টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে শেষ মুহূর্তে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েছিল ভারত। টি-টোয়েন্টি সিরিজ়ের প্রথম ম্যাচে একই প্রতিপক্ষকে হারাতে বেশি পরিশ্রমই করতে হল না ভারতকে। সঞ্জু স্যামসনের শতরান এবং বরুণ চক্রবর্তীর তিন উইকেটের সৌজন্যে ভারত জিতল ৬১ রানে। সিরিজে এগিয়ে গেল ১-০ ব্যবধানে।
বিশ্বকাপের পরেই অবসর নিয়েছিলেন রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, রবীন্দ্র জাডেজা। এই সিরিজ়ে নেই যশপ্রীত বুমরাও। ফলে এখনকার ভারতীয় ক্রিকেট দল পুরোপুরি নতুন। তরুণ ক্রিকেটারে ভরা। উল্টো দিকে দক্ষিণ আফ্রিকার দলে বিশ্বকাপে খেলা সাত ক্রিকেটার ছিলেন। কিন্তু তরুণ ভারতের সামনে কার্যত আত্মসমর্পণ করলেন তাঁরা। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং— তিন বিভাগেই ভাল খেলেছে ভারত। গোটা ম্যাচই তারা নিয়ন্ত্রণ করেছে। শেষ দিকে রান না গলালে আরও বড় ব্যবধানে ম্যাচ জেতার কথা।
ডারবানে সঞ্জুর জাদু
ডারবানের সঙ্গে বরাবরই ভারতীয়দের একটা ভাল যোগ রয়েছে। এই ডারবানেই ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে স্টুয়ার্ট ব্রডকে এক ওভারে ছ’টি ছয় মেরেছিলেন যুবরাজ সিংহ। তার চার বছর আগে বিশ্বকাপে এই মাঠেই সেমিফাইনালে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের অপরাজিত ১১১ রয়েছে। শুক্রবার থেকে এই মাঠে লেখা হয়ে থাকবে সঞ্জুর নামও। ভারতের শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে হায়দরাবাদে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে শতরান করেছিলেন। সেই ফর্মই দক্ষিণ আফ্রিকায় নিয়ে এসেছেন সঞ্জু। প্রথম ভারতীয় হিসাবে টি-টোয়েন্টিতে টানা দু’টি শতরান করলেন। ফ্রান্সের গুস্তাভ ম্যাকিয়ন, দক্ষিণ আফ্রিকার রিলি রুসো এবং ইংল্যান্ডের ফিল সল্টের পর বিশ্বের চতুর্থ ব্যাটার হিসাবে এই কৃতিত্ব। মাঠের এমন কোনও দিক নেই যে দিকে সঞ্জু ছয় মারেননি। দক্ষিণ আফ্রিকা সাত জন বোলার ব্যবহার করেছে সঞ্জুকে আউট করতে। কাউকেই রেয়াত করেননি তিনি। সঞ্জুকে নিয়ে একটা দুর্নাম বরাবরই ছিল। তিনি নাকি আস্থার দাম রাখতে পারেন না। সেই দুর্নাম আপাতত ঘুচিয়ে দিলেন কেরলের ক্রিকেটার। শুক্রবার ৫০ বলে ১০৭ করেছেন তিনি। অর্থাৎ স্ট্রাইক রেট দুশোরও উপরে। সাতটি চার এবং দশটি ছয় মেরেছেন। আউট হয়েছেন ১৬তম ওভারে। যে কোনও ভারতীয় ক্রিকেটার এমন ইনিংস খেলতে পারলে গর্বিত হবেন। শতরান করে হেলমেট খোলার পরেও সঞ্জুর মুখে চওড়া হাসি। সাজঘর থেকে সূর্যকুমার, আরশদীপ সিংহ-সহ গোটা দল উঠে দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানিয়েছে সঞ্জুকে।
ডেথ ওভারে রানের খরা
১৫.৩ ওভারে সঞ্জু যখন ট্রিস্টান স্টাবসের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন, তখন ভারতের স্কোর ১৭৫। হাতে তখনও ছ’টি উইকেট। ক্রিজ়ে হার্দিক পাণ্ড্য। তবে সঞ্জু আউট হতেই ভারতের রানের গতি পুরোপুরি কমে গেল। হার্দিক কিছু ক্ষণ পরেই ফিরলেন। বাকিরাও তাড়াহুড়ো করে খেলতে গিয়ে উইকেট খোয়ালেন। শেষ ৬ ওভারে মাত্র ৪০ রান তুলেছে ভারত। এই রান আরও কিছুটা বাড়িয়ে নিতে পারত তারা। কিন্তু ধৈর্য ধরে কেউ ক্রিজ়ে টিকে থাকতে পারলেন না। অন্য কোনও ম্যাচে রান তাড়া করার সময় এই সমস্যা বড় হয়ে দেখা দিতে পারে।
দ্বিতীয় ওপেনার নিয়ে চিন্তা
দু’দিন আগেই বোর্ডের প্রকাশিত ভিডিয়োয় ডারবানে যুবরাজের ছয় ছক্কার কথা বলছিলেন অভিষেক। নিজে খেলতে নেমে সফল হলেন না। অবদান মাত্র সাত। রোহিত শর্মার অবসরের পর সঞ্জু ওপেনার হিসাবে ঘাঁটি গেড়ে বসেছেন। অভিষেককেও ভরসা হিসাবে ধরা হচ্ছে। তবে টি-টোয়েন্টি দলে জায়গা পোক্ত করতে গেলে আরও ভাল ইনিংস চাই তাঁর ব্যাট থেকে। জীবনের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে শতরান করেছিলেন। তার পর থেকে ২০ রানও করতে পারেননি কোনও ইনিংসে। শুভমন গিল টি-টোয়েন্টি দলে ফিরে এলে জায়গা হারাতে হতে পারে অভিষেককে।
শুরুতেই মার্করামের বিদায়
ওপেন করতে নেমে এডেন মার্করাম শুরুতেই ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। আরশদীপকে পর পর দু’টি চার মেরে আগ্রাসী মেজাজে রান তাড়া করার বার্তা দিয়েছিলেন। তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়া নিঃসন্দেহে বড় সাফল্য। কে না জানে, মার্করাম এক বার ক্রিজ়ে টিকে গেলে একার হাতে ম্যাচ জিতিয়ে আসতে পারেন। শুরুতে অধিনায়ক ফেরায় চাপে পড়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। সেই চাপ গোটা ম্যাচে কাটিয়ে উঠতে পারেনি তারা।
বরুণের ঘূর্ণিজাল
টি-টোয়েন্টি দলে প্রত্যাবর্তনের পর থেকেই স্বপ্নের ফর্মে রয়েছে বরুণ। মহা নিলামের আগে কেকেআর কেন তাঁকে রেখে দিয়েছে তার প্রমাণ আবারও দিলেন তিনি। গৌতম গম্ভীর ভারতের কোচ হওয়ার পর যে কয়েকটি ভাল কাজ করেছেন, তার একটি হল বরুণকে জাতীয় দলে ফেরানো। কেকেআরের হয়ে গত দুই মরসুমে ভাল খেলেছেন তিনি। জাতীয় দলে ফিরেও ফর্ম হারাননি। প্রমাণ করে দিয়েছেন তিন বছর আগে তাঁর ব্যর্থতা নেহাতই একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল। বরুণের বলে এ দিন দিশা খুঁজে পাননি প্রোটিয়া ব্যাটারেরা। তাঁর সবচেয়ে বড় গুণ হল, উইকেট যেমন নেন তেমনই রানও কম দেন। এ দিন টি-টোয়েন্টিতে জীবনের সেরা বোলিংটা করলেন। চার ওভারে ২৫ রানে তিনটি উইকেট নিয়েছেন বরুণ।
ছন্দহীন ক্লাসেন, মিলার
মহা নিলামের আগে ২৩ কোটি টাকা দিয়ে হেনরিখ ক্লাসেনকে ধরে রেখেছে হায়দরাবাদ। ক্লাসেন সেই আস্থার দাম অন্তত প্রথম ম্যাচে দিতে পারলেন না। স্পিনারদের বিরুদ্ধে ব্যাট চলল না। বার বার পরাস্ত হলেন বরুণ, রবি বিশ্নোই, অক্ষর পটেলের বলে। চাইলেও আগ্রাসী খেলতে পারছিলেন না। ডেভিড মিলারের অবস্থাও একই। বরুণের বলে বার বার সুইপ খেলতে গিয়ে পরাস্ত হলেন। দু’জনেই মারতে গিয়ে উইকেট দিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার মিডল অর্ডার কাজে আসেনি এই ম্যাচে। ফলে হারতেও হয়েছে।