বাংলার চিকিৎসকদের পাশে দাঁড়ালো পাশে ওয়ার্ল্ড মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন, নিন্দার ঝড় গোটা বিশ্ব জুড়ে!

ডাক্তাররা দলীয় কর্মী নন, সেটা হয়ত ভুলে গেছিলেন মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। আর সেই জন্যই উনি আজ সকালে SSKM হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তারদের হুঁশিয়ারির সুরে কাজে ফেরার হুমকি দেন। ওনার এই হুমকির জেরে SSKM এর জরুরি বিভাগ তৎকালীন খুলে গেলেও, শিরদাঁড়া সোজা রেখে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন NRS এর জুনিয়র ডাক্তারেরা। এক জুনিয়র ডাক্তার মমতা ব্যানার্জীর চার ঘন্টার মধ্যে কাজে ফেরার হুমকি প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘আমরা ভয় পাইনা। তাই আপনার চ্যালেঞ্জ অ্যাসেপ্ট করলাম। আমাদের আন্দোলন চলবেই।”

মমতা ব্যানার্জীর এই হুঁশিয়ারির পরে ফের বৃহস্পতিবার NRS এ হামলা চালায় একদল দুষ্কৃতী। সেই সময় ডাক্তারদের নিরপত্তায় থাকা পুলিশদেরও দেখা মেলেনি। NRS এ আজকের হামলায় মাথা ফাটে এক জুনিয়র ডাক্তারের। যদিও সে NRS এর না।

দুষ্কৃতীদের হামলায় আহত জুনিয়র ডাক্তার সৌম্যদীপ মজুমদার কল্যাণী মেডিক্যাল কলেজের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। NRS এ জুনিয়র ডাক্তারদের পাশে দাঁড়াতে সে এখানে এসেছিল। প্রথমে হামলাকারীদের হামলায় NRS এর ডাক্তারেরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলেও, পরে প্রতিরোধ গড়ে তুলে সবাই এক হয়ে হামলাকারীদের দিকে তেড়ে যায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে NRS এর মেইন গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়।

NRS এর এই কাণ্ডের পর তৃণমূলের অন্দরেই অসন্তোষ দেখা যায়। একদিকে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের কন্যা শাব্বা হাকিম এই ঘটনার নিন্দা করে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদ করেন। আরেকদিকে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর চিকিৎসক ভাইপো আবেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, যিনি কেপিসি মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক। তিনও আজ জুনিয়র চিকিৎসকদের বিক্ষোভেও সামিল হন।

এছাড়াও তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ ড. শান্তনু সেন একটি বিবৃতি জারি করে বলেন, বাংলায় এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে জুনিয়র চিকিৎসকদের উপর হামলা ও তার জেরে ড. পরিবহ মুখোপাধ্যায়ের গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনায় তিনি চিন্তিত। এই অবস্থা মেনে নেওয়া যায় না। আর তাই শুক্রবার ‘অল ইন্ডিয়া প্রোটেস্ট ডে’ পালন করবেন গোটা দেশের চিকিৎসকরা।

এই ঘটনার রেশ শুধু রাজ্যে অথবা দেশে সীমিত না। এই ঘটনা এখন গোটা বিশ্বের চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে। সুদূর জাপান থেকেও এই ঘটনা নিয়ে নিন্দা করা হয়েছে। জাপানের টোকিও তে চলা ওয়ার্ল্ড মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন এর একটি সন্মেলন থেকে দুই কর্তা এনআরএস কাণ্ড নিয়ে বলেন, ‘চিকিৎসকদের নিরাপত্ত চিকিৎসার স্বার্থেই প্রয়োজন। একজন চিকিৎসক যদি নিরাপত্তার অভাব বোধ করেন তবে তিনি কখনওই তাঁর সেরাটা দিতে পারেন না। একই সঙ্গে বিক্ষোভ প্রতিবাদে চিকিৎসা পরিষেবা বন্ধ হয়ে গেলে রোগীদের দুর্ভোগ হয়। সুতরাং, চিকিৎসকদের নিরাপত্তার বিষয়টাকে অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার। তবেই সুষ্ঠু চিকিৎসা পরিষেবা মিলবে।”

এই ঘটনা গুলো নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কড়া প্রতিক্রিয়া দিলেও উনি কিন্তু হামলাকারীদের বিরুদ্ধে সেরকম কিছু বলেন নি। অথবা তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও শোনা যায়নি। উলটে তিনি জুনিয়র ডাক্তারদের শাসিয়ে এসেছেন। আর এই ঘটনার পর নিজের দলের মানুষ এবং রাজ্য তথা গোটা দেশের মানুষের চাপে ব্যাকফুটে চলে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.