রাহুল নয়, অধীরকেই লোকসভায় কংগ্রেস দলের নেতা করলেন সনিয়া

সবার আগে দ্য ওয়াল-এই বলা হয়েছিল। হলও তাই। লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা নির্বাচিত হলেন বহরমপুরের পাঁচবারের সাংসদ অধীর চৌধুরী।

বহরমপুর থেকে পাঁচবারের সাংসদ অধীরবাবু। লোকসভায় কংগ্রেসের অনেক নেতার তুলনায় তিনি সংসদীয় রাজনীতিতে প্রবীণ। রেলের প্রাক্তন প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সংক্রতান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যও ছিলেন। তাছাড়া গত পাঁচ বছরে বিভিন্ন বিল নিয়ে বিতর্কে অধীরবাবুর বক্তৃতা ও বিরোধিতা বারবার নজর কেড়েছে। সে দিক থেকে অধীরবাবুর এই স্বীকৃতি প্রাপ্য ছিল বলেই মত কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের। তাঁর উপর সনিয়া ও রাহুল গান্ধীর যে আস্থা রয়েছে সেই বার্তাও এতে স্পষ্ট।

রাহুল গান্ধী কংগ্রেসের সভাপতি। তাই তিনি লোকসভার নেতা হতে চাননি। অন্য দিকে সনিয়া লোকসভার নেত্রী হলে পুরো ব্যাপারটা পরিবারের মধ্যে চলে আসত। পর্যবেক্ষকদের মতে, সব দিক বিবেচনা করেই অধীরের মতো মুখকে জাতীয় স্তরে তুলে ধরল কংগ্রেস।

লোকসভা নির্বাচনে এ বার মাত্র ৫২টি আসন পেয়েছে কংগ্রেস। ফলে এ বারও কংগ্রেস বিরোধী দলের মর্যাদা পাবে না। কারণ, বিরোধী দলের মর্যাদা পেতে গেলে ন্যূনতম ৫৪টি আসন জিততে হতো। কিন্তু  সে না হোক। লোকসভায় তো প্রতিটি রাজনৈতিক দলকেই একজন করে নেতা নির্বাচিত করতে হয়, সাবেক কংগ্রেস দলের নেতা নির্বাচিত হলেন অধীর চৌধুরী। প্রণব মুখোপাধ্যায়ের পর অধীর চৌধুরী দ্বিতীয় কোনও বাংলার কংগ্রেস নেতা যিনি লোকসভায় কংগ্রেস দলের নেতা হলেন।

পর্যবেক্ষকদের মতে, প্রণব মুখোপাধ্যায় থেকে মল্লিকার্জুন খাড়গে, কংগ্রেসে এত দিন যাঁরা লোকসভার নেতা নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই বর্ষীয়ান। সেই তুলনায় অধীর চৌধুরীর বয়স অনেকটাই কম। তাঁদের মতে, কংগ্রেস যে পরবর্তী প্রজন্মের নেতাদের সামনে সারিতে আনতে চাইছে, এর মধ্যে দিয়ে সেটাই স্পষ্ট হয়েছে। তাছাড়াও, কংগ্রেসের রাজনীতি নিয়ে ওয়াকিবহাল অনেকের মতেই, সনিয়া-রাহুলরাও বুঝতে পারছেন, তাঁদের চারপাশে যে নেতারা ঘুরঘুর করেন, তাঁদের দিয়ে হবে না। কংগ্রেসকে অক্সিজেন দিতে গেলে অধীরের মতো লড়াকু মানসিকতার নেতাই দরকার।

এ বারে অধীরের জয়টাও অন্যবারের থেকে আলাদা। তৃণমূল সর্বোশক্তি ঢেলে দিয়েছিল বহরমপুর জিততে। কয়েক মাস আগে যখন লোকসভায় চিটফান্ড ইস্যুতে অধীর তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে বাছাবাছা বিশেষণে আক্রমণ শানিয়েছিলেন, সে দিন সংসদে উপস্থিত ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অধীরের বক্তৃতা নিয়ে নালিশ করেছিলেন সনিয়ার কাছেও। এতটাই রেগে গিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী যে, সংসদে দাঁড়িয়েই বলেছিলেন , “অধীরকে এ বার হারাবই।” ভোটের প্রচারেও তাঁর ব্যক্তিগত জীবন টেনে এনে তোপ দেগেছিলেন মমতা। কিন্তু ভোটের দিন সকাল থেকে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করেছেন অধীর। জিতেওছেন বুক চিতিয়ে।

পর্যবেক্ষকদের মতে, বাংলার কংগ্রেসও সংকটে পড়ে গিয়েছে। টিমটিম করে জ্বলছে বহরমপুর আর মালদহ দক্ষিণ। সে দিক থেকে কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের এই সিদ্ধান্ত বাংলার রাজনীতির ক্ষেত্রেও তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন অনেকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.