জগৎসংসারের ছিছিক্কার অগ্রাহ্য করে মেয়েদের জন্য সস্তায় স্যানিটারি ন্যাপকিন বানানোর যন্ত্র তৈরি করেছিলেন অরুণাচলম মুরুগনন্থম। সেই ‘প্যাডম্যান’-এর ভারতেই এবার পাট দিয়ে তৈরি স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরি করে সাড়া ফেলল কলকাতার ‘ইন্ডিয়ান জুট ইন্ডাস্ট্রিজ রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশনের (আইজেআইআরএ)। বাজার চলতি স্যানিটারি ন্যাপকিনের মতো কোনও রাসায়নিক পদার্থের ছোঁয়া এতে থাকবে না বলে জানিয়েছেন এখানকার বিজ্ঞানীরা। কম দামে স্বাস্থ্যকর এই স্যানিটারি ন্যাপকিন গ্রামের মহিলাদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছে এই সংস্থা৷ খুব শীঘ্রই এই স্যানিটারি ন্যাপকিন বাজারে আসতে চলেছে৷
বাজারে চলতি স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরি হয় মূলত উডেন পাল্প (কাঠজাত সেলুলোজ) দিয়ে৷ এগুলো বিদেশ থেকেই আমদানি হয়ে থাকে৷ তবে পাটকাঠির গুঁড়ো ও পাটের আঁশের মিশ্রণে যে নতুন ধরনের স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরি হচ্ছে তাতে ন্যাপকিন বানাতে এবার বিদেশি নির্ভরতা কমতে চলেছে বলেই মত ওয়াকিবহাল মহলের৷ শুধু তাই নয়, ‘ডিসপোজেবল ন্যাপকিন’ বাড়াবাড়ি রকমের দূষণ ছড়ায়। রাস্তাঘাটে ফেলে দেওয়া সেই রক্তমাখা প্যাড নিয়ে কুকুর-বিড়ালের ছেঁড়াছেঁড়ি, নর্দমা-নদীনালায় ব্যবহৃত প্যাডের স্তূপ জমে যাওয়ার মতো ঘটনা আকছার ঘটে। প্লাস্টিক এবং বিভিন্ন রাসায়নিক দিয়ে তৈরি সেই ন্যাপকিন ৫০০-৮০০ বছরেও মাটির সঙ্গে মেশে না। দূষণের নিরিখে ক্রমশ তালিকার উপরের দিকে উঠতে থাকা ভারতের ক্ষেত্রে যা মারাত্মক।
ইন্ডিয়ান জুট ইন্ডাস্ট্রিজ রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে খবর, এই প্রকল্পকে সফল করতে গ্রামে গ্রামে ট্রেনিং সেন্টার খোলা হবে৷ সেখানে স্থানীয় মহিলাদেরই নিয়োগ করা হবে৷ এতে গ্রাম্য মহিলাদের অর্থ উপার্জনের রাস্তা খুলবে৷ এই ন্যাপকিন ব্যবহারে মেয়েদের জননতন্ত্রের ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যাবে বলে গবেষকরা মনে করছে৷ তাঁরা বলছেন, মেয়েদের স্বাস্থ্যবিধির ক্ষেত্রেও দারুণভাবে কাজ করবে এই পাটের ন্যাপকিন৷ শুধু তাই নয়, মৃতপ্রায় পাট শিল্প এই প্রোডাক্টের ফলে আবার প্রাণ পাবে৷
ইন্ডিয়ান জুট ইন্ডাস্ট্রিজ রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশনের ডেপুটি ডিরেক্টর ডঃ শ্যামল চক্রবর্তী বলেন, “অনেক স্বনির্ভর গোষ্ঠী আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন৷ কয়েকজনের সঙ্গে মৌ সাক্ষর হয়েছে৷ আশা করছি ৫-৬ মাসের মধ্যে পাটজাত ন্যাপকিন বাজারে আসবে৷”
এই ন্যাপকিনের উপকারিতার পাশাপাশি কম দাম শুনে আগ্রহী অনেকেই। ডঃ শ্যামল চক্রবর্তী বলেন, “পাট থেকে যে শুধু বস্তা নয় অনেক কিছুই তৈরি করা যায়, এ তারই উদাহরণ। সরকারি শংসাপত্রও পেয়েছি। কয়েকমাস পর থেকেই সব মহিলারাই পাটের তৈরি ন্যাপকিনের উপর নির্ভর করতে পারবেন।”