লাখ লাখ টাকা নিয়ে বিএড প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলিকে ‘ছাড়পত্র’ দিতেন পার্থ, মানিক, দাবি ইডির

টাকার বিনিময়ে বেসরকারি বিএড এবং প্রাইমারি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (ডিএলএড)-কে ছাড়পত্র দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিতেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। চার্জশিটে এমন অভিযোগই করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। কেন্দ্রীয় ওই সংস্থার দাবি, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে আর এক অভিযুক্ত ‘মিড্লম্যান’ তাপস মণ্ডল জেরায় তাদের ওই তথ্য জানিয়েছেন। শুধু পার্থ নন, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যও ‘স্বীকৃতি’ দেওয়ার বিনিময়ে কলেজগুলির কাছ থেকে টাকা নিতেন বলে অভিযোগ ইডির।

কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দাবি, জেরার মুখে তাপস জানিয়েছেন, ২০১১ সালের ডিসেম্বরে রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের দফতরে গিয়েছিলেন তিনি। শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজগুলির প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন হয়। সেই কমিটির সদস্য হিসাবেই পর্ষদের দফতরে গিয়েছিলেন তাপস। তিনি ইডিকে জানিয়েছেন, প্রশিক্ষণ কলেজগুলির স্বীকৃতি পেতে যে সমস্যা হয়, তা জানাতেই মূলত ওই দফতরে গিয়েছিলেন। তখন পর্ষদের সভাপতি ছিলেন মানিক। সেখানেই মানিকের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। তার পর প্রশিক্ষণ কলেজগুলির সঙ্গে পার্থ এবং মানিকের একমাত্র যোগসূত্র হয়ে উঠেছিলেন তিনিই। ইডির দাবি, জেরায় এ সব কথা জানিয়েছেন তাপস।

ইডির চার্জশিটে জানানো হয়েছে যে, বিএড কলেজগুলি মসৃণ ভাবে চালানোর জন্য প্রথমে শিক্ষা দফতরের কাছ থেকে ‘ছাড়পত্র’ নিতে হত। তার পরেই এনসিটিই (ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার্স এডুকেশন)-র কাছ থেকে ‘স্বীকৃতি’র প্রয়োজন পড়ত। এর পরেই প্রয়োজন পড়ত নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অনুমোদন’-এর। একই ভাবে, ডিএলএড কলেজ মসৃণ ভাবে চালানোর জন্য প্রথমে শিক্ষা দফতরের ‘ছাড়পত্র’ নিতে হত। তার পর এসটিই এবং শেষে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের ‘স্বীকৃতি’ প্রয়োজন পড়ত।

নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ইডির দেওয়া সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটে দাবি করা হয়েছে, মন্ত্রী হিসাবে পার্থ বেসরকারি বিএড এবং ডিএলএড কেন্দ্রগুলিকে ছাড়পত্রের ব্যবস্থা করে দিতেন। টাকার বিনিময়ে তিনি স্বীকৃতির ব্যবস্থাও করে দিতেন বলেও উল্লেখ রয়েছে। এ জন্য কলেজের আসন সংখ্যার উপর ভিত্তি করে ৬ থেকে ৮ লক্ষ টাকা পার্থ নিতেন বলে ইডির দাবি। এই লেনদেন পার্থের নিযুক্ত ‘মিডলম্যান’-এর মাধ্যমে নগদে হত বলেও চার্জশিটে উল্লেখ করা রয়েছে।

২০১১ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি ছিলেন মানিক। ডিএলএডি কলেজগুলির স্বীকৃতির জন্য পর্ষদের অনুমতি প্রয়োজন হত। এ ক্ষেত্রে পার্থের মতো মানিকও কলেজগুলির কাছ থেকে ২ থেকে ৫ লক্ষ টাকা নিতেন বলে চার্জশিটে জানিয়েছে ইডি।

শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির তদন্তে নেমে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থের বাড়িতে তল্লাশি চালায় ইডি। তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালিয়ে কোটি কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়। এর পরেই গ্রেফতার হন পার্থ। পরে তৃণমূলের বিধায়ক মানিককেও গ্রেফতার করা হয়। ইডির ধারণা, অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকে বাজেয়াপ্ত টাকার সঙ্গে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির যোগ রয়েছে। তদন্তকারী সংস্থার অভিযোগ, ‘অযোগ্য’ প্রার্থীদের শিক্ষকের চাকরি দেওয়ার বিনিময়ে টাকা নেওয়া হত। তার নেপথ্যে ছিলেন পার্থ এবং মানিক। আদালতের নির্দেশে দু’জনেই এখন জেল হেফাজতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.