সুব্রতকে ভর্ৎসনা রাজ্যপালের, মন্ত্রীরা কি অজ্ঞ, এমন কথা বলেন কী করে!

চব্বিশ ঘন্টা আগেই রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়কে কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনীর নিরাপত্তা দিয়েছে মোদী সরকার। যার বার্তা ছিল স্পষ্ট, বাংলার পুলিশের উপর আস্থা নেই খোদ রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানেরই।

শুক্রবার অনাস্থার পারা আরও একধাপ চড়িয়ে দিলেন সেই তিনি। বললেন, তাঁর ভূমিকা সম্পর্কে রাজ্যের একাধিক মন্ত্রী যে মন্তব্য করছেন তা দুর্ভাগ্যজনক।

এ দিন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক বৈঠক ছিল। রাজ্যপাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য। তাই তিনি গিয়েছিলেন। সেখান থেকে বোরোনোর সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন ধনকড়।

তিনি বলেন, আমার নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে কিছু বলছি না। কিন্তু এই রাজ্যেরই প্রবীণ মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় আমার নিরাপত্তার ব্যাপারে কিছু মন্তব্য করেছেন শুনেছি। উনি বলেছেন, রাজ্যপাল নিরাপত্তার অভাব বোধ করলে দিল্লিকে না জানিয়ে রাজ্য সরকারকেই তা জানাতে পারতেন। এটা রাজ্য সরকারেরই কাজ। এ কথা বলেই রাজ্যপাল বলেন, “রাজ্য সরকারকে আমি সব জানিয়েছি। আমার সঙ্গে রাজ্য সরকারের কী কথা হয়েছিল তা বাইরে বলতে পারব না। সাংবিধানিক পদে থেকে আমি অসংলগ্ন কথা বলতে পারি না। কিন্তু উনি (পড়ুন সুব্রতবাবু) কী জানতেন না সরকারের সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল? তা না জেনে এ সব কথা বাইরে বলা কি ঠিক?”

প্রসঙ্গত, রাজ্যপালের নিরাপত্তায় কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েনের ঘটনাকে নিয়ে বৃহস্পতিবার সমালোচনা করেছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেছিলেন, পঞ্চাশ বছরের সংসদীয় রাজনীতিতে এমনটা কখনও দেখিনি। বাংলায় কি পুলিশের অভাব যে উনি সোজা দিল্লিতে গিয়ে নিরাপত্তা চাইলেন। পরে ঘরোয়া আলোচনায় তৃণমূলের নেতারা বলেছিলেন, রাজ্যপাল পুরোদস্তুর রাজনীতি করছেন। সাংবিধানিক ভাবে বাংলায় তাঁরই সরকার চলছে। বিধানসভা দাঁড়িয়ে রাজ্যপাল বক্তৃতায় বলেন, ‘আমার সরকার..’। সেই সরকারের পুলিশি ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলে রাজ্যপাল কী প্রমাণ করতে চাইছেন সবাই বুঝতে পারছে।

শুধু সুব্রতবাবুর সমালোচনা করে থামেননি রাজ্যপাল। নাম না করে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়েরও সমালোচনা করেন তিনি। ধনকড় বলেন, আমার শিলিগুড়ি সফর নিয়ে এই রাজ্যেরই মন্ত্রী বিবৃতি দিয়ে যে সব মন্তব্য করেছিলেন, তা কি রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানের বিরুদ্ধে করা যায়? তাঁর কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী তাঁর মন্ত্রীদের কী ভাবে সামলাবেন সেটা তাঁর ব্যাপার। তা নিয়ে আমি কিছু বলব না। কিন্তু এ টুকু বলতে পারি সাংবিধানিক ভাবে আমি কোনও লক্ষণরেখা অতিক্রম করিনি”। রাজ্যপাল কিছুটা চড়া মেজাজে এও বলেন, সাংবিধানিক ভাবে রাজ্যপালের যে অধিকার রয়েছে তার মধ্যে থেকে যা যা করার তা করব। রাজ্যপাল হলেন সেই রাজ্যে দিল্লির প্রতিনিধি। এটা ভুলে গেলে চলবে না।

গতকাল নবান্নের সভাঘরে শারদ সম্মান দেওয়ার অনুষ্ঠান ছিল। সেখানে রাজ্যপালের নাম না করে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, “কেউ আমার সমালোচনা করলে তা নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। কিন্তু কোনও নেতিবাচক ভূমিকা মেনে নেব না।”
কিন্তু এ দিনও বিসর্জন-কার্নিভালের প্রসঙ্গ টেনে আনেন রাজ্যপাল। তিনি বলেন, কার্নিভালে আমন্ত্রণ জানিয়ে সে দিন যা অপমান করা হয়েছিল তা সবাই দেখেছেন। শিষ্ঠাচারের সীমার মধ্যে থেকে ওই অনুষ্ঠান মঞ্চে বসেই এ ব্যাপারে যা বলার তা আমি জানিয়েছিলাম। অনুষ্ঠানের পরেও তা জানিয়েছি। তাঁর কথায়, “রাজ্যপালের প্রচারের খিদে থাকা উচিত নয়। কেন আমাকে ক্যামেরায় দেখানো হয়নি, আমি প্রচার পাইনি সেটা আমার উদ্বেগের বিষয় নয়। আসল উদ্বেগের বিষয় হল, বাংলায় সংবাদমাধ্যমকে কি নিয়ন্ত্রণ করা শুরু হয়েছে। তা যদি হয় তা হলে তা গণতন্ত্রের পক্ষে ভয়ঙ্কর”।

এর আগে কার্নিভালের ঘটনা নিয়ে রাজ্যপাল যে দিন অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন, সে দিন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় কিন্তু পাল্টা মন্তব্য করেননি। বরং রাজভবনের সঙ্গে শঠে শাঠ্যংয়ে না গিয়ে বলেছিলেন, সব কথায় গুরুত্ব দেওয়ার দরকার নেই। এখন দেখার শুক্রবার রাজ্যপালের মন্তব্য নিয়ে সরকার বা নবান্ন কী প্রতিক্রিয়া জানায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.