বিচ্ছিন্নতাবাদী কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশন (কেএলও) জঙ্গিদের মূলস্রোতে ফেরানোর প্রয়াসে সাফল্যের মুখ দেখল রাজ্য সরকার। বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজ্য পুলিশের ডিজি মনোজ মালবীয়র কাছে কেএলও-র শীর্ষ নেতা কৈলাস কোচ আত্মসমর্পণ করলেন। সাংবাদিক বৈঠকে ডিজির পাশে বসে জানালেন, হিংসার মাধ্যমে কোনও সমস্যার সমাধান হয় না। তাঁর সঙ্গে থাকা আগ্নেয়াস্ত্রটিও পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন তিনি।
রাজ্য পুলিশের তরফে জানা গিয়েছে, কেএলও নেতা জীবন সিংহের পরেই দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতা হলেন কৈলাস। প্রসঙ্গত কেএলও শীর্ষনেতা জীবন সিংহ দীর্ঘ দিন ধরে মায়নমারের জঙ্গলে আত্মগোপন করে রয়েছেন। এক সময় কোচবিহার এবং অসমের একাংশ ভেঙে আলাদা কামতাপুর বা গ্রেটার কোচবিহার রাজ্য গড়ার দাবিতে জঙ্গি আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন জীবন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে টম অধিকারীর মতো তাঁর বহু ঘনিষ্ঠই অসম এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়েন জীবন। মায়নমারের জঙ্গল থেকেই ভিডিয়ো-বার্তায় আলাদা রাজ্যের দাবি জানাতে থাকেন তিনি।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে জীবনকে আলোচনায় বসার জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়। জীবনের ‘ধর্মপুত্র’ বলে পরিচিত দিবাকর সিংহই জীবনের হয়ে আলোচনা চালাবেন বলে মনে করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার এই আলোচনা প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মাকে দায়িত্ব দিয়েছে। ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে যাওয়া জীবন নিজের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে, শান্তি আলোচনায় সাড়া দিলেও এখনও গ্রেটার কোচবিহার, নিদেনপক্ষে আলাদা উত্তরবঙ্গের দাবি জানাচ্ছেন। কৈলাসের আত্মসমর্পণের ফলে জীবনের উপর চাপ আরও বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে।
কৈলাস আজ সংবাদমাধ্যমের সামনে বলেন, “রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মূলস্রোতে ফিরে আসার যে আহ্বান জানিয়েছিলেন, তাতে সাড়া দিয়েই হিংসার পথ ছেড়ে দিলাম।” তাঁর যে সঙ্গীরা এখনও জঙ্গলে লড়াই চালাচ্ছেন, তাঁদেরও সমাজের মূলস্রোতে ফিরে আসার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। তাঁর ঘনিষ্ঠরাও তাঁর দেখানো পথে শীঘ্রই আত্মসমর্পণ করবে বলেও জানিয়েছেন কৈলাস। রাজ্য পুলিশের ডিজিও কৈলাসের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে অন্য কেএলও নেতারাও আত্মসমর্পণ করবেন, এই আশাপ্রকাশ করেছেন।