বছর ২০ আগে কার্গিলে আড়াই মাস ধরে চলেছিল যুদ্ধ। বরফ ঢাকা পাহাড়ের মাথায় দেশরক্ষার জন্য জীবন-মরণ পণ। সেই আড়াই মাসে প্রত্যেকটা দিন একটা একটা করে ইতিহাস লেখা হয়েছে হিমালয়ের কোলে। যদিও সেই ইতিহাস তৈরি হয়েছে জওয়ানদের রক্তে, তবু সেই ইতিহাস ভারতবাসীর গর্বের।
প্রথমে সীমান্ত পার করে অনুপ্রবেশকারী ঢুকিয়ে একটু একটু করে দখল নেওয়ার চেষ্টা করেছিল পাকিস্তান। বুঝতে পেরেই ঝাঁপিয়ে পড়ে ভারতীয় সেনা। যুদ্ধের প্রায় ১১ বছর পর পাকিস্তান স্বীকার করেছিল যে তাদের অন্তত ৪৫৩ জন পাক সেনার মৃত্যু হয়েছিল কার্গিলে।
২০ বছর আগের সেই ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায়, ভারতীয় জওয়ানদের মেরে দেহ বিকৃত করে ফেরত দিয়েছিল পাকিস্তান। অথচ সেই যুদ্ধে মৃত সেই পাকিস্তানের সেনাদের দেহ সম্মানের সঙ্গে সমাধিস্থ করেছিল ভারতীয় সেনা।
যুদ্ধ শুরুর আগে ১৯৯৯-এর ১৪ মে সীমান্তে নজরদারি চালাচ্ছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী। পাক অনুপ্রবেশকারীদের হাতে মৃত্যু হয় সেই ছয় ভারতীয় জওয়ানের। তাদের দেহ বিকৃত অবস্থায় ফেরত দেয় পাকিস্তান। সেই খবরে চমকে ওঠে ভারতবাসী। জানা যায়, তাঁদের দেহ যখন ফেরত দেওয়া হয়, তখন তা চোখে দেখার মত ছিল না। চোখের মনি নেই, কান, নাক কেটে নেওয়া হয়েছে। ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছিলেন ভারতের মানুষ।
সেনাবাহিনীর তরফ থেকে জানানো হয়েছিল যে পাকিস্তানের ওই ঘৃণ্য কাজের পাল্টা হিসেবে ভারত কিন্তু কোনও কড়া জবাব দেয়নি সেইসময়। শুধু তাই নয়, সেনাবাহিনীর মুখপাত্র জানিয়েছিলেন যে সম্মানের সঙ্গে সমাধিস্থ করা হয়েছিল মৃত পাকিস্তানি সৈন্যদের।
এতদিনের যুদ্ধ ও তাতে বিপুল সংখ্যক পাক সেনার মৃত্যু হওয়ার পরও পাকিস্তান কখনও তাদের সেনা জওয়ানদের স্বীকার করেনি। তাদের দেহও গ্রহণ করেনি। তাই যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর পাক সেনাদের সমাধিস্থ করার দায় ছিল ভারতীয় সেনার। একথা স্বীকার করলে তো প্রমাণ হয়ে যেত যে কার্গিলে অনুপ্রবেশকারীরা শুধু ‘মুজাহিদীন’ ছিল না, ছিল পাক সেনাও। সরাসরি পাক সেনার যোগ ছিল, সেটা কখনও স্বীকার করেনি পাকিস্তান।
তাই যুদ্ধের পর পাক সেনাদের দেহ পাকিস্তানের পতাকায় মুড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। পাহাড়ের শক্ত পাথর খুঁড়ে তাদের সমাধির ব্যবস্থা করা হয়। প্রথমে তাদের সমাধিস্থ করার জন্য মৌলবীও খুঁজেছিল ভারতীয় সেনা। কিন্তু মৌলবী পাওয়া না যাওয়ায় সেই কাজ করেন ভারতীয় সেনার মুসলিম জওয়ানরা। তাঁরা সব রীতি মেনেই পাক সেনাদের সমাধির ব্যবস্থা করেন। সমাধিস্থলে দাঁড়িয়ে কোরান থেকে সুরাও পাঠ করেন ভারতীয় জওয়ানরা।
ভারত সরকার ও সেনাবাহিনীর বিচক্ষণতায় ভারত-পাকিস্তানের তৎকালীন পরিস্থিতি, কাশ্মীরে মুজাহিদীনদের উপস্থিতি, এসব সত্বেও ভারতের অন্দরে কোনও সাম্প্রদায়িকতার বাতাবরণ তৈরি হয়নি। দেশ জুড়েই পাকিস্তান-বিরোধী আবেগ তৈরি হয়েছিল। ভারতীয় সেনায় সেইসময় যে মুসলিম জওয়ানরা লড়েছিলেন ও শহিদ হয়েছিলেন, তাঁদের সম্মান দিয়েছিল দেশবাসী। তাঁদের গ্রামে গ্রামে শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন প্রায় সমস্ত হিন্দু পরিবার।