধ করে মার্বেলের দোকান খোলেন তিন ভাগ্নে। জঙ্গিপুরে তাঁদের চালকলও সিল করে দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে গরু পাচারে ব্যবহৃত ট্রেলার বাজেয়াপ্ত করেছিল সিআইডি। এই সবের ভিত্তিতেই সিআইডি-র দাবি, এনামুলের গরুর কারবার দেখভাল করতেন তাঁর ভাগ্নেরাই।

সিআইডি জানাচ্ছে, ২০১৯ সালে এনামুল গ্রেফতার হওয়ার পরে তিন ভাগ্নে সংস্থার পুরনো নাম বদলে জেএইচএম গ্রুপ অব কোম্পানিজ় নামে নতুন সংস্থা খোলেন। তিন ভাই জাহাঙ্গির, হুমায়ুন এবং মেহেদির নামের আদ্যক্ষর দিয়েই ওই সংস্থার নাম রাখা হয়েছিল বলে গোয়েন্দাদের দাবি। এ দিন ওই সংস্থার তিন কর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন গোয়েন্দারা। এ ছাড়াও রাজারহাটের দশদ্রোণ এলাকায় এনামুলের এক আত্মীয়ের মার্বেলের দোকানে হানা দেয় সিআইডি। তল্লাশির পরে দোকানটি সিল করে দেওয়া হয়।

সিআইডি সূত্রের খবর, মূলত কোন কোন দেশে এনামুল ও তিন ভাইয়ের সংস্থার ব্যবসা আছে, এ দিন ভবানী ভবনে ওই সংস্থার তিন কর্মীর কাছে তা জানতে চান গোয়েন্দারা। বাংলাদেশ ও আরব দুনিয়ার সঙ্গে সংস্থার ব্যবসায়িক যোগের প্রমাণ মিলেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.