তাঁকে নিয়ে এই মুহূর্তে উদ্বিগ্ন সারা বাংলা। দিনভর ডাক্তারদের আন্দোলনের টানা পড়েনের মাঝে মানুষের মনে বারবার উঁকি দিয়ে গেছে, কেমন আছেন তিনি? একই প্রশ্ন উঁকি দিয়েছে তাঁর সতীর্থ, বন্ধুদের মনেও। অবশেষে শোনা গেল তাঁর গলার স্বর। দেখা গেল তাঁকে। কাটল দুশ্চিন্তার প্রহর। তিনি নিজেই বললেন, ‘ভাল আছি’।
তিনি পরিবহ মুখোপাধ্যায়। এনআরএস কাণ্ডের প্রধান ও অন্যতম আক্রান্ত। বছর ২৬-এর এই তরুণই সোমবার সন্ধ্যায় রোগীর পরিজনদের হাতে, বলা ভালো উন্মত্ত জনতার হাতে বেধড়ক মার খেয়েছিলেন। ইটের আঘাতে ভেঙেছিল মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল লোব। মল্লিকবাজারের ইনস্টিটিউট অফ নিউরো সায়েন্সে ভর্তি রয়েছেন পরিবহ। মাঝে উৎকণ্ঠায় কেটেছে অনেকগুলো ঘণ্টা। অবশেষে বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারকে স্বস্তি দিলেন পরিবহ। তাঁর কপালে বাঁধা মোটা ব্যান্ডেজ। চোখে-মুখে ক্লান্তি এবং ধকলের ছাপ স্পষ্ট। বোঝাই যাচ্ছে একটা যুদ্ধ জয় করে এসেছেন। ট্রমাটা এখনও কাটেনি। পাশ থেকে উদ্বিগ্ন গলায় ভেসে এল প্রশ্ন, “কেমন আছো?”। খানিক ঘোরলাগা ভাব নিয়েই মৃদু স্বরে বললেন, “এখন ভালো আছি’”।
মঙ্গলবার দুপুরে একবার ডাক্তাররা জানিয়েছিলেন, পরিবহ-র অবস্থার অবনতি হচ্ছে। ক্ষোভে ফেটে পড়ে এনআরএস। তবে বিকেল গড়াতেই আসে স্বস্তির খবর। চিকিৎসকরা জানান, পরিবহ-র অবস্থা স্থিতিশীল। পর্যবেক্ষণের জন্য আই টিইউ-তে রাখা হয়েছে তাঁকে। তারপর, বুধবার সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে একটি ভিডিও। দেখা যায়, পরিবহ বলছেন, ভালো আছেন তিনি। পাশ থেকেই এরপরেই একজন জিজ্ঞাসা করেন, “খেয়েছ?” একটু থেমে পরিবহ-র জবাব, “খেতে পারছি”। এ বার অভয় বাণী দেন পাশের ওই ব্যক্তি। বলেন, “চিন্তা কোরো না। সব ঠিক হয়ে যাবে। তুমি ভালো হয়ে যাবে। বড্ড চিন্তায় ফেলে দিয়েছিলেন আমাদের। আশীর্বাদ করি অনেক বড় ডাক্তার হও তুমি।” তবে পাশের ব্যক্তির অভয় বাণীতেও পরিবহ আশ্বস্ত হতে পারলেন কই! হাবভাব বুঝিয়ে দিচ্ছে, সাংঘাতিক মানসিক আঘতে রয়েছেন তিনি। হয়তো প্রতি মুহূর্তে বুঝতে পারছেন মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছন।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ঘণ্টা দুয়েক ধরে অস্ত্রোপচার হয়েছে পরিবহ-র। মাথার খুলিতে গুরুতর চোট পেয়েছিলেন তিনি। করোটির সামনের একটা অংশ তুবড়ে ভিতর দিকে ঢুকে গিয়েছিল। ডাক্তারি পরিভাষায় একে বলে ‘কমপাউন্ড ডিপ্রেস্ড ফ্র্যাকচার অব স্কাল’। তবে আপাতত সুস্থ রয়েছেন পরিবহ। অস্ত্রোপচারের পর নিজেই খাবার খেয়েছেন তিনি। স্বাভাবিক ভাবেই কথাও বলেছেন। সোমবার রাত থেকেই মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছিলেন ডোমজুড়ের বাসিন্দা পরিবহ মুখোপাধ্যায়। জয়েন্টে ভালো র্যাঙ্ক করে দু’চোখে একরাশ স্বপ্ন নিয়ে ডাক্তার হতে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু আচমকাই তাঁর স্বপ্নে লেগে গিয়েছিল রক্তের দাগ। এনআরএস-এর রোগীর মৃত্যুর ঘটনা তো অনেক দূরের কথা, ওই বৃদ্ধের চিকিৎসার সঙ্গেও কোনও ভাবে যুক্ত ছিলেন না পরিবহ। সতীর্থরা জানিয়েছিলেন, “শুধুমাত্র সিস্টেমের শিকার ও। অকারণে মার খেয়েছে।”
এ হেন লজ্জাজনক ঘটনার প্রতিবাদে গর্জে উঠেছে এনআরএস। সমর্থন জানিয়েছেন, রাজ্যের সমস্ত সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ইন্টার্ন এবং জুনিয়র ডাক্তাররা। পাশে দাঁড়িয়েছেন সিনিয়র ডাক্তারদের একটা বড় অংশ। দাবি একটাই, “অনেক হয়েছে। আর নয়। এ বার যথাযোগ্য পদক্ষেপ নিতেই হবে প্রশাসনকে। উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে দোষীদের। নইলে অবস্থান উঠবে না।”