মমতা ব্যানার্জির (Mamata Banerjee) জন্য আগামী বিধানসভা নির্বাচন একদমই সহজ হবে না। গত কিছু বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal) রাজ্যে কিছু ধারণা ও সাংস্কৃতিক রূপে ব্যাপক পরিবর্তন হচ্ছে। এর একটি উদাহরণ রাজ্যে আরএসএস এর বাড়ন্ত প্রভাব পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। কিছুদিন আগেই পশ্চিমবঙ্গে আরএসএস-এর সঙ্গে যুক্ত লোকেদের গ্রাফ দ্রুত গতিতে বাড়ছে। স্বাধীনতার পর থেকে পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস ও বামপন্থীদের শাসন থাকায় রাজ্যের মানুষের চিন্তাধারা একটু অন্য রকমের ছিল। কিন্তু এখন পশ্চিমবঙ্গে জাতীয়তাবাদী ও হিন্দুত্ববাদী চিন্তাধরার পুনরুত্থান ঘটতে দেখা যাচ্ছে।
রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ এক সদস্যর মতে দেশ জুড়ে অনুযায়ীদের সংখ্যা হিসেবে উত্তরপ্রদেশের পরে এবার পশ্চিমবঙ্গে সবচেয়ে বেশি যুবক আরএসএস এর জন্য অনলাইন আবেদন করে। ২০১৭ তে পশ্চিমবঙ্গে ৭৪০০ জন অনলাইন আবেদন করেছিল। কিন্তু ২০১৮ তে এই সংখ্যা ৯০০০ অনলাইন আবেদন অব্দি বেড়ে গেছিল, আর দ্যা প্রিন্টের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৫ জুন অব্দি বেঙ্গল থেকে অনলাইন আবেদনের সংখ্যা ৭৭০০ অব্দি পৌঁছে গেছে। এই ব্যাপারের অনুমোদন করে দ্যা প্রিন্ট নিজের একটি রিপোর্টে পশ্চিমবঙ্গে আরএসএস এর বৃদ্ধি হওয়া প্রভাবের উপর প্রকাশ করেছে।
রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের এক সদস্যর মতে দেশজুড়ে অনলাইন আবেদনের সংখ্যা আপাতত ৬২০০০ পার করে গেছে। ২০১৭ তে ১০০০০০ লোক আবেদন করেছিলো এবং ২০১৮ তে ১১০০০০ লোক আবেদন করেছে। মিডিয়ার জন্য আরএসএস এর অখিল ভারতীয় সহ-সমন্বয়কারী নরেন্দ্র ঠাকুরের মতে দেশজুড়ে লোক আরএসএস এর অংশ হওয়ার জন্য অনেক বেশি উৎসাহিত হয়ে আছেন। আমাদের ওয়েবসাইটে আরএসএস এর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য যে সুবিধা আমরা দিয়েছি, তা থেকে আমরা ভালো প্রতিক্রিয়া পেয়েছি। যেখানে পশ্চিম বাংলার কথা আসে, সেখান দিয়ে আবেদনের সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।
রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সদস্য দ্যা প্রিন্টকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে বলেন যে কিভাবে পশ্চিম বেঙ্গলে আরএসএস এর প্রতি লোকেদের আকর্ষণ রাজ্যে সনাতন সম্প্রদায়ের উপর হওয়া অত্যাচারের কারণ দিন-প্রতিদিন বেড়েই চলেছে। স্বয়ংসেবক অনুযায়ী যেই ভাবে পশ্চিম বাংলায় হিন্দুদের সাথে ব্যাবহার করা হচ্ছে, তা কারোর থেকে লুকিয়ে নেই। ধীরে ধীরে পুরো রাজ্যে এবার এর বিরুদ্ধে বিরোধ শুরু হয়ে গেছে। লোকেরা আরএসএস এর কাজকে দেখেছে এবার তারা তার সাথে জুড়তে চায় তাই অনলাইন সদস্যতার ফলে তাদের অনেক সুবিধা হয়েছে।
কিন্তু এমন কি হয়ে গেল, যে পশ্চিমবঙ্গের জনগণ হটাৎ করে RSS এর প্রতি এত আকৃষ্ট হয়েছে?
আসলে ২০১৬ তে পশ্চিমবঙ্গে হওয়া ধুলাগড় দাঙ্গা সহ বাকি দাঙ্গা হিন্দুদের একজোট করে সঙ্ঘের দিকে আকর্ষন করেছে। সরকারের একতরফা কাজের জন্য হিন্দুদের বিরুদ্ধে অত্যাচার বেড়ে চলেছে। ডিসেম্বর ২০১৬ তে এক স্থানীয় ঝগড়া কখন দাঙ্গায় পরিণত হয়ে যায়। কিন্তু এই ঘটনার প্রতি মমতা সরকারের ঔদাসীন্যর জন্য হিন্দুরা অনেক আহত হয়। শুধু তাই নয় এই ঘটনার কভারেজ করা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মমতা সরকার দ্বারা মামলা দায়ের করার ফলে বহুজন ক্ষুব্ধ হন। সব সীমা তো তখন ছাড়িয়ে যায় যখন মমতা ব্যানার্জি এই দাঙ্গার জন্য আরএসএস ও বিজেপির উপর দোষ দেওয়া শুরু করে দেয়। আর যেইটুক বাকি ছিল তা বসিরহাটে হওয়া দাঙ্গা গুলি পুরো করে দেয়, আর ২০১৮ তে রাম নবমীর উৎসবে যেই ভাবে মমতা সরকার অল্পসংখ্যকদের তুষ্টিকরণের জন্য বিশৃঙ্খলা তৈরি করার চেষ্টা করেন এবং এর ফলে লোকের সহ্যের সীমা পার হয়ে যায়। হিন্দুদের উপর অত্যাচারের কারণে অনেকে সংঘবদ্ধ হতে ও নিজের আওয়াজকে বড়ো করে প্রকাশ করতে সঙ্ঘের সাথে যুক্ত হয়।
রাজ্যজুড়ে হামলা ও হত্যার পরেও লোকেদের উৎসাহ কোনো ভাবে কম হয়নি। যখন কিছুদিন আগেই জয় শ্রীরাম বলায় মমতা ব্যানার্জি জনতার সঙ্গে অভদ্র ব্যাবহার করা শুরু করে, তখন মানুষ মন খুলে মুখ্যমন্ত্রীর বিরোধ করে, বরং আরএসএস ও বিজেপির জন্য নিজেদের সমর্থন আরো বেশি স্পষ্টভাষী করে দেয়।
এই ধারণাসঙ্গত পরিবর্তণ বিজেপির জন্য পশ্চিমবঙ্গে লাইফ সেভিং এর কাজ করেছে। পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিজেপি ৪০% এর বেশি লোকের ভোট পেয়েছে। তাই এরম পরিস্থিতির জন্য মমতা ব্যানার্জির জন্য ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচন কোনো অগ্নি পরীক্ষার থেকে কম হবে না । যেভাবে বিজেপি ও আরএসএস এর প্রভাব বাড়ছে, এবার যদি মমতা কে হারিয়ে বিজেপি স্বয়ং ক্ষমতায় এসে যায় তবে সেটিতে কেউ অবাক হবে না।