তিনি যেন গরু হাটের গৌরী সেন। পাচারের জন্য গরু কিনে কেউ আইনের চোখে ধুলো দিতে চাইলে, তিনি ব্যবস্থা করে দিতেন পুরনো তারিখের (ব্যাক ডেটেড) চালানের। হাটের পরিভাষায় যাকে বলা হয় ‘ছাড়’। সূত্রের খবর, এমনই অভিযোগে বীরভূমের মুরারই ২ ব্লকের তৃণমূল সভাপতি তথা হিয়াতনগর মল্লিক গরু হাটের অন্যতম কর্তা আফতাবউদ্দিন (মন্টু) মল্লিকের নাম বিশেষ আদালতে জমা দেওয়া চার্জশিটে রেখেছে সিবিআই। কারা এই ভুয়ো ‘ছাড়’ পেতেন, তার হদিসও দিয়েছে সিবিআই। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে বলা হয়েছে, এনামুল হক বা ইলামবাজারের সবচেয়ে বড় গরু ব্যবসায়ী আব্দুল লতিফের সঙ্গে এই ব্যাপারে যোগাযোগ ছিল মন্টুর।
যদিও মন্টু দাবি করেছেন, তিনি এঁদের কাউকেই চেনেন না। কে বা কারা এই ধরনের ছাড় দিয়েছে, তা-ও জানা নেই তাঁর।
গরু পাচার মামলায় সুখবাজার পশুহাট এবং মুরারই ২ ব্লকের হিয়াতনগরের মল্লিক পশুহাট অনেক দিন ধরেই সিবিআইয়ের নজরে রয়েছে। সুখবাজার কলেবরে বড় হলেও পাচারের ক্ষেত্রে হিয়াতনগরের হাটের বড় ভূমিকা রয়েছে বলেই তদন্তকারীদের দাবি। সিবিআই সূত্রে জানা যাচ্ছে, ইলামবাজার হাটের সবচেয়ে বড় গরু কারবারি আব্দুল লতিফের (চার্জশিটে নাম থাকা এই ব্যক্তি এখন পলাতক) সঙ্গে ‘সম্পর্ক’ ছিল আফতাবউদ্দিন ওরফে মন্টুর। সিবিআইয়ের নজরে এখন মল্লিক পশুহাটের ভুয়ো চালান বা ছাড়।
ওই হাটের গরু কারবারিদের একাংশ জানান, গরু কিনে হাটে আনলেই মিলত ‘ছাড়’-এর কাগজ।
চার্জশিটে সিবিআইয়ের দাবি, এনামুল যে গরু নিলামে কিনতেন, তা যে পাচার করা হয়নি, সেটা বোঝাতে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার ছিল ওই ‘ছাড়’। নিলামে কেনা গরু স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয়েছে— এই মর্মে পুরনো তারিখে ‘ছাড়’ দেওয়া হত মল্লিক পশুহাট থেকে। মন্টুর লোকজনই এর সঙ্গে যুক্ত, অভিযোগ চার্জশিটে।
মল্লিক পশুহাটের এমন ‘ছাড়’-ই সিবিআইয়ের নজরে।
নিজস্ব চিত্র।
মন্টু অবশ্য বলেন, ‘‘বাইশ বছরের পুরনো এই গরুহাট। বৈধ অনুমতি নিয়ে হাট চলে। কে বা কারা হাট থেকে ছাড় নিয়েছে, তা আমার জানা নেই।’’ তাঁর দাবি, ‘‘আমি লতিফ ও এনামুলকে চিনি না। সিবিআই দু’বার আমাকে ডেকে পাঠিয়েছিল। সমস্ত রসিদ বাজেয়াপ্ত করেছে। এই হাটে গরু কেনাবেচা হয়। বহু ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম হয়। এর থেকে বেশি কিছু বলতে পারব না।’’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গরু কারবারিদের একাংশের দাবি, হিয়াতনগর পশুহাট থেকে মুর্শিদাবাদ হয়ে বাংলাদেশ সীমান্ত মেরেকেটে ৫০ কিলোমিটার। সীমান্ত ‘খোলা’ আছে, সে খবর মিলতেই এই হাট থেকেই গরু বোঝাই ট্রাক ছুটত পাচারের উদ্দেশ্যে। সেই সব গরুর গায়ে ‘এএল’ স্ট্যাম্প মারা থাকত। এনামুল ও লতিফ বোঝানোর জন্যই এই সঙ্কেত বলে গরু কারবারিদের একাংশের দাবি।
আফতাবউদ্দিন তথা মন্টুর দাবি, ‘‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জন্যই এই সব সাজানো মিথ্যা ছড়ানো হচ্ছে। আগামী দিনে তা প্রমাণিত হবে।’’