অনুব্রত মণ্ডলকে যখন তাঁর বোলপুরের বাড়ি থেকে আটক করে আসানসোলে নিয়ে যাচ্ছিল সিবিআই, তখন ধেয়ে এসেছিল ‘গরু চোর’ স্লোগান। একই ঘটনার প্রায় পুনরাবৃত্তি ঘটল কলকাতা হাই কোর্টে। বাবার মতো মেয়েকেও শুনতে হল স্লোগান। বৃহস্পতিবার অনুব্রতের মেয়েকে তলব করা হয়েছিল হাই কোর্টে। অনুব্রত-কন্যা সুকন্যা মণ্ডল যখন আদালত চত্বরে, তখন তাঁর দিকে ধেয়ে এল স্লোগান, ‘গরু চোরের মেয়ে’। মাস্ক-ঢাকা মুখ অবশ্য খোলেননি সুকন্যা। সোজা হেঁটে ঢুকে যান আদালতের অন্দরে।
বৃহস্পতিবার সকালে বোলপুর থেকে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন সুকন্যা। কলকাতায় পৌঁছে চিনার পার্কের বাড়িতে যান। সেখান থেকেই চলে আসেন হাই কোর্টে। গাড়ি থেকে নামতেই সাংবাদিকদের প্রশ্নবাণ— তিনি টেট পাশ করেছেন কি না? তাঁর কিছু বলার আছে কি না? তিনি স্কুলে যেতেন কি না… ইত্যাদি। পুলিশ যদিও সাংবাদিকদের ভিড় এড়িয়ে এগিয়ে নিয়ে যায় সুকন্যাকে।
আদালত চত্বরে যখন এ সব চলছে, এক মহিলা হঠাৎ চিৎকার করে ওঠেন, ‘‘গরু চোরের মেয়ে’’। পরে জানা যায়, তাঁ নাম নাম আরতি মিত্র। অন্য একটি মামলায় হাই কোর্টে এসেছিলেন। কেন অনুব্রত-কন্যাকে এ কথা বলছেন, জোর গলায় তার যুক্তিও দেন। তিনি বলেন, ‘‘ওঁর বাপের কুকীর্তির কথা জানেন না? এক জন এইট পাশ করা লোক। মাছের ব্যবসায়ী ছিলেন। আজ কোটি কোটি টাকার মালিক। আর আমরা গরিব মানুষ না খেয়ে মরছি।’’
আরতি যদিও জানিয়েছেন, তাঁর পরিবারের কেউ টেট দেননি। তাঁর কথায়, ‘‘ন্যায়বিচার চাই। কোর্ট রয়েছে, বিচারপতিরা রয়েছেন বলে আমরা বেঁচে আছি। সাধারণের টাকা নয়ছয় হচ্ছে।’’ এর পরেই বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রশংসা করে আরতি বলেন, ‘‘উনি ভগবান।’’
এর আগে অনুব্রতকেও শুনতে হয়েছিল ‘গরু চোর’। এক বার কলকাতায়, এক বার নিজের বাড়ি থেকে বেরোনোর সময়। গত ৮ অগস্ট সিবিআইয়ের তলবে সাড়া না দিয়ে অনুব্রত গিয়েছিলেন এসএসকেএম হাসপাতালে। সেখানে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে বোলপুর ফিরে যান। হাসপাতাল থেকে বেরোনোর পর তাঁকে লক্ষ্য করে এক ব্যক্তি বলে উঠেছিলেন, ‘‘গরু চোর।’’ গত বৃহস্পতিবার বোলপুরের বাড়ি থেকে সিবিআই যখন অনুব্রতকে আটক করে নিয়ে আসছিল, তখনও তাঁকে লক্ষ্য করে ‘গরু চোর’ ধ্বনি ওঠে।
বুধবার বিকেলে কলকাতা হাই কোর্টে অভিযোগ জমা পড়ে, টেট না দিয়েই প্রাথমিক স্কুলের চাকরি করছেন সুকন্যা। স্কুলে না গিয়ে বেতনও পান। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে সুকন্যাকে তলব করে আদালত।