হাসিনার পতনের পর দিল্লি-ঢাকার প্রথম বৈঠক সোমবার! সম্পর্কের ‘নতুন’ আভাস দিল বাংলাদেশ

৫ অগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়। তার পরে এই প্রথম দিল্লি এবং ঢাকার মধ্যে কূটনৈতিক স্তরে বৈঠক হচ্ছে। ভারত-বাংলাদেশ কূটনৈতিক টানাপড়েনের আবহে সোমবার ঢাকায় যাচ্ছেন ভারতের বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রী। দু’দেশের বিদেশসচিব পর্যায়ে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ঢাকার ওই বৈঠকে কোন কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে, তা নিয়ে কৌতুহল জন্ম নিয়েছে দু’দেশেই। আগামী দিনে ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক কেমন চাইছে বাংলাদেশ? রবিবারই তার আভাস দিয়েছেন সে দেশের তদারকি সরকারের বিদেশ উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। তাঁর মতে, ৫ অগস্ট (হাসিনার পতন)-এর পর থেকে দু’দেশের সম্পর্কে গুণগত পরিবর্তন হয়েছে। তা মেনে নিয়েই দু’দেশের সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে বলে মনে করছেন তৌহিদ।

হাসিনার পতনের পর সে দেশে অঘোষিত প্রধান রাজনৈতিক দল হিসাবে উঠে এসেছে বিএনপি। হাসিনার ভারতে সাময়িক আশ্রয় নেওয়া নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে তাদের মনে। রবিবার ভারতীয় দূতাবাসে জমা দেওয়া স্মারকলিপিতেও সে কথা জানিয়েছে খালেদা জিয়ার দল। তদারকি সরকারের বিভিন্ন উপদেষ্টারাও এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে মন্তব্য করেছেন। তার উপরে, হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে সে দেশে সংখ্যালঘুদের উপর একের পর এক হামলার অভিযোগ উঠে এসেছে। ইসক্‌নকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করতে আদালতে মামলা করেছে ইউনূসের তদারকি সরকার। যদিও তা খারিজ হয়ে গিয়েছে। সম্প্রতি সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় গ্রেফতার করেছে চট্টগ্রাম পুলিশ। সাম্প্রতিক এই ঘটনাগুলিতে ভারত-বাংলাদেশ উভয় প্রান্তেই সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।

সম্প্রতি ত্রিপুরার আগরতলায় নিরাপত্তা বেষ্টনী অতিক্রম করে বাংলাদেশের সহকারী দূতাবাসের ভিতরে প্রবেশ করেন এক দল মানু‌ষ। ওই ঘটনায় সঙ্গে সঙ্গে নিন্দা জানায় বিদেশ মন্ত্রক। অন্তত সাত জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। নিলম্বিত হয়েছেন তিন পুলিশকর্মীও। ওই ঘটনার কিছু দিন আগেই কলকাতায় বাংলাদেশের উপদূতাবাসের কাছেও বিক্ষোভ হয়েছে। যদিও বিক্ষোভকারীদের উপদূতাবাস থেকে কিছুটা দূরেই আটকে দেয় পুলিশ। পর পর এই ঘটনাগুলির মাঝেই কলকাতা ও ত্রিপুরা থেকে কূটনৈতিক মিশনের প্রধানদের বাংলাদেশে ডেকে পাঠায় ইউনূসের প্রশাসন। পরিস্থিতি নিয়ে খোঁজখবর নিয়েছে। সে ক্ষেত্রে সোমবার বিদেশসচিব পর্যায়ের বৈঠকে এই বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা হয় কি না, তা নিয়ে কৌতুহল দানা বেঁধেছে।

ভারত-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের বিষয়ে তৌহিদের ব্যাখ্যা, “৫ অগস্ট পর্যন্ত ভারতের সঙ্গে এক রকম সম্পর্ক ছিল। ৫ অগস্টের পরে সেটি পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছে। এটা বাস্তবতা।” তাঁর মতে, এই বাস্তবতার উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। রবিবার ইউনূসের বিদেশ উপদেষ্টা জানিয়েছেন, এটি একটি নিয়মিত বৈঠক। অস্বাভাবিক কিছু নয়। দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে ফলপ্রসূ আলোচনা হবে বলে আশাবাদী তিনি। উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য দু’দেশের বাণিজ্যের উপরেও প্রভাব পড়েছে বলে মত তৌহিদের। তিনি জানান, গত প্রায় দু’তিন মাস ধরে চলা ‘মন্দা’ বাংলাদেশকে তো প্রভাবিত করছেই, সঙ্গে স্বল্প পরিমাণে হলেও ভারতেও প্রভাব ফেলছে।

সোমবার ভারত-বাংলাদেশ বিদেশ মন্ত্রক পর্যায়ের আলোচনায় (ফরেন অফিস কনসাল্টেশন সংক্ষেপে এফওসি) যোগ দিতে যাচ্ছেন ঢাকায় যাচ্ছেন মিস্রী। সাধারণত এই বৈঠকগুলিতে দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন প্রকল্পের পর্যালোচনা হয়। তবে সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে দুই দেশের বিদেশসচিব পর্যায়ের বৈঠক নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক স্তরের এই বৈঠকে সে দেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয়টি উঠে আসে কি না, সে দিকেও নজর থাকছে। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল শুক্রবারও বাংলাদেশে গ্রেফতার সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণের প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, “আমাদের আশা, চিন্ময়কৃষ্ণের বিরুদ্ধে অভিযোগের স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষ বিচার হবে। তাঁর আইনি অধিকার অক্ষুণ্ণ থাকবে।”

ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বর্তমানে এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এই টানাপড়েনের আবহে আগরতলার ঘটনার পর ইউনূস প্রশাসন তলব করেছিল ভারতীয় রাষ্ট্রদূত প্রণয় বর্মাকে। বাংলাদেশ বিদেশ মন্ত্রকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল তাঁকে। এ দিকে আগরতলার ঘটনার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ হয়েছে। ভারতবিরোধী স্লোগানও উঠেছে সেখানে। পর পর এই ঘটনাগুলির জেরে দু’দেশেই একে অপরের দূতাবাস এবং উপদূতাবাসগুলির বাইরে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করেছে। এমন এক পরিস্থিতির মধ্যে সোমবার ভারত এবং বাংলাদেশের বিদেশসচিবেরা আলোচনায় বসতে চলেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.