আইএসএল ডার্বি আবার বাগানের, লড়েও পারল না পেনাল্টি থেকে বঞ্চিত ১০ জনের লাল-হলুদ

সকালটাই পরিষ্কার করে দিয়েছিল দিনের শেষটা কেমন হবে। ম্যাচের শুরুতে ফুটবলারদের গা গরম হওয়ার আগেই এগিয়ে যায় মোহনবাগান। জেমি ম্যাকলারেনের সেই গোলের ধাক্কা সামলাতে পারল না ইস্টবেঙ্গল। সারা ম্যাচ জুড়ে অনেক চেষ্টা করল তারা। গোল করার মতো পরিস্থিতিও তৈরি হল। কিন্তু কাজের কাজটাই হল না। রেফারির সিদ্ধান্ত নিয়েও প্রশ্ন উঠল। ন্যায্য পেনাল্টি থেকে বঞ্চিত হল ইস্টবেঙ্গল। সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে লাল-হলুদ সমর্থকেরা অখুশি হলেও ম্যাচের ভাগ্য বদলাল না। প্রথম লেগের পর দ্বিতীয় লেগেও ডার্বি জিতল মোহনবাগান। আইএসএলে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে খেলা ১০টি ডার্বির মধ্যে ন’টিই জিতল তারা। ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের জয়ের আনন্দ দিতে পারল না। তবে মোহনবাগান জিতলেও তাদের খেলা নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠল। ইস্টবেঙ্গল তাদের সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে ছবিটা অন্যও হতে পারত। এই জয়ের ফলে ১৫ ম্যাচে ৩৫ পয়েন্ট মোহনবাগানের। আইএসএলের পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে নিজেদের জায়গা আরও পাকা করল সবুজ-মেরুন। ১৫ ম্যাচে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে ১১ নম্বরেই থেকে গেল লাল-হলুদ।

শুরুতেই ধাক্কা ম্যাকলারেনের

ম্যাচের শুরুতেই ইস্টবেঙ্গলকে ধাক্কা দেন ম্যাকলারেন। দ্বিতীয় মিনিটে গোল করেন তিনি। সেই গোলের ক্ষেত্রে অবশ্য ভুল ইস্টবেঙ্গল রক্ষণের। আশিস রাইয়ের পাস পায়ে লাগাতে পারলেন না হিজাজি মাহের। ম্যাকলারেন ঠিক জায়গায় ছিলেন। হেক্টর ইয়ুস্তেকে ঘাড়ের কাছে নিয়ে ঠান্ডা মাথায় গোল করলেন তিনি। কিছু করার ছিল না লাল-হলুদ গোলরক্ষক প্রভসুখন গিলের।

চাপ বাড়াতে থাকে মোহনবাগান

দু’মিনিটের মাথায় গোল পেয়ে যাওয়ার পর থেকে চাপ বাড়াতে শুরু করে বাগান। চাপে পড়ে যায় লাল-হলুদ রক্ষণ। বার বার তাদের বক্সে বল আসতে থাকে। কয়েকটি সুযোগও পেয়ে যায় বাগান। কিন্তু গোলের মুখ খুলতে পারেনি তারা।

প্রতি-আক্রমণে সুযোগ নষ্ট ক্লেটনের

তার মাঝেই প্রতি-আক্রমণ থেকে বল পেয়ে যান ক্লেটন। পিভি বিষ্ণুর একক দক্ষতায় বল পান তিনি। দিয়ামানতাকোসের সঙ্গে ওয়ান টাচ খেলে বক্সে ঢোকেন। কিন্তু তিনি শট মারার আগেই টম অলড্রেড বল বার করে দেন। ফলে গোল হয়নি।

নিশ্চিত গোল নষ্ট মনবীরের

ম্যাচের ২১ মিনিটের মাথায় দ্বিতীয় গোল করতে পারত বাগান। বক্সের মধ্যে অরক্ষিত জায়গায় বল পেয়ে যান মনবীর। সামনে গোলরক্ষক প্রভসুখন একাই ছিলেন। কিন্তু মনবীর সরাসরি তাঁর হাতে মারেন। যে সুযোগ মনবীর ফস্কালেন তা অপরাধ।

খেলা মন্থর করে নিজেরাই চাপে পড়ল বাগান

২০ মিনিটের পর খেলার গতি কমিয়ে দিল বাগান। অথচ তখন সবুজ-মেরুন এগিয়ে। সুতরাং তাদের আরও আক্রমণাত্মক হওয়া উচিত ছিল। কী কারণে যে তারা খেলা মন্থর করে দিল, তার কারণ বোঝা গেল না। গতি কমানোয় নিজেরাই চাপে পড়ে গেল বাগান। ইস্টবেঙ্গল অনেক বেশি বল পেতে শুরু করল। আত্রমণও বাড়ল তাদের। প্রথমার্ধের বাকি সময়ে বেশ কয়েক বার সুযোগও তৈরি করল তারা। কিন্তু বাগানের রক্ষণ জমাট থাকায় গোল হয়নি।

রক্ষণ-আক্রমণে দাপট বিষ্ণুর

ইস্টবেঙ্গলের হয়ে নজর কাড়লেন পিভি বিষ্ণু। তাঁকে যেমন আক্রমণে দেখা যাচ্ছিল, তেমনই রক্ষণেও। বক্স থেকে বক্সে খেলছিলেন তিনি। অন্তত দু’জন ফুটবলারের কাজ করছিলেন। বিষ্ণু আশা জোগাচ্ছিলেন লাল-হলুদ সমর্থকদের।

ন্যায্য পেনাল্টি থেকে বঞ্চিত ইস্টবেঙ্গল

প্রথমার্ধের শেষ দিকে রেফারির সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠল। বক্সের মধ্যে হাতে বল লাগান মোহনবাগানের আপুইয়া। পেনাল্টির আবেদন করেন লাল-হলুদ ফুটবলারেরা। কিন্তু রেফারি তাতে সাড়া দেননি। রিপ্লেতে স্পষ্ট দেখা যায়, আপুইয়ার হাতে বল লেগেছিল। সেই সময় ইস্টবেঙ্গল পেনাল্টি পেয়ে গেলে খেলার ছবিটা বদলে যেতে পারত।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে চাপ ইস্টবেঙ্গলের

দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে চাপ বাড়াতে শুরু করে ইস্টবেঙ্গল। সুযোগও পান ক্লেটন। কিন্তু গোলে বল রাখতে পারেননি তিনি। তার পরেও চাপ কমায়নি লাল-হলুদ। ফলে চাপে পড়ে যায় বাগান। কিন্তু তাদের রক্ষণ সজাগ ছিল। গোলে বল জড়াতে পারেনি ইস্টবেঙ্গল।

শৌভিকের লাল কার্ড চাপে ফেলল লাল-হলুদকে

খেলার ৬৩ মিনিটের মাথায় লাল কার্ড দেখলেন শৌভিক চক্রবর্তী। প্রতি-আক্রমণ থেকে বল পেয়ে এগোচ্ছিলেন লিস্টন। শৌভিক ছাড়া কোনও লাল-হলুদ ডিফেন্ডার তাঁর সামনে ছিলেন না। বাধ্য হয়ে ট্যাকল করতে গিয়ে ফাউল করেন শৌভিক। ফলে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড, অর্থাৎ লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন তিনি। ১০ জনে হয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল। বাধ্য হয়ে আক্রমণ ভাগের ফুটবলার ডেভিডকে তুলে মাঝমাঠে মহেশ নাওরেমকে নামান লাল-হলুদ কোচ অস্কার ব্রুজ়ো।

১০ জনের ইস্টবেঙ্গলও চাপে রাখল বাগানকে

১০ জনে হয়ে গেলেও চাপ কমায়নি ইস্টবেঙ্গল। রক্ষণের ফুটবলার তুলে আক্রমণভাগের ফুটবলার নামান কোচ ব্রুজ়ো। ফলে শেষ দিকে তাদেরই আক্রমণ বেশি ছিল। এক জন ফুটবলার বেশি থাকলেও চাপ বাড়ছিল বাগানের উপর। প্রায় পুরো খেলায় হচ্ছিল সবুজ-মেরুন বক্সে। আক্রমণ করলেও কাজের কাজটা করতে পারল না লাল-হলুদ। গোলটাই এল না। ফলে চাপ রেখেও কোনও সুবিধা হল না। প্রশংসা করতে হবে মোহনবাগানের রক্ষণেরও। অলড্রেজ, শুভাশিসদের জমাট রক্ষণ ভাঙতে পারেনি প্রতিপক্ষ।

অনবদ্য প্রভসুখন

প্রথম গোলের ক্ষেত্রে কিছু করার ছিল না প্রভসুখনের। তার পরেও বাগান গোল করতে পারত। কিন্তু প্রভসুখনের দস্তানায় আক্রমণ থমকে যায়। অন্তত দু’বার নিশ্চিত গোল বাঁচান তিনি। কিন্তু তার পরেও হাসিমুখে মাঠ ছাড়তে পারলেন না তিনি। হেরেই ফিরতে হচ্ছে লাল-হলুদ গোলরক্ষককে।

শেষ হাসি মোহনবাগানের

ডার্বিতে সাধারণত যে মানের খেলা দেখা যায় তা দেখা গেল না এই ম্য়াচে। হতে পারে দর্শক কম থাকার কিছুটা প্রভাব ফুটবলারদের উপর পড়ল। তবে শেষ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ৩ পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়ল বাগান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.