করোনার প্রকোপ ফের ভয়াবহ আকার ধারণ করতে শুরু করেছে বাংলাদেশে। পড়শি দেশ ভারত আপাতত নাইট কার্ফু এবং জায়গায় জায়গায় আংশিক লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিলেও, আগেভাগে সাবধানতা অবলম্বন করতে এক সপ্তাহের জন্য সম্পূর্ণ লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিল বাংলাদেশ সরকার। সোমবার থেকে গোটা দেশে এই লকডাউন চালু হচ্ছে। তবে দেশের অর্থনীতি যাতে থমকে না যায়, তার জন্য কলকারখানা আগের মতোই চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে হাসিনা সরকার।
শনিবার ঢাকায় নিজের বাসভবনে সাংবাদিক বৈঠক করে লকডাউনের কথা ঘোষণা করেন সে দেশের সড়ক পরিবহণ এবং সেতু মন্ত্রী তথা ক্ষমতাসীন আওয়ামি লিগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সোমবার থেকে সারা দেশে এক সপ্তাহের জন্য লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। লকডাউন চলাকালীন জরুরি পরিষেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলি খোলা থাকবে। কলকারখানা এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলিও খেলা থাকবে, যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিভিন্ন শিফ্টে কাজ করতে পারেন শ্রমিকরা।’’
কলকারখানা চালু রাখার কারণ জানতে চাইলে কাদের জানান, অতিমারির প্রকোপে আগেই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সবে সব কিছু স্বাভাবিক হতে শুরু করেছিল। কিন্তু এখন আচমকা ফের কলকারখানা বন্ধ করলে, শ্রমিকদের বাড়ি ফিরে যেতে হবে। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাতে তাঁরা কাজ চালিয়ে যেতে পারেন, সেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। খুব শীঘ্র এ ব্যাপারে বিশদ নির্দেশিকা প্রকাশ করা হবে বলেও জানান তিনি।
প্রতি ২৪ ঘণ্টার হিসেবের নিরিখে শুক্রবার সকালে বাংলাদেশে ৫০ জন করোনা রোগীর মৃত্যু ঘটে। একই সঙ্গে ৭ দিনের ‘চলন্ত গড়’ বা ‘মুভিং অ্যাভারেজ’ও সর্বোচ্চে গিয়ে ঠেকেছে সেখানে। একটি নির্দিষ্ট দিনের করোনা আক্রান্তের সংখ্যা, তার আগের ৩ দিনের সংখ্যা এবং তার পরের ৩ দিনের সংখ্যার গড়-কে ৭ দিনের ‘চলন্ত গড়’ বলা হয়। অতিমারির প্রকোপে যখন জর্জরিত গোটা বিশ্ব, সেই সময় গত বছর ৫ জুলাই বাংলাদেশে সর্বোচ্চ ৭ দিনের ‘চলন্ত গড়’ ছিল ৪৪.৮৬। মার্চে তা ১০-এর নীচে নেমে এলেও, সম্প্রতি ফের তা বেড়ে ৪৬.৪৩ হয়েছে। তার জেরেই লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সরকারি সূত্রে খবর।
শুক্রবার বাংলাদেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তরফে প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছর মার্চে করোনার প্রকোপ দেখা দেওয়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত ৯ হাজার ১৫৫ জন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে। আমেরিকার জন্স হপকিন্স ইউনিভার্সিটির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছর মার্চ থেকে এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশের ৬ লক্ষ ২৪ হাজার ৫৯৪ জন নাগরিক কোভিডে সংক্রমিত হয়েছেন।
পড়শি রাষ্ট্র ভারতের অবস্থাও খারাপ। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় ক্রমেই নাজেহাল ভারতের করোনা পরিস্থিতি। গত বছর সেপ্টেম্বরে দৈনিক সংক্রমণ যেমন শিখরে পৌঁছেছিল, ফের সে রকম পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে ভারতে। এর মোকাবিলা কী ভাবে হবে, তা নিয়ে চিন্তা বাড়ছে সে দেশের কেন্দ্র এবং বিভিন্ন রাজ্য প্রশাসনের। এ জন্য রাত্রিকালীন কার্ফুও জারি করা হয়েছে ভারতের বেশ কিছু রাজ্যে। বাংলাদেশে সম্পূর্ণ লকডাউন ঘোষণা হলেও এখনই লকডাউনের কথা ভাবছে না বলে জানানো হয়েছে মোদী সরকারের তরফে। তবে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে যদিও জানিয়েছেন, এ ভাবে চলতে থাকলে শীঘ্রই লকডাউন জারি হতে পারে সে রাজ্যে।
ভারতে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৮৯ হাজার ১২৯ জন। এ নিয়ে ভারতে মোট আক্রান্ত হলেন ১ কোটি ২৩ লক্ষ ৯২ হাজার ২৬০ জন। গত বছর ১৭ সেপ্টেম্বর দেশের দৈনিক সংক্রমণ হয়েছিল ৯৭ হাজার। তার পর থেকে তা কমতে শুরু করে। কমতে কমতে এক সময় ১০ হাজারে নীচেও নেমেছিল দেশের দৈনিক সংক্রমণ। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সংক্রমণকে ফের এই পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ভারতের দৈনিক মৃত্যুও বাড়িয়ে দিয়েছে বেশ কয়েক গুণ। নয়াদিল্লির স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে মৃত্যু হয়েছে ৭১৪ জনের।