কলকাতায় তৈরি হচ্ছে ভারতের প্রথম প্লাস্টিক ফ্রি বাজার

প্লাস্টিক ব্যবহার কম করানোর কাজ অনেক আগেই শুরু হয়েছে। বেশ কিছু দোকানে এখন আর প্লাস্টিক ক্যারি ব্যাগ দেওয়া হয় না। শপিং মলগুলিও সেই পথেই হেঁটেছে। বেশ কিছু বাড়তি চার্জ নেওয়া হয়। অনেকে তার জন্য বাড়ি থেকেই ক্যারিব্যাগ নিয়ে যান। কিন্তু হাটে বাজারে এই চিত্রের বদল হয়নি। উদাহরণ তৈরি করতে তৈরি হচ্ছে ভারতের প্রথম প্লাস্টিক ফ্রি বাজার।

নিউটাউনের সি. বি. কমিউনিটি মার্কেটকে দিয়ে এই কাজ শুরু হচ্ছে। প্লাস্টিক মুক্ত করার কাজ করছে এন.কে.ডি.এ এবং হিডকো-র তরফ থেকে যৌথ ভাবে কলকাতা সোসাইটি ফর কালচারাল হেরিটেজ (কে.এস.সি.এইচ.) নামক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। প্রস্তাবিত প্রকল্পটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন হিডকো ও এন.কে.ডি.এ-এর চেয়ারম্যান আই.এ.এস, দেবাশিস সেন, এন.কে.ডি.এ.-র সিইও শ্রী অনিমেষ ভট্টাচার্য এবং কলকাতা সোসাইটি ফর কালচারাল হেরিটেজের (কে.এস.সি.এইচ.) সভাপতি সৌরভ মুখোপাধ্যায়।

যেহেতু প্লাস্টিকের সর্বব্যাপী ব্যাবহার পরিবেশের উপর খুব খারাপ প্রভাব ফেলে চলেছে বহুদিন ধরে, তাই প্লাস্টিকের বিকল্প সন্ধান করা জরুরী ছিল। হিডকো চেয়ারম্যান এবং সি.ই.ও. এন.কে.ডি.এ. খুঁজে বার করেন উদ্ভিদজাত প্লাস্টিকের ব্যাগ। কে.এস.সি.এইচ যোগানের ব্যাবস্থা করে কাগজের ব্যাগ (ঠোঙা), মাটির পাত্র এবং কাপড়ের ব্যাগ। চেয়ারম্যানের শ্রী দেবাশীষ সেনের নেতৃত্বে এন.কে.ডি.এ.-র প্রধান কর্মকর্তাদের একটি দল প্লাস্টিকের বিকল্পগুলি অনুসন্ধান করতে হলদিয়ায় সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট অফ পেট্রোকেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শন শেষে কর্তৃপক্ষ শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে একটি বৈঠকও করেছেন।

এই প্লাস্টিকের বিকল্পগুলি কিন্তু কখনোই প্লাস্টিকের তুলনায় সস্তা নয়। কিন্তু এই প্রকল্পের আওতাধীন দোকান মালিকরা ওই বিকল্পগুলি প্লাস্টিকের দামেই কিনবেন এবং অতিরিক্ত খরচ বহন করবে এন.কে.ডি.এ স্মার্ট সিটি প্রকল্প।

কে.এস.সি.এইচ.-এর প্রতিনিধিরা সি.বি. মার্কেট থেকে প্লাস্টিকের ক্যারি ব্যাগের ব্যবহার নির্মূল করার জন্য একটি দুই বছরের দীর্ঘ প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। কে.এস.সি.এইচ. ইতিমধ্যে নিউটাউনের সি.বি. মার্কেটের ২৯ টি দোকান মালিক এবং সংলগ্ন রাস্তার বিক্রেতাদেরকে নিয়ে গত তিন মাস ব্যাপী বহুবার সমীক্ষা চালায়। এই সমীক্ষার এক পর্যায়ে এ.কে.ডি.এ.-র আধীকারিক-ও অংশগ্রহণ করেন। এই বিগত তিন মাসের কার্যকলাপে বাজার সমীক্ষা, অঞ্চল অধ্যয়ন, প্লাস্টিক বিকল্প নির্বাচন, প্রকল্পের অঞ্চল ম্যাপিং এবং কৌশল প্রনালী নির্ধারণ করে এই সংস্থা। কে.এস.সি.এইচ. আগামী দুই বছরে এই প্রকল্পকে সয়ংক্রিয়তার পথ দেখাবে বলে মনে করছে।

সৌরভ মুখার্জি জানান “আমরা ২৯ টি দোকানের মালিকদের সাথে সরাসরি সমীক্ষা চালিয়েছি। প্রতিটি দোকান মালিকের অনুমান এবং প্রতিটি দোকান মালিকদের সাথে মৌখিক আলোচনার ভিত্তিতে মাসিক পরিসংখ্যান গণনা করা হয়েছে। আমরা এই সিবি কমিউনিটি মার্কেটের সংলগ্ন ব্লক গুলি তেমন; সিএ, সিবি, সিসি, সিডি এবং সঙ্কল্প ৩ ও ৪ এর বাসিন্দাদের এই প্রকল্পের আওতায় এনেছি এবং এই অঞ্চলে ২,৩১৩ পরিবার বসবাস করছেন। এই প্রকল্পের সাথে প্লাস্টিকের ক্যারি ব্যাগের ব্যাবহার বন্ধের সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে এই প্রতিটি সংলগ্ন পরিবারের কাছেও পৌঁছনোর পরিকল্পনাও করেছি আমরা। তবে সবার আগে আমাদের এই বাসিন্দাদের জন্য একটি কম খরচের পরিবেশ বান্ধব বিকল্পের সন্ধান দেওয়ার খুব দরকার ছিল। এটি সত্য যে বিপুল পরিমাণ লোক এখনও প্লাস্টিকের পাত্র ব্যবহার করে, কারণ এগুলি প্রায় নিখরচায় পাওয়া যায় এবং এগুলি ব্যবহার করা সহজ।’

একইসঙ্গে তিনি বলেন , ‘আমাদের লক্ষ্য হল এই প্রকল্পটিকে ১১ মাসের মধ্যে সাবলম্বী করা এবং সিবি মার্কেট-কে একটি ইতিহাস তৈরির সুযোগ করে দেওয়া। আমরা প্লাস্টিকের নিম্নলিখিত বিকল্প গুলির পরামর্শ দিয়েছি। ১. কাগজ ব্যাগ (ঠোঙা) ২. মিষ্টির দোকানের প্লাস্টিকের পাত্রের প্রতিস্থাপন করতে মাটির ভার ৩. উদ্ভিদজাত প্লাস্টিকের ক্যারি ব্যাগ এবং ৪. কাপড় ব্যাগ। প্রচারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্বটি হ’ল বাসিন্দা ও গ্রাহকদের মানসিকতার পরিবর্তন। আমরা ২,৩১৩ পরিবারের জন্য ঘরে ঘরে সচেতনতামূলক প্রোগ্রাম পরিচালনা করব এবং দোকানদার এবং গ্রাহকদেরও এই সচেতনতার অংশ হিসেবে প্রশিক্ষণ দেব।’

প্লাস্টিকের ব্যবহার রোধ ও বিকল্প সরবরাহের জন্য এবং বাজারের তদারকি পরিচালনার জন্য কে.এস.সি.এইচ সিবি মার্কেটে দুটি শিফটে ৬ জন স্বেচ্ছাসেবীকে নিয়ন্ত্রণ করবে। এনকেডিএ এবং হিডকো-র শীর্ষ আধীকারিক দের দ্বারা গঠিত একটি কমিটি গঠিত হয়েছে যারা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করবেন এই প্রকল্পটিকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.