‘শুধু রাশিয়ার তেল কেনা নয়’! ৫০ শতাংশ শুল্কের আরও কারণ জানালেন ট্রাম্পের অর্থসচিব স্কট

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে তেল কিনে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রাশিয়াকে আর্থিক মদত দিয়েছে ভারত! এই অভিযোগে চলতি মাসের গোড়াতেই ভারতীয় পণ্যে জরিমানা-সহ ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা জানিয়েছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরকার। বুধবার ট্রাম্প সরকারের অর্থসচিব অর্থসচিব স্কট বেসেন্ট জানালেন, মস্কো থেকে তেল কেনাই নয়াদিল্লির উপর শাস্তিমূলক শুল্ক বলবতের একমাত্র কারণ নয়!

তা হলে অন্য কারণ কী? মার্কিন অর্থসচিবের মন্তব্য, ‘‘দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে দীর্ঘসূত্রিতা ভারতের উপর বাড়তি শুল্ক আরোপের অন্যতম কারণ।’’ ভারত-আমেরিকা বাণিজ্যচুক্তি চূড়ান্ত রূপ পাওয়ার সম্ভাবনা কি আপাতত নেই? এখনও পর্যন্ত দু’দেশের মধ্যে পাঁচ দফায় আলোচনা হয়েছে। আরও আলোচনা হওয়ার কথা। কিন্তু রফাসূত্রের সন্ধান মেলেনি এখনও।

কেন্দ্রের একটি সূত্র জানাচ্ছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চান ভারত কৃষিপণ্য, দুধ এবং দুগ্ধজাত পণ্যের বাজার তাদের জন্য পুরোপুরি খুলে দিক। কিন্তু তাতে নারাজ নয়াদিল্লি। তাড়াহুড়োয় কেবল আমেরিকার সুবিধা হয়, এমন একপাক্ষিক চুক্তি করা হবে না বলে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার। নয়াদিল্লির এই প্রবল দরকষাকষিতে ক্ষুব্ধ ট্রাম্প জরিমানা-সহ ৫০ শতাংশ শুল্ক বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে গত কয়েক দিন ধরেই জল্পনা ছিল। মার্কিন অর্থসচিবের মন্তব্যে তা কার্যত স্পষ্ট হয়ে গেল।

প্রসঙ্গত, গত ২ এপ্রিল বিভিন্ন দেশের পণ্যের উপর পারস্পরিক শুল্ক আরোপের ঘোষণা করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভারতের পণ্যে শুল্কের পরিমাণ ছিল ২৬ শতাংশ। কিন্তু নতুন শুল্কনীতি কার্যকর হওয়ার আগে ৯০ দিনের স্থগিতাদেশ ঘোষণা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট (যদিও ইস্পাত এবং অ্যালুমিনিয়ামজাত পণ্যে ২৫ শতাংশ বাড়তি শুল্ক বহাল রাখা হয়)। ৯০ দিনের ওই সময়সীমা শেষ হয়েছিল আগামী ৯ জুলাই। এর পরে ট্রাম্প তার সময়সীমা এক মাস বাড়ানোর কথা ঘোষণা করেন। সেই সঙ্গে চলে বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা।

বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে আলোচনার মধ্যেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ৩০ জুলাই ভারতের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপানোর কথা ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্কের কারণে অতিরিক্ত ও অনির্দিষ্ট একটি ‘জরিমানা’ (পেনাল্টি)-র কথাও জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। এর পরে গত ৬ অগস্ট ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্কের উপর আরও ২৫ শতাংশ জরিমানা (অর্থাৎ মোট ৫০ শতাংশ) আরোপ করার কথা ঘোষণা করেন। যা ব্রাজিল ছাড়া অন্য সমস্ত দেশের উপর আরোপিত মার্কিন শুল্কের মধ্যে সর্বোচ্চ।

বুধবার থেকে সেই শাস্তিমূলক শুল্ক কার্যকর হয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৫ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত এক অর্থবর্ষে আমেরিকায় ৭.৬ লক্ষ কোটি টাকার পণ্য রফতানি করেছে ভারত। তার মধ্যে রয়েছে পোশাক থেকে শুরু করে ওষুধপত্র, রত্ন, গয়নাগাটি এবং পেট্রোরাসায়নিক পণ্য। তা ভারতের জিডিপি-র প্রায় ২ শতাংশ। ট্রাম্পের ভারতীয় পণ্যের উপর বাড়তি ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপানোর ঘোষণায় সেই আয়ে টান পড়ার আশঙ্কা। যদিও মোদী সরকারের দাবি, ট্রাম্পের নতুন শুল্কবাণের আঘাতে ভারতীয় অর্থনীতি তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.