বিহারের দশরথ মাঝির কথা নিশ্চয়ই মনে আছে। সরকারি সাহায্য চেয়েও পাননি। তাই সবরকম সাহায্যের আশা ত্যাগ করে নিজেই পাহাড় কেটে রাস্তা তৈরির কাজ শেষ করেছিলেন। অনেকটা তেমনই দৃশ্য এবার চোখে পড়ল অন্ধ্রপ্রদেশে। বছরের পর বছর প্রশাসনের কাছে রাস্তা তৈরির দাবি করেছেন স্থানীয়রা। কিন্তু কপালে কেবল জুটেছে বঞ্চনা। তাই নিজেদের ভাল থাকার ব্যবস্থা নিজেরাই বের করে নিলেন তাঁরা। গয়না বিক্রি করে টাকা তুলে নেমে পড়লেন রাস্তা তৈরির কাজে।
অন্ধ্রপ্রদেশ (Andhra Pradesh) ও ওড়িশা সীমান্তের কাছে চিন্তামালা নামের ছোট্ট একটি গ্রাম। কোডামা পঞ্চায়েতের আওতাভুক্ত গ্রামে মূলত আদিবাসী সম্প্রদায়ের বাস। পঞ্চায়েতের কাছে তাঁদের একটাই অনুরোধ ছিল। গ্রাম থেকে বাস রাস্তা পর্যন্ত একটা সংযোগকারী রাস্তা দরকার। যাতে সহজেই প্রয়োজনে শহরাঞ্চলে পৌঁছে যাওয়া যায়। সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে এ বিষয়ে মিলেছে প্রতিশ্রুতিও। কিন্তু সেখানেই শেষ। বাস্তবায়িত হয়নি রাস্তা নির্মাণের কাজ। তাই শেষমেশ হাল ছেড়ে নিজেরাই রাস্তা তৈরির উদ্যোগ নেন গ্রামবাসী। প্রতেকের কাজ থেকে দু’হাজার টাকা করে তোলা হয়। তাতেই উঠে আসে ১০ লক্ষ টাকা। তার জন্য অবশ্য অনেককে নিজের যেটুকু গয়না ছিল, তাও বিক্রি করে দিতে হয়।
স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, তাঁদের সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হয় বর্ষাকালে। প্রবল বৃষ্টিতে অন্যান্য এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ফলে চিকিৎসা বা অন্যান্য জরুরি পরিষেবার ক্ষেত্রে গ্রাম থেকে শহরাঞ্চলে পৌঁছনো একপ্রকার অসম্ভব হয়ে পড়ে। পায়ে হেঁটে জঙ্গল আর টিলা পেরিয়ে ৫ কিলোমিটার পার হওয়ার পর আসে বাস রাস্তা। সেখান থেকে পাওয়া যায় গাড়ি। আন্দাজ করাই যায় অন্তঃসত্ত্বা বা মুমুর্ষু রোগীকে নিয়ে কতখানি নাজেহাল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
স্বাধীনতার ৭৩ বছর পরও এই সমস্যা থেকে মুক্তি না মেলায় নিজেরাই ওই পাঁচ কিলোমিটারের দূরত্ব পূরণে একজোট হয়েছেন গ্রামবাসীরা। টিলা কেটে তৈরি হচ্ছে রাস্তা। এমন খবর কানে যেতে একটি ট্রাইবাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি আর্থিকভাবে গ্রামটির পাশে দাঁড়িয়েছে। এতো সবের পরও কি প্রশাসনের ঘুম ভাঙল? উত্তর মিললে নিশ্চয়ই জানানো হবে।