কাশিমবাজারে ত্রাতা বীর সাধক রবিন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বা রবিঠাকুরের বীরত্বের কাহিনি যা আমাদের কাছে অজ্ঞাত থেকে গেছে

রবিন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের নাম শুনেছেন? আশাকরি শোনেনি, কিন্তু এই সামান্য নামের ব্যক্তির অসামান্য কর্মকাণ্ড যারা জানেন তারা সহজে এই নাম ভুলতে পারবেনা।

রবিন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় যাকে মুর্শিদাবাদের মানুষ রবিঠাকুর নামে এক ডাকে চেনেন আজ তাঁর ব্যাপারে সামান্য আলোকপাত করতে চাই। রবিন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় মুর্শিদাবাদ জেলার কাশিমবাজার অঞ্চলের এক প্রাক্তন জমিদার বংশের ছেলে। তার জন্ম গ্রহণ বা জীবন সম্পর্কে আমার তেমন জ্ঞান নেই, কিন্তু তার একটি অসাধারণ কর্মকাণ্ডের বিষয় আমি কিছুদিন আগে অবগত হয়ে স্তম্ভিত ও মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে গেছি।

রবিন্দ্রনাথ বাবু একজন অকৃতদার শাক্ত সাধক, কাশিমবাজার রেলস্টেশন সংলগ্ন আনন্দময়ী কালিবাড়ি ছিল তাঁর সাধনার স্থল।একজন সাধারণ শাক্ত সাধকের মতোই সাধারণ ছিল তাঁর জীবন।কিন্তু তিনি বিখ্যাত হন যে কর্মকাণ্ডের কারণ সেটা এখন বলি।

ঘটনা ১৯৮৮ সালের, মুর্শিদাবাদের কাটরা মসজিদ সংক্রান্ত। সেইসময় সংখ্যাগুরু মুস লিম জেলা মুর্শিদাবাদের উগ্র মুস লিম সংগঠন গুলি কাটরা মসজিদ সাধারণ মুস লমানদের অধিকারের জন্য জঙ্গি আন্দোলন শুরু করেছিল।যদিও প্রশাসনের তরফে কাটরা মসজিদ রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি হিসাবেই রাখবার প্রচেষ্টা করে যাচ্ছিল।

মুস লিম সংগঠন গুলি এই কারণে রাজ্যজুড়ে প্রচার চালাচ্ছিল এই উদ্দেশ্য সফলের জন্য মুস লিম সংগঠন থেকে জনাব ইয়াহিয়া নামের এক জঙ্গি নেতা ২৪ জুন ১৯৮৮ সালে শুক্রবার কাটরা মসজিদে একটা জমায়েতের আহ্বান জানায় তাদের উদ্দেশ্য ছিল স্থানীয় মুস লিমরা চুপ থেকে বাইরে থেকে মুসলিম জনতা এনে কাটরা মসজিদ দখল করা।

এই কারণে তারা রচনা করে বৃহত্তর ষড়যন্ত্র। মুর্শিদাবাদের জলঙ্গী সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ করায় কয়েক হাজার বাংলাদেশি মুসলিমকে।বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা পভারতে প্রবেশ করে প্রথমে ছড়িয়ে পরে তারপর ঘটনারদিন মানে ২৪শে জুন ১৯৮৮ সালে সকালে ট্রেনে করে রওনা হয় মুর্শিদাবাদের উদ্দেশ্যে। অনুপ্রবেশকারীরা ভুল করে নেমে পরে মুর্শিদাবাদের আগের রেলস্টেশন কাশিমবাজারে,নেমেই শুরু করে সংঘবদ্ধ আক্রমণ। হিন্দু দোকান, বাড়িঘর ভাঙতে ভাঙতে প্রচুর হিন্দুকে আক্রান্ত করে তারা প্রবেশ করে কাশিমবাজার শহরের অভ্যন্তরে।

ভাগীরথী পুরাতন একটি নদীখাতের পাশেই আনন্দময়ী মন্দির, রবিন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় সেই মন্দিরের নিত্য পূজারী। অন্যদিনের মতন সেই দিনও রবিন্দ্রনাথ তখনকার নির্মাণাধীন মন্দিরে পূজায় ব্যাস্ত ছিলেন।

জনশ্রুতি এমন, উন্মত্ত মুসলিম জনতা ক্রমে প্রবেশ করে মন্দির প্রাঙ্গণে সেইসময় রবিন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় একাগ্রচিত্তে মাতৃ আরাধনা রত ছিলেন।মুস লিমরা পিছন থেকে তাকে আঘাত করেন। তিনি একবার পিছনে ফিরে তাকান তারপর মন্দিরে রাখা বলির খর্গ হাতে তুলে নেয় জয় মা ধ্বনিতে, তারপর শুরু করেন রণতাণ্ডব প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ অনুযায়ী তাঁর তাণ্ডবের প্রকোপ ছিল ভয়ানক। যবন রক্তে লাল করে দেয় মন্দির নিকটস্থ জলাভূমি হাজার যবন আক্রমণকারীকে একাই শেষ করে জলে ভাসিয়ে দেন আর রক্ষা করেন কাশিমবাজারের হিন্দু জনসাধারণকে। পরবর্তীকালে মন্দির নিকটস্থ জলভূমি স্থানীয় হিন্দুরা নাম দেন কাটিগঙ্গা কারণ ঐ জলেই ররবিন্দ্রনাথ কুটিকুটি করে কেটে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল আক্রমণকারী বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী মুস লিমদের।

এই ঘটনার পরে রবিন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় প্রচারের আলোতে আসেন মুস লিম আক্রমণকারীদের পরিকল্পনা বিফলে যায়। পুলিশ মামলা করে রবিন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের নামে, রাজ্য সরকার কমিশন বসায় কিন্তু কিছুই করতে পারা যায়নি রবিন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তার কারণ নিহত প্রত্যেকটি আক্রমণকারী ছিল অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশী তাদের বধের জন্য বিচার করতে গেলে সরকার ও মুসলিম সংগঠন গুলি নিজেরাই বিপদে পরতো, তাই মামলা ধামাচাপা দেওয়া হয়। উগ্র মুস লিম সংগঠনের পরিকল্পনা বিফল হয়।

এই হল কাশিমবাজারে ত্রাতা বীর সাধক রবিন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বা রবিঠাকুরের বীরত্বের কাহিনি যা আমাদের কাছে অজ্ঞাত থেকে গেছে। আজ আমি এই মহান মানুষকে হৃদয়ে অন্তস্থল থেকে জানাই শতকোটি প্রণাম আর কামনা করি আমাদের হৃদয় যেন তার বীরত্বের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয় আমরা যেন প্রয়োজনে রুদ্রমূর্তি ধারণ করতে সক্ষম হই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.