মাত্র ৩ বছরের মধ্যে বিজেপি-র ভোট বেড়েছিল ৪ গুণেরও বেশি। ২০১৬-র বিধানসভা ভোটে একটিতে না জিতলেও ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের হিসেবে বিজেপি এগিয়ে গিয়েছে ২২টি বিধানসভা কেন্দ্রে। এই পরিসংখ্যান নিয়েই নীলবাড়ির লড়াইয়ের শনিবার পঞ্চম দফায় রাজ্যের ৬ জেলার ৪৫টি আসনে ভোট।
পঞ্চম দফায় কালিম্পঙের ১, দার্জিলিঙের ৫ এবং জলপাইগুড়ির ৭ বিধানসভা আসনের সবগুলিতেই ভোট হবে। এ ছাড়া উত্তর ২৪ পরগনার ৩৩টির মধ্যে ১৬, নদিয়া জেলার ১৭টির মধ্যে ৮ এবং পূর্ব বর্ধমানের ১৬টির মধ্যে ৮ আসন রয়েছে এই তালিকায়।
২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে এই আসনগুলির মধ্যে তৃণমূল জিতেছিল ৩২টিতে। সিপিএম এবং কংগ্রেস জিতেছিল ৫টি করে আসনে। পাহাড়ের ৩টি কেন্দ্রে জিতেছিল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা (জিজেএম)। বিজেপি-র ঝুলি ছিল শূন্য। ৩ বছর পরে ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের বিধানসভা ভিত্তিক ফলের হিসেবে তৃণমূল ওই ৪৫-এর মধ্যে ২৩টিতে এগিয়ে গিয়েছে। ২২টি আসন নিয়ে তাদের ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলেছে বিজেপি। আলাদা ভাবে লড়ে বাম-কংগ্রেসের ঝুলি শূন্য। জিজেএম লোকসভা ভোটে না লড়ায় তাদের ‘জনসমর্থন’ এখনও অজানা।
২০১৬-য় ৬ জেলার এই ৪৫টি আসনে তৃণমূল ৪৪.৬, বিজেপি ৯.৮৭ এবং বাম-কংগ্রেস জোট ৩৭.২৫ (২৮.০৭+৯.১৮) শতাংশ ভোট পেয়েছিল। জিজেএম পেয়েছিল ২.৯২ শতাংশ। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের ফল বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, তৃণমূলের ভোট কমে হয়েছে ৪১.৩৬ শতাংশ। বিজেপি-র বেড়ে ৪৪.৭৫ শতাংশ। আলাদা লড়ে বামেরা ৭.৫৯ এবং কংগ্রেস ২.৯৯ শতাংশ ভোট পেয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, পঞ্চম দফায় পয়লা নম্বর জায়গা (ভোট প্রাপ্তির নিরিখে) ধরে রাখাই শনিবার পদ্ম শিবিরের চ্যালেঞ্জ। যদিও কেন্দ্রওয়াড়ি ফল বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, মূলত উত্তরবঙ্গের ৩ জেলা এবং নদিয়া জেলার আসনগুলিতে ৩ বছরের ব্যবধানে তৃণমূল এবং জোটের তুলনায় বিজেপি এগিয়ে গিয়েছে।
জলপাইগুড়ি জেলার ৭টি আসনের মধ্যে ২০১৬ সালে তৃণমূল জিতেছিল ৬টিতে। কংগ্রেস পেয়েছিল ১টি আসন। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের বিধানসভা ভিত্তিক ফল জানাচ্ছে, কংগ্রেসের জেতা জলপাইগুড়ি আসন-সহ জেলার ৬টি আসনে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। তৃণমূল এগিয়ে শুধু রাজগঞ্জ আসনে।
২০১৬-য় জিজেএমের জেতা কালিম্পং আসনে ২০১৯-এ এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। ২০১৯-এর বিধানসভা ভিত্তিক ফলের হিসেবে দার্জিলিং জেলার ৫টি আসনের সবগুলিতেও এগিয়ে পদ্ম শিবির। ২০১৬ সালে এর মধ্যে পাহাড়ের দার্জিলিং এবং কার্শিয়াঙে জিতেছিল বিমল গুরুংয়ের জিজেএম। এ বার তৃণমূলের সমর্থনে ওই কেন্দ্রগুলিতে লড়ছে গুরুং শিবির। দার্জিলিং জেলার সমতলের ৩টি আসনের মধ্যে ২০১৬ সালে কংগ্রেস ২টি (ফাঁসিদেওয়া এবং মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি) এবং সিপিএম ১টি (শিলিগুড়ি)-তে জিতেছিল।
পঞ্চম দফায় ভোট হতে যাওয়া নদিয়ার ৮টি আসনের মধ্যে ২০১৬-য় শান্তিপুর এবং রানাঘাট উত্তর-পশ্চিমে কংগ্রেস জিতেছিল। সিপিএম রানাঘাট দক্ষিণে। বাকি ৫টি কেন্দ্র ছিল তৃণমূলের দখলে। ২০১৯-এর বিধানসভা ভিত্তিক হিসেবে ৮টি আসনেই বিজেপি এগিয়ে রয়েছে।
পাশের জেলা উত্তর ২৪ পরগনায় অবশ্য ওই তিন বছরের মধ্যে পরিবর্তনের তেমন স্রোত দেখা যায়নি। শনিবার ভোট হতে যাওয়া ১৬টি আসনের মধ্যে ২০১৬-য় তৃণমূল জিতেছিল ১৪টিতে। কামারহাটি এবং বসিরহাট-উত্তর ছিল সিপিএমের দখলে। ২০১৯-এর হিসেবে সিপিএমের জেতা দু’টি আসন-সহ ১৪টিতে এগিয়ে তৃণমূল। অন্য দিকে, ২০১৬-য় তৃণমূলের জেতা বিধাননগর এবং রাজারহাট-গোপালপুরে ৩ বছরের মধ্যে প্রথম স্থানে উঠে এসেছে বিজেপি।
পূর্ব বর্ধমানের ৮টি আসনে ৩ বছরের ব্যবধানে ভোট বাড়লেও আসনসংখ্যার হিসাবে বিজেপি-র কোনও অগ্রগতি ঘটেনি। ওই আসনগুলির মধ্যে ২০১৬-য় ৭টিতে জিতেছিল তৃণমূল। জামালপুর কেন্দ্রে সিপিএম জেতে। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের বিধানসভা ভিত্তিক হিসেব বলছে জামালপুর-সহ সবগুলি আসনেই তৃণমূল এগিয়ে।