ধ্বংস ২০ হাজার টনের গোটা খাদ্য ভান্ডার, ভয়ঙ্কর ক্ষতির মুখে লেবানন

গত কয়েকদিন আগে প্রবল বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে লেবাননের রাজধানী বেইরুট। প্রবল এই বিস্ফোরণের ফলে অর্থনৈতিক দিক থেকে ধস নেমেছে গোটা দেশে। যা প্রতিফলিত হয়েছে এই দেশের অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রী রাউল নেহমের কথায়।

তার বক্তব্য, বেইরুটের বিস্ফোরণ পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলা করার মত অর্থনৈতিক সামর্থ্য নেই তার দেশের। তিনি এই বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য আন্তর্জাতিক সমাজকে এগিয়ে আসার জন্য অনুরোধ করেছেন। লেবাননের অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই ভয়াবহ বিস্ফোরণে শত শত কোটি ডলারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।

শুধু তাই নয়, প্রধান শস্য ভাণ্ডারটিও ধ্বংস হয়ে গিয়েছে বলএ দাবি তাঁর। ওই শস্য ভাণ্ডার ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় সে দেশে এখন যে পরিমাণ শস্য মজুত রয়েছে তাতে বড়জোর আর এক মাস চলবে বলে মনে করছে সরকারের আধিকারিকরা।

বেইরুট বন্দরের পাশে যে জায়গাটিতে প্রবল এই বিস্ফোরণ ঘটে তার ঠিক পাশের সাদা রঙয়ের বিশাল ভবনটি হল লেবাননের প্রধান খাদ্য ভাণ্ডার। দিনের পর দিন বিদেশ থেকে শস্য আমদানি করে ওই সাদা বাড়িতেই মজুত করা হতো।

বিস্ফোরণের তীব্রতায় এক লাখ ২০ হাজার টন ধারণ ক্ষমতার এই ভবনটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গিয়েছে খাদ্য ভান্ডার। আর তা সম্পূর্ণ ভাবে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কারণে কার্যত মাথায় বাজ ভেঙে পড়েছে সে দেশের আধিকারিকদের।

তবে সে দেশের অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বিশ্বের কয়েকটি দেশ ইতিমধ্যেই সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। আসলে এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহায়তা নেওয়া ছাড়া আর কোনও বিকল্প নেই। এদিকে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে চিকিৎসায় সহযোগিতা করারর প্রস্তাব দিয়েছে বলেও জানিয়েছেন লেবাননের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হামাদ হাসান।

তিনি জানিয়েছেন, বিভিন্ন দেশের পক্ষ থেকে বেইরুটেতে ভ্রাম্যমাণ হাসপাতাল তৈরির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এদিকে বেইরুটে বিস্ফোরণ-পরবর্তী পরিস্থিতিতে করোনা ভাইরাস আরও বেশি মাত্রায় ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলেও জানিয়েছেন লেবাননের স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

অন্যদিকে, লেবাননের রাজধানী বেইরুটের বন্দর সংলগ্ন এলাকায় বিস্ফোরণ ঘটেছে। আর সে জন্যে অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হতে পারে ইজরায়েল। এমনই মন্তব্য করেছেন লেবাননের অর্থনীতিবিদ জিয়াদ নাসরুদ্দিন। তার বক্তব্য, লেবাননের বেইরুট বন্দর সব সময় ইজরাইলের হাইফা বন্দরের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখা হয়ে থাকে।

সে ক্ষেত্রে বেহরুট বন্দরের এই বিশাল ক্ষতি ইজরায়েলের হাইফা বন্দরের জন্য সুবিধাজনক অবস্থান তৈরি করবে। জিয়াদ নাসরুদ্দিন আরও জানান, লেবানন প্রতিষ্ঠার পর এত বড় বিপর্যয় আর কখনও ঘটেনি। এর ফলে লেবাননের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।

আগামিদিনে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে বলে আশঙ্কা অর্থনীতিবিদের। বেহরুট বন্দর সব সময় দেশের অর্থনৈতিক চাকাকে সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে থাকে। ভৌগোলিক কারণে সিল্ক রুট প্রজেক্টেও এই বন্দরের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের একাংশের অভিমত, জাপানের হিরোশিমায় মার্কিন পরমাণু বোমা হামলার ফলে সৃষ্ট বিস্ফোরণের পর এই প্রথম এত বড় বিস্ফোরণ ঘটল। এর ফলে একশ’ কোটি ডলারের বেশি ক্ষতি হয়ে থাকতে পারে বলে অর্থনীতির বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। ভয়াবহ অ্যাসিড বিস্ফোরণের পর এমনিতেই সন্ত্রস্ত জনজীবন।

রাজধানী বেইরুট প্রায় ধংসস্তূপ।এরই মাঝে সরকারি ঘোষণা মতো শুরু হয়েছে দু সপ্তাহের জরুরি অবস্থা। লেবানন অবরুদ্ধ। যে সব কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণে এই বিস্ফোরণ তাদের গৃহবন্দি করার অভিযান চলছে।

আল জাজিরার খবর, মঙ্গলবার বিস্ফোরণের পর অন্তত ১৩৫ জন মৃত। জখমের সংখ্যা ৫ হাজারের বেশি। ভূমধ্যসাগরের তীরে বে়ইরুট বন্দর এলাকা দেখে শি়উরে উঠতে হয়। বেইরুটে প্রবল বিস্ফোরণের পর যে ঝাঁঝালো গন্ধের যে মাশরুম মেঘ উঠেছিল সেটা দেখে হিরোশিমা ও নাগাশাকিতে পরমাণু হামলার কথা বার বার উঠে আসছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.