বায়ুদূষণের হাত থেকে পড়ুয়াদের রক্ষা করতে দিল্লির স্কুলগুলিতে শীতের ছুটি এগিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিল আম আদমি পার্টি (আপ)-র সরকার। বুধবার দুপুরে দিল্লি সরকারের তরফে জানানো হয়, আগামী ৯ থেকে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত দিল্লি সরকার পরিচালিত স্কুলগুলিতে শীতের ছুটি থাকবে। সরকারি নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি বেসরকারি স্কুলগুলিকেও ওই সময় ছুটি ঘোষণা করার অনুরোধ করা হয়েছে।
সাধারণত দিল্লির স্কুলগুলিতে ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত শীতের ছুটি থাকে। তবে এ বারের পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন বলে মনে করছেন দিল্লি প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকেরা। স্কুলগুলিতে ছুটি এগিয়ে আনার ব্যাপারে বৈঠকে বসেছিলেন দিল্লির পরিবেশমন্ত্রী গোপাল রাই, শিক্ষামন্ত্রী আতিশী মারলেনা, পরিবহণ মন্ত্রী কৈলাস গহলৌত এবং দিল্লি সরকারের অন্য আধিকারিকেরা।
এর আগে সোমবার দিল্লির পরিবেশমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, শুক্রবার পর্যন্ত স্কুলের পঠনপাঠন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে বোর্ডের পরীক্ষা থাকার কারণে দশম এবং দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য স্কুল খুলে রাখার অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এই ছুটিকেই শীতের ছুটির সঙ্গে জুড়ে দিয়ে তা আরও বাড়িয়ে দিতে চাইছে দিল্লি সরকার। বিষ-ধোঁয়ায় ঢেকে যাওয়া দিল্লিতে পড়ুয়াদের দূষণের হাত থেকে রক্ষা করতেই এই পদক্ষেপ বলে জানানো হয়েছে। অন্য দিকে, বুধবারই দিল্লিতে অন্য রাজ্য থেকে আসা অ্যাপ ক্যাব ঢোকা নিষিদ্ধ করেছে দিল্লি সরকার।
আপাত ভাবে দিল্লির দূষণে জেরবার বাসিন্দারা এখনও পর্যন্ত আশার আলো দেখেননি। তারই মধ্যে মঙ্গলবার খানিক স্বস্তি দিয়েছিল রাজধানীতে বাতাসের গুণগত মান বা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই)। মঙ্গলবার গুণগত মান খানিক বেড়ে ‘অতি খারাপ’ পর্যায়ে গিয়েছিল। বুধবার সকালে আবার তা ‘ভয়ানক’ পর্যায়ে পৌঁছল।
কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ (সিপিসিবি)-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বুধবার সকাল ৭টায় সামগ্রিক ভাবে দিল্লিতে বাতাসের গুণগত মান ছিল ৪২১। লোদী রোড, জহরলাল নেহরু স্টেডিয়াম, অরবিন্দ মার্গের মতো রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় অন্য দিনের মতোই দৃশ্যমানতা ছিল অত্যন্ত কম। পরিসংখ্যান বলছে, বৃহত্তর দিল্লির মধ্যে বায়ুদূষণের হার সবচেয়ে বেশি নয়ডায়। সেখানকার বাতাসের গুণগত মান ৪৭৪। খারাপ পরিস্থিতি আরকে পুরম (৪৩৩), পঞ্জাবি বাগ (৪৬০)-এর মতো এলাকাতেও।
দিল্লির দূষণ নিয়ে মঙ্গলবারই কড়া মন্তব্য করেছে দেশের শীর্ষ আদালত। হাঁসফাঁস করতে থাকা দূষণ নিয়ে দিল্লি এবং তার প্রতিবেশী রাজ্যগুলিকে ভর্ৎসনা করে সুপ্রিম কোর্ট। প্রত্যেক শীতে প্রতিবেশী রাজ্য পঞ্জাব এবং হরিয়ানায় শস্যের গোড়া পোড়ানোই দিল্লির এই দূষণের মূল কারণ বলে মন্তব্য করে আদালত। তাই শস্যের গোড়া পোড়ানো বন্ধ করতে এই দুই রাজ্যকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়। পঞ্জাব সরকারকে শীর্ষ আদালত বলে, “শস্যের গোড়া পোড়ানো এখনই বন্ধ হওয়া উচিত। কী ভাবে করবেন সেটা আপনাদের বিষয়। আপনাদের কাজ। তবে এই কাজ এখনই বন্ধ হওয়া উচিত।”