ত্রিধাবিভক্ত Narrative, নৈতিক দেউলিয়াপনারই বহিঃপ্রকাশ!

দুর্নীতি!
দুর্নিতী কথাটি স্বাধীনতা লাভের পর জওহরলাল নেহরুর পথপ্রদর্শিত ভারতবর্ষের সাথে এমন অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িয়ে গিয়েছে যে ২০১৪ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত এই পাঁচ বছরের শাষণকালে যে বড় কোন কেন্দ্রীয় দুর্নীতি ধরা পড়েনি, এটা একটি রাজনৈতিক দল ফলাও করে প্রচার করে ২০১৯ এ বিপুল ভোটে জয়ী হয়; স্পষ্টতই ভারতবর্ষের সাধারণ জনমানসে আজ দুর্নীতি খুব সাধারণ এবং স্বাভাবিক পক্রিয়া এবং স্বচ্ছ দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন ভারতের নাগরিক সমাজের কাছে একটি অলীক পাওনামাত্র। ছেলেবেলা থেকেই হাওলা, গাওলা, বোফোর্স ইত্যাদি শব্দগুলো আমাদের শৈশবের স্মৃতিকোঠায় গভীরভাবে যুক্ত হয়েছে, সে আমরা ঐ শব্দগুলোর গুরুত্ত্ব সম্পর্কে অবহিত হই বা নাই হই। সবথেকে বড়ো কথা সুদূর অতীতের হাওলা, গাওলা, বোফোর্স কেলেঙ্কারির গভীরতা আমাদের অবচেতন মনে যতটা নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করেছে, ঐ কেলেঙ্কারীর মদতদাতাদের এমন কোন শাস্তিপ্রাপ্তির খবরই আমরা পাইনি যা আমাদের মনকে ইতিবাচকভাবে আলোড়িত করতে পারে।

যদিও ইতিপূর্বে আমাদের রাজ্যে‌ ১৯৮০ সালে প্রকাশ্যে আসা সঞ্চয়িতা চীট ফান্ড মামলাতে বহু মানুষ (১.৩১ লক্ষ্য) সর্বশান্ত হলেও এই কেলেঙ্কারি‌ আমাদের মনকে ততটা আলোড়িত করেনি যতটা করেছে বর্তমান সারদা-নারদা দুর্নীতি। স্বাভাবিকভাবেই মনে প্রশ্ন আসে এই আলোড়ন কি কোন অদৃশ্য অঙ্গুলিহেলনে নিয়ন্ত্রত হয়?

তবে এটা অবশ্যই ঠিক‌ যে Inflation Indexation করলে সঞ্চয়য়িতা মামলা আর সারদা মামলা একই বন্ধনীতে বসানো গেলেও ঐ হাওলা, গাওলা, বোফোর্স বা সাম্প্রতিক অতীতের 2G Spectrum কেলেঙ্কারির তুলানায় এই নারদা দুর্নীতি একেবারেই নগণ্য। আবার এমন অভিযোগ প্রায়শই বামপন্থী দলগুলোর তরফ থেকে তোলা হয় যে কেন্দ্রের এবং রাজ্যের শাসকদলের গোপন আঁতাতের কারণেই নাকি দোষীরা সাজা পাচ্ছে না! আবার অতি সম্প্রতি নারদা মামলাতে ৪ জন প্রভাবশালী ব্যাক্তি গ্রেপ্তার হওয়ার পর এই বামপন্থীরাই ত্রিধাবিভক্ত সেটা কৌশলগত কারণেই হোক বা বিভিন্ন সুবিধালাভের আশাতেই হোক; বামপন্থী তিন রকমের প্রচারগুলো হলো;
১) সূর্যবাবুরা Officially বলছেন যে এটা BJP এর গর্হিত রাজনৈতিক প্রতিহিংসা।
২) কিছু সিরিয়ালজীবী, Ultra Modern বা ভাঁড়ামি করে উপার্যনকারী বামপন্থীরা বলছে যে এটা Got Up.
৩) আবার গোমাংসভোক্ষক বিকাশবাবু, যিনি আবার ভোট পরবর্তী হিংসার ক্ষতিপূরণের মামলা লড়ছেন, (উনি ভালোই বুঝছেন এখন মামলা মকোদ্দমা BJP কাছ থেকেই বেশী পাওয়া যাবে) উনি উদাত্তকণ্ঠে CBI এর পদক্ষেপকে সমর্থন করছেন।

কিন্তু প্রশ্ন‌ হলো কেনো এমন ত্রিমুখী Narrative?

আসলে বামপন্থীরা নিজেরাও জানে যে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তারা বেশ কয়েকবার যুক্তফ্রন্ট হিসাবে কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতার অলিন্দে প্রবেশ করলেও, বোফোর্সের মতো কেলেঙ্কারির শাস্তিদানের আশা জাগিয়ে তাদের ক্ষমতা দখলের পর কোন‌ অদৃশ্য কারণে অভিযুক্তরাই বেকসুর প্রমানিত হয়েছে! অর্থাৎ এটা মানতেই হবে যে হয় তারা ব্যর্থ হয়েছে অথবা তারা Got Up করেছে! আবার ২০০৪ থেকে তাদের জোট সরকার UPA এই বিজয় মালিয়ার মত দুর্নীতিগ্রস্তদের বিনা Guarantee তে বিপুল পরিমাণ লোনদানই শুধু নয়; তাদের জোটসঙ্গী জনতা দল (সেকুলার) এবং কংগ্রেসের সমর্থনে যখন বিজয় মালিয়া দু দুবার রাজ্যসভার সাংসদ (২০০২ এবং ২০১০) নির্বাচিত হন এই বামপন্থীরা একটা টুঁ শব্দও করেনি, এদের গাত্রদাহ তখনই শুরু হয় যখন গ্রেপ্তারি এড়াতে UPA সরকারেরই প্রদান করা Diplomatic Passport এর বলে বিজয় মালিয়া বিদেশে পলায়ন করতে সমর্থ হয়!

বাম-কংগ্রেরের জোট অর্থাৎ UPA আমলে এমন সমাজবিরোধী তথা দুর্নীতিগ্রস্তদের সুবিধার্থে CBI এর মতো এজেন্সিগুলোকে এতোটাই নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়েছিলো যে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টও সেসময়ে বিরক্তি প্রকাশ করে CBI কে “খাঁচায় বন্দী তোতাপাখি” বলে পর্যবেক্ষন করেছিলেন।

আবার উল্টোদিকে ২০১৪ সালে মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর A Raja কেও জেলে যেতে হয়েছে এবং ২ বছর পর কোর্টের নির্দেশে তদন্তভার পাওয়ার পরেও সারদা মামলায় প্রভাবশালী মন্ত্রী মদন মিত্র, তৃণমূলের লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যসভার নেতা তথা Spokesperson কুনাল ঘোষ সহ‌ বেশ কিছু সাংসদই দীর্ঘদিন শ্রীঘরে থাকতে বাধ্য হয়েছেন। আবার রাজীব কুমারের মতো আধিকারিক গ্রেপ্তারি এড়াতে নিরবিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন কোর্টের দরজায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

রাজীব কুমার কান্ডের অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ CBI যখন তদন্তের ফাঁস আরো দৃঢ় করছে ঠিক তখনই নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে মরিয়া বামপন্থীরা মিথ্যা Narrative এর অঙ্গুলিহেলনে মানুষের আবেগকে বিপথগামি করার চক্রান্তে নিয়োজিতো হয়েছেন।

ভারতীয় সংবিধানের দন্ডবিধি অনুযায়ী প্রভাবশালীদের দন্ডদান যে কতোটা কঠিন এবং কতোটা দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া তা আমরা সকলেই জানি, কিন্তু এতদিন CBI এর নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তোলা বামপন্থী হায়নারা আজ যতোই ত্রিধাবিভক্ত Narrative এ মানুষের আবেগকে নিজেদের স্বার্থে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করুক না কেনো CBI এর পদক্ষেপকে Officially কখোনো Got up আবার কখনো রাজনৈতিক প্রতিহিংসা হিসাবে বিবৃতি তাদের নৈতিক দেউলিয়াপনারই বহিঃপ্রকাশ।

দ্বৈপায়ন ভারতীয়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.