খয়রাশোল: কয়লা খনির জন্য এলাকার প্রায় সাড়ে সাত-শো বিঘারও বেশী ঘন বনভূমি চিহ্নিত হয়েছে। শুরু হয়েছে বনভূমি সাফাইয়ের কাজও! এই বনভূমির উপর নির্ভরশীল অসংখ্য আদিবাসী ।তাই জমি জঙ্গলে অধিকার নিয়ে এলাকার আদিবাসী সমাজ গড়ে তুলেছে “বির বানচাও কমিটি”। অর্থাৎ প্রকৃতি মাতা রক্ষা ডাক দিয়ে বৃহস্পতিবার বৃহত্তর আন্দোলনে নামল বীরভূম – ঝাড়খণ্ড সীমান্তবর্তী দশটি গ্রামের আদিবাসীরা।
তাই জঙ্গল কেটে কয়লা খনি করায় আপত্তি জানিয়ে আজ খয়রাশোলের বিডিও-র দপ্তরে বিক্ষোভ সামিল হলেন এলাকার আদিবাসীরা।”
কযেকবছর আগেই খোলামুখ কয়লা খনি করার ছাড় পত্র মিলেছে খয়রাশোলের
গঙ্গারামপুরচক মৌজায়। বীরভূম – ঝাড়খন্ডের সীমান্ত ঘেষা ঐ এলাকায় খনি তৈরীর জন্য জঙ্গল কাটা শুরু হযে যায গত কয়েকদিন ধরে। সেই খবর কানে পৌছতেই জল জঙ্গলে অধিকার হারানোর আশঙ্কায় দিশেহারা খয়রাশোলের গঙ্গারামপুরচক, বাস্তবপুর, সগরভাঙা, গাংপুর, বেলডাঙা, ভাদুলিয়া, দেবগঞ্জ প্রভৃতি আদিবাসী প্রধান গ্রামের শযে শযে বাসিন্দারা।
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকার ২০১৫ সালে নয়া কয়লা ব্লক বণ্টন আইন প্রনযন করে এবং দেশের বহু কয়লা ব্লক বন্টন করে। সেই সময় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুত
উন্নয়ন নিগম (পি ডি সি এল) রাজ্যে পাঁচটি কোল ব্লক থেকে কয়লা উত্তোলনের অনুমতি পায়,সেই পাঁচ টির মধ্যে দুটি ব্লক রয়েছে খয়রাশোলের বড়জোড় ও গঙ্গারামচক মৌজার। কোল ব্লক থেকে কযলা তোলার অনুমতি পেলেও পরিবেশ ও বন মন্ত্রকের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অনুমোদন না মেলায় ২০১৭ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত সেখানে কয়লা উত্তোলনের কোন উদ্যোগ নিতে পারেনি- পি ডি সি এল।
তবে জটিলতা থেকে যায় গঙ্গারামচক মৌজা নিয়েই। কারণ এই মৌজার একটি বড় অংশে রয়েছে বিশাল জঙ্গল। প্রায় সাড়ে সাত-শো বিঘারও বেশী ঘন বনভূমি চিহ্নিত হয়েছে ঐ এলাকায়। কয়লা উঠবে। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে তা সরবারহ হবে। উন্নয়নের স্বার্থ জড়িয়ে আছে বটে কিন্তু সীমান্ত এলাকার আদিবাসীরা সিঁদুরে মেঘ দেখছে। তাই এককাট্টা হচ্ছেন খয়রাশোলের গঙ্গারামপুরচক, বাস্তবপুর, সগরভাঙা, গাংপুর, বেলডাঙা, ভাদুলিয়া, দেবগঞ্জের মানুষ। জীবন-জীবিকায় অশনি সংকেত দেখা এলাকার আদিবাসীরা ইতিমধ্যেই “বির বানচাও কমিটি”। অর্থাৎ প্রকৃতি মাতা রক্ষা কমিটি করে আন্দোলন জমায়েত শুরু করেছে গ্রামে। এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে বীরভূম আদিবাসী গাঁওতা নেতা সুনীল সোরেন ইতিমধ্যেই বৃহত্তর আন্দোলনে ডাক দিয়েছে। বাস্তবপুর গ্রামের বৃদ্ধা মুটকি মারান্ডি কোনোমতে বেঁচে আছে হাঁপানি নিয়েই। বাবুরাম পাউরিয়া, কালিদাসী হেমব্রম, লক্ষ্ণীশ্বর বেসরা কাঁচা বাড়িতে এখনও ঐ গ্রামে দিন কাটায । বাড়ি থেকে ঢিল ছোড়া দুরে খোলা মুখ কয়লা খনি তে বিস্ফোরন হলে অচিরেই ভেঙে পরবে তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই টুকু।
ঐ এলাকায় তৈরি হওয়া “বির বানচাও কমিটি” নেতা বাবুরাম পাউরিয়া বলেন, “বনভূমি কেটে ফেলায় তাঁদের জীবন-জীবিকায় টান পরবে। এই জঙ্গল থেকে আমরা জ্বালানি কাঠ,শালপাতা, কেন্দু পাতা, মধু, জাম, খেজুর, পিয়াল, মহুযা সংগ্রহ করি। কোন টা নিজেদের দৈনন্দিন জীবনে পেট ভরায। আবার কোন কোন জিনিস বিক্রি করে আমাদের চাল ডালের জোগাড় হয়। জঙ্গল কেটে কয়লা খনি হলে আমরা না খেয়ে মরতে হবে।
এই নিয়ে ইতিমধ্যেই ঐ এলাকার গ্রামে গ্রামে সংগঠিত হচ্ছে আদিবাসীরা।এদিন খয়রাশোল ব্লক বিশাল জমায়েত করে বিক্ষোভ করে চরম হুঁশিয়ারি দেয আদিবাসী সংগঠন গুলি। এই বিক্ষোভে কাজ নাহলে আগামী দিনে জেলা সদরে আন্দোলন আছড়ে পরবে বলে ইঙ্গিত মিলেছে। বীরভূম আদিবাসী গাঁওতা নেতা সুনীল সোরেন বলেন, প্রাকৃতিক অরণ্যের উপর নির্ভর শীল আদিবাসী মানুষেরা কয়লা খনির নামে অবিচারে ব্যাপক হারে সবুজ ধ্বংসের প্রতিবাদে আন্দোলনে সামিল হবে। বনাধিকার আইন ২০০৬ কে মান্যতা না দেওয়া এবং গ্রাম সভা/গণশুনানী না করে। গ্রামের বাসিন্দা দের সঙ্গে কথা না বলে কি ভাবে ১০১ একর প্রাকৃতিক অরণ্যকে ধংস করে আদিবাসীদের জীবন জীবিকা বিপন্ন করার মত গুরুতর ও মারাত্মক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হল। তার বিরুদ্ধে বৃহত্তর আন্দোলন হবে। “
যদিও খয়রাশোলের বিডিও সঞ্জয় দাস বলেন,” যেখানে কয়লা খনি তৈরী হবে সেই এলাকার বাসিন্দাদের যাতে কোন অসুবিধা না হয় তা আমরা খতিয়ে দেখব। ”