“আমার শরীরে ব্রিটিশের লাঠির প্রহার ব্রিটিশ সরকারের ধ্বংসের কারণ হয়ে উঠবে..”
হিন্দু জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব, হিন্দু মহাসভার বিশিষ্ঠ নেতা, ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম নায়ক লালা লাজপত রায়। যাঁর মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে হাজার হাজার যুবক ব্রিটিশ সরকারের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল…
ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব তিনি। “পাঞ্জাব কেশরী” নামে তিনি বিখ্যাত। আজীবন দেশের জন্য নিবেদিত প্রাণ ছিলেন। পেশায় এডভোকেট ছিলেন। স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী প্রতিষ্ঠিত “আর্য সমাজ” এর কাজ পাঞ্জাবে জনপ্রিয় করে তোলেন। জাতীয় কংগ্রেসের অন্যতম নেতা ছিলেন। ১৯২০ সালে তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন। পরবর্তী কালে তিনি কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে গিয়ে হিন্দু মহাসভায় যোগ দেন। হিন্দু মহাসভার সভাপতিত্তের পদ অলংকৃত করেন। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে হিন্দুদের সংগঠিত করে তোলার কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। জাতিভেদ প্রথার মত কুসংস্কারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে হিন্দু সমাজের সংস্কার করেন। তিনি পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক এবং লক্ষ্মী বীমা কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৮ সালে ব্রিটিশ সরকারের সাইমন কমিশনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ প্রদর্শন করতে গিয়ে ব্রিটিশ পুলিশ তাঁর ওপর নির্মম ভাবে লাঠিচার্জ করে। ১৯২৮ সালের ১৭ নভেম্বর পুলিশের লাঠির নির্মম প্রহারে তিনি শহীদ হন। মৃত্যুর পূর্বে তাঁর মুখ থেকে বলে যাওয়া কথা “আমার শরীরে ব্রিটিশের লাঠির প্রহার ব্রিটিশ সরকারের ধ্বংসের কারণ হয়ে উঠবে..” তাঁর মৃত্যুর প্রতিবাদে গর্জে ওঠে দেশ। বিশেষ করে দেশের যুব সমাজ তাঁর মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে ব্রিটিশ সরকারের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। চন্দ্রশেখর আজাদ, ভগৎ সিং, রাজগুরু, সুখদেব এঁদের নেতৃত্বে শত শত যুবক লালা লাজপত রায়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়ার সংকল্প করেন। ১৯২৮ সনের ১৭ ডিসেম্বর তারিখে এই স্বাধীনতা সংগ্রামীরা লালা’র মৃত্যুর প্রতিশোধ স্বরুপ ব্রিটিশ পুলিশ অফিসার সংডর্সকে গুলি করে হত্যা করে। বিশাল পুলিশ বাহিনী তাদের ঘিরে ফেলে, প্রচুর পুলিশ বিপ্লবীদের গুলিতে জখম হয়, অনেক পুলিশ মারা যায়। পুলিশের গুলি চন্দ্রশেখর আজাদের শরীরকে ক্ষতবিক্ষত করে দেয়।সাংডর্সকে হত্যা করার জন্য রাজগুরু, সুখদেব ও ভগত সিংকে ব্রিটিশ সরকারের কারাগার থেকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। এই ভাবে ভারতীয় রাজনীতিতে এক নতুন স্পন্দন সৃষ্টি হয়।
আজ সেই মহাত্মা লালা লাজপত রায়ের জন্মদিবসের তাঁর চরণে সকলে বিনম্র শ্রদ্ধা অর্পণ করি।
2022-01-28