কন্যার ‘বাইপোলার ডিজ়অর্ডার’ নিয়ে মুখ খুললেন বিধু বিনোদ চোপড়া! কী সমস্যা হয় এতে?

‘এই ভাল, এই খারাপ’। আবহাওয়া নয়, এখানে মনের কথা হচ্ছে। ফুরফুরে মেজাজে ঘুম ভাঙলেও হঠাৎ কোনও কারণে মনের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে উঠতে পারে। তা আবার নিজে নিজেই ঠিক হয়ে যায়। তবে তাকে ঠিক রোগের পর্যায়ে ফেলা যায় না। এই মনখারাপ কখনও এমন আকার নেয় যে, এক মুহূর্তে সব কিছু ছেড়ে দিতে ইচ্ছা করে। আবার, মন ভাল থাকলে নিজেকে সর্বোত্তম বলে মনে হয়। মনমেজাজের ‘গ্রাফ’ এমন ঘন ঘন ওঠানামা করা কিন্তু সাধারণ নয়। এই প্রবণতাকেই চিকিৎসার পরিভাষায় ‘বাইপোলার ডিজ়অর্ডার’ বলা হয়। ক্ষেত্রবিশেষে এই সমস্যা যে কতটা কঠিন হয়ে উঠতে পারে, তা রোগী এবং তার পরিবারের মানুষেরা জানেন।

সম্প্রতি কন্যার বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসে পরিচালক বিধু বিনোদ চোপড়া জানিয়েছেন, ইশাও ‘বাইপোলার ডিজ়অর্ডার’-এর শিকার। নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই বইটি লিখেছেন ইশা। তবে তাঁর যাত্রাপথ একেবারেই সহজ ছিল না। কন্যার এই রোগের কথা প্রথম জানতে পেরে হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন বিনোদ। তবে তাঁদের পারিবারিক চিকিৎসক এই রোগ নির্ণয়ে সাহায্য করেছিলেন বলেই ইশার লড়াই অনেকটা সহজ হয়ে গিয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

এই রোগ কাদের হয়?

বাইপোলার ডিজ়অর্ডার মূলত কমবয়সিদের অসুখ। অবসাদ দিয়েই সাধারণত এই রোগের সূচনা। কারও বয়ঃসন্ধিকালে অবসাদ দেখা দিলে এবং বার বারই তা ফিরে এলে, সাধারণ চিকিৎসায় সাড়া না দিলে চিকিৎসকেরা বাইপোলার বলে সন্দেহ করেন। বয়ঃসন্ধি থেকেই অনেক সময়ে রোগের বিস্তার শুরু হয়, রোগ ধরা পড়ে হয়তো বেশ কিছুটা পরে। পরিবারে আগে কেউ এই রোগে আক্রান্ত হলে পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে রোগাক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।

এই রোগের চিকিৎসা আছে?

‘বাইপোলার ডিজ়অর্ডার’-এরও আবার প্রকারভেদ রয়েছে। প্রাথমিক পর্যায় বা ম্যানিয়াক এপিসোড তাড়াতাড়ি ধরা পড়ে। তা যদি শুধুমাত্র ডিপ্রেশন হয়, তা হলে এক রকম ওষুধ। আবার, বাইপোলার থাকলে তার অন্য রকম চিকিৎসা। চিকিৎসককে একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে রোগীকে পর্যবেক্ষণ করতে হয়। তাঁর পুরনো রোগগুলি সম্পর্কে জানতে হয়। এই রোগীদের ক্ষেত্রে রিস্ক ফ্যাক্টর অনেক বেশি থাকে। সাধারণ অবসাদগ্রস্তদের চেয়ে এঁরা অনেক বেশি আত্মহত্যাপ্রবণ হন। এঁদের মধ্যে নেশাসক্ত হওয়ার প্রবণতাও বেশি থাকে। তবে ডায়াবিটিস হলে নিয়মিত ওষুধ খেয়ে, খাওয়াদাওয়া নিয়ন্ত্রণে রেখে যেমন ভাল থাকা যায়, এই রোগ অনেকটা তেমনই।

এ ক্ষেত্রে ওষুধ একটা বড় ভূমিকা পালন করে ঠিকই, কিন্তু তার পাশাপাশি এই রোগ সম্পর্কে সচেতনতাও জরুরি। সবচেয়ে জরুরি হল রোগের খুঁটিনাটি সম্পর্কে রোগী এবং তাঁদের বাড়ির লোকের ওয়াকিবহাল থাকা, যাতে প্রাথমিক উপসর্গ দেখা দিতে শুরু করলেই তাঁরা ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে পারেন। বাবা হিসাবে বিনোদের দায়িত্বও কম ছিল না। প্রাথমিক ভাবে মেয়ের মানসিক চাপ, উদ্বেগ দূর করাই ছিল তাঁর প্রধান কাজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.