মহারাজা বিক্রমাদিত্য দ্বারা রাম মন্দির নির্মাণ।

*ধর্মশাস্ত্র অনুসারে বলা হয় যে ,রাম যখন দেহত্যাগ করে দিব্যধামের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন ‚ সমস্ত প্রাসাদ ‚মন্দির সমেত পুরো অযোধ্যা নগরীটাই তখন সরয়ূর গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। কেবলমাত্র অনুর্বর জমিগুলোই বছরের পর বছর ধরে টিকে ছিল।

*কয়েক বছর পরে মহারাজা কুশ ‚যিনি কুশবতীর (কৌশাম্বি ) শাসক ছিলেন ‚ আবার অযোধ্যায় ফিরে এসে পুনরায় বসতি স্থাপন করেন। কালিদাসের ‘রঘুবংশম’ এ এই ঘটনাটির ​​উল্লেখ আছে।

*লোমশ রামায়ণ অনুসারে মহারাজা কুশ রাম জনভূমির উপর কসৌতি পাথরের স্তম্ভ ব্যবহার করে একটি মন্দির নির্মাণ করেন।

জৈন ধর্মগ্রন্থে লেখা আছে ঋষভদেব পুনরায় অযোধ্যাতে বসতি স্থাপন করেছিলেন।

ভবিষ্য পুরাণ অনুসারে ‚উজ্জয়িনীর শাসক মহারাজা বিক্রমাদিত্য মোক্ষদায়িনী সপ্তপুরী নামে সাতটি পবিত্র শহরকে বসবাসযোগ্য করে তোলেন। অযোধ্যা ছিলো তাদের মধ্যে অন্যতম। খ্রিস্টপূর্ব ৫৭ সালে উজ্জয়িনীর রাজা বিক্রমাদিত্য সিংহাসনে আরোহণ করেন,তাঁর রাজ্যাভিষেকের দিন থেকেই বিক্রম সম্বত গণনা শুরু হয় ।

মহারাজা বিক্রমাদিত্যের আগে অযোধ্যা আরেকবার জনশূন্য হয়ে পড়ে। গ্রন্থের বর্ণনা অনুসারে‚ তিনি লক্ষ্মণঘাটকে ভিত্তি হিসাবে ধরে বিভিন্ন স্থান চিহ্নিত করে ৩৬০টি মন্দির নির্মাণ করেন। তিনি রামকোট-রামজন্মভূমি, নাগেশ্বরনাথ মন্দির, মণির্বত এবং আরও অন্যান্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করেছিলেন ।

*ভগবান বিষ্ণুর ধর্মপ্রাণ ভক্ত হিসাবে রাজাবিক্রম আদিত্য বিষ্ণুপদ পর্বতে বিষ্ণুধ্বজ স্থাপন এবং শ্রী রাম জন্ম্ভভূমীতে একটি বড় মন্দির নির্মাণ করেন।

*রাম জন্মভূমির উপরে সালার মাসুদের আক্রমণ এবং রাজা সুহাইললদেব এর হাতে তার মৃত্যু *

হানাদার সালার মাসুদ ১০৩৩ খ্রিস্টাব্দে সাকেতে (অযোধ্যা) শিবির স্থাপন করেছিলেন। তখন তিনি জন্মভূমির একটি বিখ্যাত মন্দিরকে ধ্বংস কর দেন।

মন্দির ধ্বংসের পরে ফেরার পথে সালার মাসুদ বাহরাইচে বীর রাজা সুহাইলদেবের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন এব ১৪ ই জুন ১৩৩৩ সালে প্রচন্ড লড়াইয়ে পর তাঁর হাতে নিহত হন।

রাজা সুহাইলদেওর সাথে ভয়াবহ যুদ্ধের ফলে আক্রমণকারীরা এতটাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল যে তারা পরবর্তী কয়েক বছর আর ভারতের মাটিতে পা রাখারই সাহস পায়নি।

*গাহরোয়াল রাজবংশের রাজারা আবার মন্দিরটি নির্মাণ করে দেন।

বাবরের অযোধ্যা আক্রমণ

১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে বাবর অযোধ্যায় এসে সরয়ূর অপর পাড়ে শিবির করেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন ভারত জয় করার উদ্দেশ্যে তাঁর ধর্মীয়স্থান গুলি পরিদর্শন করতে।

তিনি অযোধ্যায় অবস্থিত রাম জন্মভূমি মন্দির ধ্বংস করতে চান‚ কারণ তিনি ভেবেছিলেন এই ঘটনা অবশ্যই হিন্দু যোদ্ধাদের মনোবলকে নষ্ট করে দেবে ।

ফলে‚ বাবর তার কমান্ডার মীর বাকীকে নির্দেশ দেন জন্মভূমি মন্দিরটি ভেঙে দেওয়ার জন্য।

১৫২৮ সালে মীর বাকী জন্মভূমি মন্দিরটি ভেঙে সেখানে একটি মসজিদ নির্মাণের চেষ্টা করেন ‚ কিন্তু হিন্দুদের প্রবল প্রতিরোধের ফলে তার এই দুরভিসন্ধি সফল হতে পারেননি।

*এ কারণেই না কোনে মিনারেট বা না ওজুর জন্যে জায়গা ‚কিছুর সেখানে তৈরি করা যায়নি। সুতরাং এটি কোনো মসজিদ নয় ‚এটি কেবল একটি কাঠামো মাত্র ছিল।

*কাঠামোর বাইরে পাথরে কিছু শব্দ খোদাই করা ছিল ‚ পারসিক ভাষায় যার অর্থ হয় “দেবদূত দের অবতরণের স্থান !” এটি এই জায়গাটিকে জন্মভূমি বলেই প্রমাণ করে।

*অন্য এক জায়গায় সেটিকে সীতার রান্নার জায়গা বলেও লেখা ছিলো। ক্রমাগত আক্রমণ এবং যুদ্ধের ফলে অযোধার অনেক জায়গা জনশূন্য হয়ে গিয়েছিলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.