নিতেন দাস – এক সাম্প্রদায়িকতার বলি।

বৃদ্ধ মানুষটির নাম দীলিপ দাস। স্থানীয় অনেকের কাছেই উনি নিতেন দা নামে পরিচিত। কুমিল্লার শতবর্ষী, ঐতিহাসিক রাজ রাজেশ্বরী কালী বাড়িতে ফুল আর বেলপাতা দিতেন। সকালে ঘুম থেকে উঠে মন্দিরে ফুল আর বেল পাতা পৌঁছে দেওয়াই ছিলো তার দৈনন্দিনের কাজ।


১৩ তারিখ অষ্টমীর দিন ঠিক দুপুরে যখন একটি বড় মিছিল কালী বাড়িতে হামলা করে, তখন আমিও পরিবারের শিশু, নারী, বৃদ্ধ সদস্যদের নিয়ে ভয়ে, আতংকে দিশেহারা হয়ে মন্দিরের ভেতরে পাগলের মতো ছুটছিলাম। এদিকে হামলা ঠেকাতে, মন্দিরের মূল প্রবেশ পথে যে কয়জন প্রাণপণে গেইট লাগিয়ে হামলাকারীদের প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেছিলেন তার মধ্যে একজন ছিলেন দিলীপ দাস নিতেন।


হামলাকারীদের নিক্ষেপ করা একটি অর্ধেক ইট লেগেছিলো নিতেন দা’র মাথায়। মুহূর্তে জ্ঞান হারিয়ে ফেলা নিতন দা’কে নেয়া হয়েছিলো কুমিল্লা মেডিকেলে। অবস্থা গুরুতর দেখে তারা পাঠিয়ে দিলো ঢাকায়। অপারেশন হলো কিন্তু নিতেন দা আর জাগলেন না। আর বেলপাতা, ফুল দিতে আসবেন না মায়ের চরণে। মন্দিরের এক কোনে বসে হয়তো আর কখনো গাইবেন না, ‘কালী কালী বল রসনা।’


নিতেন দা মারা গেলেন। সাম্প্রদায়িকতা, সহিংসতা, হিংসা, ক্ষোভ, ঘৃণা, এই অসুস্থ রাষ্ট্র ব্যবস্থা, সমাজ, এমনকি প্রকৃতিও আর চাইলে ফেরত দিতে পারবে না নিতেন দা’কে। কার কাছে নিতেন দা হত্যার বিচার চাইব? বরং এই সাম্প্রদায়িকতার বলির জন্য তৈরি করতে হবে আরেকটি নিতেন দা কে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.