মেনে নেওয়া হল জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি! বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে কী বললেন ঘেরাওমুক্ত অধ্যক্ষ?

বিক্ষোভকারী পড়ুয়া এবং জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি মেনে নিলেন বর্ধমান মেডিকেল কলেজের কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘ ক্ষণ পরে ঘেরাওমুক্ত হলেন অধ্যক্ষ মৌসুমি বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার কলেজ কাউন্সিলের সভা শেষে অধ্যক্ষের দফতর থেকে কয়েকটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। প্রথম চিঠিতে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশনের সচিবকে অধ্যক্ষ জানিয়েছেন তাপস ঘোষ ব্যক্তিগত কোনও কারণে ডিনের পদ ছাড়তে ইচ্ছুক। এটাই ছিল আন্দোলনকারীদের দাবি। অন্য একটি নির্দেশিকায় রাজ্য স্বাস্থ্য ভবনের নির্দেশক্রমে চিকিৎসক নূপুর ঘোষকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের প্রসূতি বিভাগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তাঁকে ঝাড়গ্রামের গোপীবল্লভপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে কাজে যোগ দিতে বলা হয়েছে। উল্লেখ্য, নূপুর হলেন ‘বিতর্কিত’ চিকিৎসক অভীক দের স্ত্রী। এক বছর আগেই তাঁর বদলির নির্দেশ এসেছিল। কিন্তু কোনও অজানা কারণে তা কার্যকর হয়নি। আর একটি নির্দেশিকায় বেশ কয়েক জন ডাক্তারি পড়ুয়া, ইন্টার্ন, জুনিয়র এবং সিনিয়র রেসিডেন্টের জন্য কলেজ ক্যাম্পাস, হস্টেলে প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রক্রিয়া শেষ হওয়া পর্যন্ত ওই নির্দেশ কার্যকর থাকবে। তবে আত্মপক্ষ সমর্থনে তাঁরা তদন্ত কমিটির ডাকে ক্যাম্পাসে আসতে পারবেন। এর মধ্যে রয়েছেন ন’জন ছাত্রছাত্রী, পাঁচ জন ইন্টার্ন, দু’জন জুনিয়র রেসিডেন্ট এবং দু’জন সিনিয়র রেসিডেন্ট। এঁদের বিরুদ্ধেই বিস্তর অভিযোগ তুলেছিলেন বিক্ষোভকারী জুনিয়র ডাক্তারেরা।

হাসপাতালের একটি সূত্রে খবর, তাপস ঘোষের পদত্যাগের বিষয়টি মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষের তরফে ই-মেল মারফত জানিয়ে দেওয়া হয়েছে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশনের সচিব-কে। পরীক্ষায় ‘নম্বর দুর্নীতি’ এবং ‘থ্রেট কালচার’-এর সঙ্গে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের সহ-অধ্যক্ষ তথা হাসপাতাল সুপার তথা ডিন অফ স্টুডেন্ট অ্যাফেয়ার্স তাপস যুক্ত, এই অভিযোগ তুলে আন্দোলন করছিলেন পড়ুয়ারা। তাঁরা ‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ নিয়ম করার দাবি তোলেন। সেই সঙ্গে অবিলম্বে ডিনের পদ থেকে তাপসকে অপসারণের দাবি তুলেছিলেন। বুধবার সকাল থেকে অধ্যক্ষকে সকাল থেকেই দফায় দফায় ঘেরাও করেন জুনিয়র ডাক্তার এবং মেডিক্যাল পড়ুয়াদের একাংশ। শেষ পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের দাবি মেনে নেওয়া হল। পাশাপাশি গত ১১ আগস্ট লেকচার হলে অভীক দে আরজিকর নিয়ে যা বলেছিলেন তার সিসিটিভি ফুটেজ় দেখানোর দাবিও উঠেছিল। আন্দোলনকারী চিকিৎসক গৌরাঙ্গ প্রামাণিক বলেন, ‘‘সিসিটিভি ফুটেজ়ের বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন অধ্যক্ষ।’’

পড়ুয়াদের বিক্ষোভ শেষে অধ্যক্ষ বলেন, ‘‘ডিন অনেক দিন ধরেই ডিন পদ থেকে সরতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমরাই কাজের স্বার্থে তাঁকে আটকে রাখি। এখন তাঁর আবেদন মানা হল।’’ তবে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনে চাপে পড়ে যে ডিনের পদ থেকে তাপস সরেছেন, সেটা মানতে চাননি অধ্যক্ষ। নূপুরের বদলি নিয়েও তিনি বলেন, ‘‘আগে থেকেই নির্দেশ ছিল। কিন্তু আমাদের হাসপাতালে চিকিৎসকের অভাবের জন্যই তাঁকে ছাড়া হয়নি।’’ তা হলে এ বার কি হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবা ব্যাহত হবে? মৌসুমির জবাব, ‘‘ভবিষ্যৎ এর উত্তর দেবে।’’ অন্য দিকে, তাঁর পদত্যাগ নিয়ে তাপস কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.