এনআরএস হাসপাতালে ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রেক্ষিতে এই মুহূর্তে উত্তাল সারা পশ্চিমবঙ্গ। জুনিয়র ডাক্তার পরিবহ মুখোপাধ্যায়ের মাথার খুলিতে আঘাতের নিন্দা করেছেন সমাজের নানা স্তরের মানুষ। ঘটনার ধিক্কার জানিয়ে কাজ বন্ধের ডাক দেন জুনিয়র ডাক্তাররা। বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কড়া ভাষায় ডাক্তারদের আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিতে বলেন। এবং বলেন, ৪ ঘণ্টার মধ্যে কাজে যোগ না দিলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মুখ্যমন্ত্রীর এমন কথাকে গুরুত্ব না দিয়ে পালটা আন্দোলনের ডাক দেয় জুনিয়র ডাক্তাররা। এমন ঘটনাকে ইতিমধ্যেই ধিক্কার জানিয়েছেন অনেকে। কবি শঙ্খ ঘোষ বুধবার এক বিবৃতিতে বলেন “চিকিৎসক সমাজ নিরুপায় ভাবে সাময়িক কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন। তাঁদের এই সিদ্ধান্ত নিতান্ত অগ্রাহ্য করার মতো নয়। কিন্তু তাঁদের একটু ভেবে দেখতে অনুরোধ করি যে, দুর্বৃত্তেরাই এই সমাজের সম্পূর্ণটা নয়। দূরদূরান্ত থেকে যে-সব অসহায় রোগীকে নিয়ে তাঁদের পরিজনেরা আপনাদের কাছে এসে দাঁড়াচ্ছেন, তাঁরা অনেকেই চিকিৎসকদের আজ পর্যন্ত ঈশ্বরতুল্য জ্ঞান করেন। তাঁরা যদি এ ভাবে প্রতিহত হন, আর এর ফলে হঠাৎ কোনও দুর্যোগ যদি ঘটে যায়, তবে সে তো আপনাদেরও নিশ্চয় কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।”
অর্থাৎ তিনি চিকিৎসকদের পাশে থাকলেও প্রশাসনের ওপর এক প্রকার অনাস্থা ইঙ্গিত করেছেন। ঘটনাটি নিয়ে শঙ্খ ঘোষ ছাড়াও বাংলার আরও কয়েকজন বিশিষ্ট মানুষ মুখ খুলেছেন। কবি সুবোধ সরকার এসেএসকেএমে বহিরাগতদের আক্রমণ করে বলেন, “৮৫-৯০ বছরের একজন মুমূর্ষু রোগী মারা যেতেই পারেন, গাফিলতি হয়েছে কিনা সেটা জানার জন্য পেটে বিদ্যে লাগে, দুটো ট্রাক বোঝাই করে বর্বর উল্লাসে হাসপাতালে নেমে ডাক্তার পেটালে একদিন ওই বর্বরদের প্যারাসিটামল দেবারও কোন লোক পাওয়া যাবে না।”
চিত্রপরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের মতে, “চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে এই অরাজকতা আর কতদিন আমরা সহ্য করবো? কতদিন চলবে এই অসভ্য লুম্পেনদের জুলুমবাজি? ঠিক কতদিন চিকিৎসা পরিষেবার উন্নয়নের গালগল্প চলবে? আর কতদিন চিকিৎসকেরা কর্মক্ষেত্রে সুরক্ষা পাবেন না? কতদিনে শাস্তি দেওয়া যাবে এমন জুলুমবাজদের? ঠিক কতদিনে এই জুলুমবাজদের ক্ষেপিয়ে তোলা ও লেলিয়ে দেওয়া বন্ধ হবে? আপনার আমার স্বাস্থ্যের সুরক্ষা যাঁদের হাতে– তাঁদের সুরক্ষার দায়িত্ব কে নেবেন?”
চিকিৎসক নিগ্রহ এবং প্রশাসনিক উদাসীনতাকে নিশানা করে কবি মন্দাক্রান্তা সেন হাতে তুলে নেন কলম। তিনি আক্রান্ত ডাক্তার পরিবহর উদ্দেশে লেখে কবিতা– “জাগো হে মানুষ, কাটাও সুখের মোহকে/ আজকে আমরা বাঁচাবই পরিবহকে।” টলিউড অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখার্জী চিকিৎসকদের এই আন্দোলনকে পূর্ণ সমর্থন করছেন। স্বস্তিকার কথায়, “এনআরএস হাসপাতালের হিংসার ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে ডাক্তারদের ডাকা স্ট্রাইককে আমার পূর্ণ সমর্থন জানাই।”
কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, ঋদ্ধি সেন থেকে শুরু করে কবি বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়, সঙ্গীত পরিচালক ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত এই ঘটনার কাড়া নিন্দা করেন। তরুণ চিকিৎসক পরিবহ মুখোপধ্যায়ের সুস্থতা প্রার্থনা করেন। অনেক খারাপ খবরের মাঝে এটা ভালো খবর যে পরিবহ এখন বিপদমুক্ত। যদিও এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়ে ফোন করা হলে চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্ন এবং কবি জয় গোস্বামী ফোন ধরেননি।