বলা হয় ঈশ্বর একজনই হন, দু’জন হন না। দু’শো বছরে বিদ্যাসাগরের জুড়িও পাওয়া গেল না। কারণ বিদ্যাসাগর হতে গেলে বিদ্যার সাগর যেমন হতে হয়; অক্ষয় মনুষ্যেত্বর অধিকারী দয়ার সাগরও হতে হয়; আর থাকতে হয় অজেয় পৌরুষত্ব। এই ত্রিনয়ন না থাকলে বিদ্যাসাগর হওয়া যায় না। হাজার বছর খুঁজলেও পাওয়া যাবে না।
বিদ্যের জাহাজ আজকাল অনেক প্রতিষ্ঠানে মেলে, কেউ সত্যিকারের জাহাজ, কেউ আবার স্বঘোষিত মালবাহী জাহাজ। কেউ পিএইচডি, ডিএসসি/ডিলিট; কেউ এমডি, ডিএম। কখনও দানধ্যান করতে বাধ্য হলে ভেতরের পকেট থেকে কায়ক্লেশে দশ টাকার নোট বহুকষ্টে বার করতে হয়, মাইনের পুরো টাকাটাই রকমারি ইনভেস্টমেন্টে খাটে। অজেয় পৌরুষত্ব তো কল্পনায় আনা যায় না! লাল, সবুজ, নীল-সাদা নানান রঙশক্তির কাছে যত্ন-পুরুষ নিজেকে হারিয়ে ফেলেন, তাই বিদ্যাসাগর হয়ে ওঠা অধরাই থেকে যায়।
বিচারের শেষ সাফল্যে হয় — এটি পাশ্চাত্য ধারণা; বিচারের শেষ মনুষ্যত্বের মধ্যে – এটি প্রাচ্যের ধারণা। দুটি ধারণাতেই প্রতিদ্বন্দ্বীহীন-প্রথম তিনি। এই দুশো বছরে একবারও অন্যথা হয় নি। তাঁর স্নিগ্ধ মুখপানে চাইবার পরেও যারা হাতুড়ি মেরে মূর্তি ভাঙ্গেন, তারা কোনো শুভকাজে সেই হাতুড়ি তুলে দাঁড়াতে পারবেন তো? যে হাতুড়ি বিদ্যাসাগরের গায়ে পড়েছে, সে হাতুড়ি অক্ষয় হবে তো? মানে হাতুড়ি ও হাতুড়ে — দুজনেরই বঙ্গোপসাগরে সলিল সমাধি হবে। তার চাইতেও বড় পাপ বিদ্যাসাগরকে মেলার মাঠে হাজির করিয়ে নিজের দলবাজি করা। ব্যক্তি হলে কাউকে হয়তো দলীয় কাঠামোয় আষ্টেপৃষ্টে দাদাবাবু, কাকাবাবুদের মতো তোতাকাহিনী পড়ানো যায়; কিন্তু বিদ্যাসাগর তো ব্যক্তিই নন, তিনি একটি আস্ত প্রতিষ্ঠান, একটি গোটা প্রতিষ্ঠানকে গিলে খাওয়া যায় না, সহজ কথা নয়।
ক্রমশ….
আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো কল্যাণ গৌতমের লেখা পড়ুন।
কল্যাণ গৌতম (Kalyan Gautam)