জামিন নাকচ হল বর্ধমানের পুরপ্রশাসক প্রণব চট্টোপাধ্যায়ের। জামিন নাকচ করে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিলেন বিচারক। এদিকে প্রণবের বিরুদ্ধে, এক-দুই নয়, ৯০ কোটি টাকার কেলেঙ্কারির অভিযোগ করেছে সিবিআই। আগামী ২৭ ডিসেম্বর আবার প্রণব চট্টোপাধ্যায়কে আদালতে পেশ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
চারদিনের সিবিআই হেফাজতে থাকার পর বর্ধমানের পুরসভার পুরপ্রশাসক প্রণব চট্টোপাধ্যায়কে সোমবার তোলা হয় আসানসোল সিজেএম অর্থাৎ অতিরিক্ত জেলা দায়রা আদালতে। এদিন সিজেএম তরুণ কুমার মণ্ডলের এজলাসে প্রায় ২ ঘণ্টা ধরে দুই পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে সওয়াল-জবাব হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সিজেএম প্রণবের জামিন নাকচ করে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।
প্রণববাবুর হয়ে এদিন আসানসোল আদালতের আইনজীবী শেখর কুণ্ডু ছাড়াও বর্ধমান আদালতের একাধিক আইনজীবী এজলাসে হাজির ছিলেন। যার মধ্যে ছিলেন বর্ধমান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সম্পাদকও। তাঁরা বর্ধমানের পুরপ্রশাসকের জামিনের জন্য জোর সওয়াল করেন। বর্ধমান থেকে আসা প্রণববাবুর আইনজীবী ভোলানাথ মণ্ডল বলেন, চার্জশিট ও এফআইআরে নাম না থাকা সত্বেও তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি দীর্ঘদিনের নির্বাচিত জন প্রতিনিধি। বর্তমানে তিনি বর্ধমানের একটা শহরের পুরপ্রশাসক। বর্ধমান শহরের স্থায়ী বাসিন্দা। প্রণববাবুর আইনজীবীরা বলেন, তিনি বর্ধমান সানমার্গ নামে ওই সংস্থার শুধু মাত্র লিগ্যাল অ্যাডভাইজার ছিলেন।আর বর্ধমান শহরে নিজের স্ত্রীর নামে থাকা একটি বাড়ি বর্ধমান সনমার্গ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনকে ভাড়া দিয়েছিলেন মাত্র। এই মামলায় যে এফআইআর ও প্রথম চার্জশিট হয়েছে, তাতে তাঁর নামও নেই। তাঁরা যুক্তি দেন, প্রণববাবুর বয়স ৭১ বছর। তাঁর শারীরিক সমস্যাও রয়েছে। কোভিড পরিস্থিতিতে এখন প্রয়োজন ছাড়া এই বয়সের মানুষদের জেলে না রাখা নিয়েও সুপ্রিম কোর্টের কিছু পর্যবেক্ষণ মনে করান আইনজীবীরা। এই কারণ দেখিয়ে প্রণববাবুর শর্তসাপেক্ষে জামিন চাওয়া হয়।
এদিকে এজলাসে সিবিআইয়ের আইনজীবী হিসাবে উপস্থিত থাকা এস শশাঙ্ক এই জামিনের বিরোধিতা করে প্রণব চট্টোপাধ্যায়ের। তিনি তুলে ধরেন প্রভাবশালী তত্ত্ব। তিনি বলেন, “অভিযুক্তর মাধ্যমে ৩ কোটি ৭৬ লক্ষ টাকার লেনদেন হলেও, এই কেলেঙ্কারি প্রায় ৯০ কোটি টাকার। নামেই তিনি ওই সংস্থার লিগ্যাল অ্যাডভাইজার ছিলেন। আসবে সবকিছুতেই তিনি ছিলেন।” সিবিআইয়ের আইনজীবী তাঁকে নতুন করে হেফাজতে না চাইলেও, প্রণববাবুর জামিনের তীব্র বিরোধিতা করেন।
প্রসঙ্গত, প্রণব চট্টোপাধ্যায়কে কলকাতা থেকে চারদিন আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে জেরার জন্য ডেকে পাঠিয়ে গ্রেফতার করেছিল সিবিআই। বর্ধমান শহরের তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা, আইনজীবী তথা বর্ধমান পুরসভার পুরপ্রশাসক প্রণব চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি ও বাণিজ্যিক ভবনে সিবিআই হানা দিয়েছিল গত শুক্রবার। চলতি বছরের আগস্ট মাসেই বর্ধমান পুরসভার পুরপ্রশাসকের পদে বসেছেন তিনি। এই চিটফান্ড মামলায় কোটি কোটি টাকার কেলেঙ্কারিতে ২০১৮ সালে সিবিআই তদন্ত শুরু করে। অতি সম্প্রতি তারা এই মামলায় একটি চার্জশিট দেয়। সেই চার্জশিটে নাম ছিল না প্রণব বাবুর।
সিবিআইয়ের আইনজীবি ইতিমধ্যেই আদালতে বলেছেন, এই মামলায় সাপ্লিমেন্টারী বা অতিরিক্ত চার্জশিট দেওয়া হবে। তাতে প্রণব চট্টোপাধ্যায়ের নাম থাকবে। এই ঘটনাকে রাজনৈতিক চক্রান্তের শিকার প্রণব চট্টোপাধ্যায় বলে দাবি করেছেন প্রণববাবুর আইনজীবীরা।