নীতীশের উন্নয়ন, সমীকরণ এবং মহিলাদের নগদ অর্থ দিয়ে জিতল এনডিএ, তেমন ভোট না কমলেও কেন বিহারে ডুবল বিরোধী জোট

দেড় বছর আগে লোকসভা ভোটে ‘চারশো পার’ স্লোগান আর নরেন্দ্র মোদীর পোস্টার সামনে রেখে জয় এসেছিল ৭৫ শতাংশ আসনে। এ বার বিহারের বিধানসভা ভোটে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের উন্নয়নের দাবিতে ভর করে এনডিএ জিততে চলেছে প্রায় ৮৩ শতাংশ আসনে! গত অর্ধশতকে বিহার এমন একতরফা জয়ের ছবি দেখেনি। সামান্য কয়েক মাসের বিরতি বাদ দিলে এক টানা প্রায় ২০ বছর ক্ষমতার থাকার পরেও স্থিতাবস্থা বিরোধিতাকে নস্যাৎ করে এমন বিপুল জয়ও বিহার রাজনীতিতে ব্যতিক্রম।

গত ৬ নভেম্বর ২৪৩ আসনের বিহার বিধানসভায় প্রথম দফায় ১২১টি আসনে ভোট পড়েছিল ৬৫.০৮ শতাংশ। ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় দফায় ১২২টি আসনে ৬৮.৭৮ শতাংশ। অর্থাৎ, সামগ্রিক ভাবে প্রায় ৬৭ শতাংশ। মগধভূমে নির্বাচনী ইতিহাসে যা সর্বকালীন রেকর্ড। শুক্রবার নতুন এক রেকর্ড গড়ল বিহার। পাঁচ বছরের ব্যবধানে ভোটদানের হার ১০ শতাংশ বেড়ে গেলে ভারতের কোনও অঙ্গরাজ্যে এ যাবৎ শাসকের প্রত্যাবর্তন দেখেনি। ২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ভোটদানের হার ছিল ৫৭ শতাংশ। সে বার ৩৭.২৬ শতাংশ ভোট পেয়ে ১২৫টি আসনে জিতেছিল এনডিএ। ৩৭.২৩ শতাংশ ভোট পেয়ে ১১০টিতে আরজেডির নেতৃত্বাধীন মহাগঠবন্ধন। নির্দল ও অন্যেরা আটটিতে।

এ বার বিরোধী জোটের আসনসংখ্যা ৪০-ও ছুঁতে পারেনি। গত বিধানসভা ভোটে ‘বৃহত্তম দল’ আরজেডি-কে তৃতীয় হওয়ার জন্য লড়তে হয়েছে চিরাগ পাসোয়ানের লোক জনশক্তি পার্টি (রামবিলাস)-র সঙ্গে! আর প্রাক্তন ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের জনসুরাজ পার্টি? ভোটে খাতাই খুলতে পারেনি তারা! যদিও গতবারের মতোই হায়দরাবাদের সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়েইসির দল মজলিস-ই ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (মিম) পশ্চিমবঙ্গ লাগোয়া সীমাঞ্চল এলাকায় পাঁচটি আসনে জিতে আবার সংখ্যালঘু সমর্থনের প্রমাণ দিয়েছে। ভোটের পরিসংখ্যান অবশ্য বলছে, আসন সংখ্যার হিসেবে ‘বিপর্যয়’ হলেও শতাংশের হিসেবে আরজেডির সমর্থন ততটা কমেনি। ২০২০ সালে ২৩.১ শতাংশ ভোট পেয়েছিল লালুপ্রসাদের দল। এ বার পেয়েছে ২২.৯ শতাংশ। কংগ্রেস গত বার সাড় আট শতাংশের সামান্য বেশি ভোট পেয়েছিল। এ বারও প্রায় তাই।

নীতীশের ভাবমূর্তি

পরিসংখ্যান বলছে, ২০০০ সাল থেকে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী পদে মোট ন’বার শপথ নিয়েছেন তিনি। এর মধ্যে ছ’বার বিজেপির সহযোগী হয়ে। তিন বার আরজেডি-কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে। জেডিইউ প্রধান নীতীশ কুমারকে তাই ‘পল্টুচাচা’ বলে ভোটের প্রচারে ধারাবাহিক ভাবে খোঁচা দিয়েছে বিরোধীরা। কিন্তু শুক্রবার ভোটের ফল জানাল, এখনও তাঁর ভাবমূর্তি অটুট বিহারবাসীর কাছে। সেই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর ‘ভগ্নস্বাস্থ্য’ নিয়ে নানা জল্পনাকেও কোনও গুরুত্ব দিল না মগধভূমি।

ভোট ঘোষণার পরেই এক ভিডিয়ো-বার্তায় নীতীশ বলেছিলেন, ‘‘২০০৫ সালে ক্ষমতায় আসার পরে আমার সরকার সততার সঙ্গে বিহারের জনগণের সেবা করেছে। কঠোর পরিশ্রম রাজ্যের উত্তরণ ঘটিয়েছে। তার ফলে ‘বিহারি’ শব্দটি এখন আর অবমাননার নয়, সম্মানের।’’ লোকনায়ক জয়প্রকাশ নারায়ণের গণআন্দোলন থেকে উঠে আসা নেতার সেই দাবির প্রতি বিহারবাসীর সমর্থন ভোটের ফলেই প্রমাণিত। এর পাশাপাশি পেশায় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার নীতীশের নিপুণ রাজনৈতিক ও সামাজিক সমীকরণ (মহিলাদের হাতে নগদ অর্থ) এবং কুশলী নেতৃত্বও এ বারের ভোটে এনডিএ-র বিপুল জয়ের অনুঘটক হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই।

২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিহারে মোদীর বিজেপি যখন বিপুল ভাবে জয়ী হয়েছিল, তখন কেউ ভাবতেও পারেননি, দেড় বছরের মাথাতেই ২০১৫-র বিধানসভা নির্বাচনে লালু-কংগ্রেসের সঙ্গে ‘মহাগঠবন্ধন’ গড়ে নীতীশ ধরাশায়ী করবেন এনডিএ-কে। সেই ভোটে বিজেপি, রামবিলাস, জিতনরাম মাঁঝির উচ্চবর্ণ-দলিত সমীকরণকে অনায়াসে টেক্কা দিয়েছিল ‘মহাগঠবন্ধন’-এর সংখ্যালঘু-অনগ্রসর ভোটব্যাঙ্ক। এমনকি, ভোটের ফল বিশ্লেষণে ধরা পড়েছিল বিজেপির চিরাচরিত ‘ভূরাবাল’ (উচ্চবর্ণের চার জাত ভূমিহার, রাজপুত, ব্রাহ্মণ এবং লালা বা বৈশ্য) ভোটব্যাঙ্কে ফাটলও!

কিন্তু লালুপ্রসাদের পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ২০১৭ সালে ফের বিজেপির সঙ্গে হাত মেলান নীতীশ। ২০১৯ সালে জাতপাতের অঙ্ক আর পুলওয়ামা-বালাকোট পরবর্তী দেশপ্রেমের আবেগকে হাতিয়ার করে বিরোধীদের কার্যত নিশ্চিহ্ন করে দেয় এনডিএ। ২০২০ সালে বিহারের বিধানসভা ভোটে বিজেপির সঙ্গী হয়ে লড়ে জিতলেও ২০২২ সালের অগস্টে এনডিএ ছেড়ে বিহারে আরজেডি-কংগ্রেস-বামেদের সমর্থন নিয়ে ‘মহাগঠবন্ধন’ সরকার গড়েছিলেন নীতীশ। এর পর টানা এক বছর ধরে জাতীয় স্তরে বিরোধী জোট গড়ে তুলতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, উদ্ধব ঠাকরে, অরবিন্দ কেজরীওয়াল, অখিলেশ যাদবদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছিলেন। বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ গঠনে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। কিন্তু ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ‘ইন্ডিয়া’ ছেড়ে নীতীশ আবার ফিরে যান এনডিএ-তে। এর পরে লোকসভা ভোটে বিহারে ৪০টি আসনের মধ্যে এনডিএ-র ঝুলিতে এসেছিল ৩০টি। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ‘জোটের নেতা’ ঘোষণা করলেও গোটা প্রচারপর্বে বিজেপি ‘পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী’ হিসেবে নীতীশের নাম নেয়নি। কিন্তু একদা শত্রু চিরাগ, জিতনরামরা প্রকাশ্যে তাঁকেই ‘পরবর্তী নেতা’ বলে মেনে নিয়েছেন।

‘জঙ্গলরাজ’ বনাম উন্নয়ন

বিহারবাসীর বড় অংশই মনে করেন, দু’দশক আগে নীতীশ যখন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন তখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি ঘটেছিল। আরজেডি জমানার সেই ‘জঙ্গলরাজে’র অবসানের পাশাপাশি তাঁর সরকারের প্রচেষ্টায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য, রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ, পানীয় জল, কৃষি এবং যুব কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি এনেছেন জেডিইউ প্রধান। সেই সঙ্গে তাঁর জমানায় সামাজিক উন্নয়নেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটেছে। যার পরিণামে ভোটের পাটিগণিতেও ঘটেছে নিঃশব্দ বদল।

ভোটের প্রচারপর্বে প্রতিশ্রুতির বন্যা এবং একে অপরকে কাঠগড়ায় তুলে প্রচারে ঝড় তুলেছে শাসক-বিরোধী সব পক্ষই। মহাগঠবন্ধনের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী তেজস্বী যাদব আগেই বিহারের প্রতিটি পরিবারের এক জন সদস্যকে সরকারি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেষবেলায় তাঁর অঙ্গীকার ছিল, মহাগঠবন্ধন ক্ষমতায় এলে বিহারের মহিলাদের এককালীন ৩০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে কৃষকেরাও পাবেন অঢেল সুবিধা।

অন্য দিকে, মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ এবং তাঁর সহযোগী বিজেপির প্রচারে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে ‘লালু জমানার জঙ্গলরাজ’ এবং গত দু’দশকে বিহারে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি এবং উন্নয়ন। সেই ভোটের আগে কুশলী চাল দিয়েছেন নীতীশ। ভোটের ঠিক আগেই বিহারের স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির প্রায় দেড় কোটি মহিলার অ্যাকাউন্টে এককালীন ১০ হাজার টাকা পাঠিয়েছিল তাঁর সরকার। সেই সঙ্গে ছিল প্রতিশ্রুতি— ক্ষমতায় ফিরলে অন্য মহিলাদেরও একই অঙ্কের অর্থ দেবেন। তেজস্বী জানিয়েছিলেন , রাজ্যে যে কয়েক লক্ষ ‘জীবিকা দিদি’ (স্বনির্ভর গোষ্ঠীর প্রধান ও সামাজিক উন্নয়নের কাজে যুক্ত মহিলা) কাজ করছেন, তাঁদের বেতন ৩০ হাজার টাকা করার পাশাপাশি তাঁদের সরকারি কর্মচারী হিসেবে গণ্য করা হবে। কিন্তু ‘সব পরিবারে চাকরি’র মতোই সেই প্রতিশ্রুতিতেও ভরসা রাখেনি বিহার।

জাতপাতের সমীকরণ

নব্বইয়ের দশকের গোড়ায় কংগ্রেসের একাধিপত্য চূর্ণ করে পটনায় ক্ষমতা দখল করেছিল অবিভক্ত জনতা দল এবং বিজেপির জোট। এর পরেই রামমন্দির আন্দোলন ঘিরে সমীকরণ বদলে যায়। বিজেপির কমণ্ডল রাজনীতির মোকাবিলায় অভিভক্ত জনতা দলের মণ্ডল রাজনীতির সূচনার পরেই বিহারের রাজনীতি অগ্রসর (সবর্ণ) এবং অনগ্রসরে (পিছড়া) দ্বিধাবিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। লালকৃষ্ণ আডবাণীর রামরথ রুখে দিয়ে বিহারে সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক নিশ্চিত করে নিয়েছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ। পরের দেড় দশক এই যাদব-মুসলিম (এম-ওয়াই) সমীকরণকে হাতিয়ার করে তিনি মগধভূমি শাসন করেছেন।

কিন্তু বিজেপিকে সঙ্গে নিয়ে ২০০৫ সালে পটনার কুর্সি দখলের পরে কুর্মি নেতা নীতীশ দ্রুত লালুর সেই ভোটব্যাঙ্কের মোকাবিলায় নতুন সমীকরণ গড়ায় মন দিয়েছিলেন। সে ক্ষেত্রেও জাতপাতের অঙ্ক কষেই এগিয়েছিলেন তিনি। বিহারে জনসংখ্যার ৫০ শতাংশের বেশি অনগ্রসর শ্রেণি (ওবিসি) ভুক্ত। তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ যাদব, কুশওয়াহা-কোয়েরি এবং কুর্মিরা। বিহারে যাঁরা ‘ওয়াইকেকে’ নামে পরিচিত। এর মধ্যে যাদব প্রায় ১৫ শতাংশ, কুশওয়াহা-কোয়েরি মিলে ৭ শতাংশ এবং কুর্মি ৫ শতাংশ। অর্থাৎ, মোট ওবিসির অর্ধেকের কিছু বেশি। বাকি অংশ ১৩০টি উপ-গোষ্ঠী (সাব-কাস্ট) মিলে। কিন্তু সম্পদ, শিক্ষা-চাকরি-সহ সরকারি সুযোগসুবিধা ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের দিক থেকে অন্য অনগ্রসর গোষ্ঠীগুলিকে পিছনে ফেলেছে ওয়াইকেকে-র তিনটি জাত।

নীতীশ ঠিক সেই জায়গাতেই থাবা বসিয়েছিলেন। ওই ১৩০টি সাব-কাস্টকে তাঁর সরকার ‘মোস্ট ব্যাকওয়ার্ড কাস্ট’ বা এমবিসি (‘অতি পিছড়া’ এবং ‘ইবিসি’ নামেও পরিচিত) হিসেবে চিহ্নিত করে। পঞ্চায়েত ও নগরপালিকার ভোটে সংরক্ষণ দিয়ে তাদের ক্ষমতায়নের পথ প্রশস্ত করেছিল নীতীশ সরকার। সেই সঙ্গে দলিতদের (এসসি) মধ্যে অপেক্ষাকৃত এগিয়ে থাকা চামার (যাঁরা প্রয়াত রামবিলাস পাসোয়ানের ভোটব্যাঙ্ক হিসাবে পরিচিত) জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে একেবারে পিছিয়ে থাকা ২২টি উপগোষ্ঠীকে (মুশাহর, ডোম, ঘাসি, রাজোয়ার, ধোবি, পাসি প্রভৃতি) ‘মহাদলিত’ মর্যাদা দিয়ে বাড়তি সুবিধা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন নীতীশ। ভোটের ফল বলছে ধারাবাহিক ভাবে তার সুফল পাচ্ছেন তিনি। ‘মহাগঠবন্ধন’-এ থাকাকালীন যে ভাবে নীতীশ বিহারে জাতসমীক্ষার রিপোর্ট প্রকাশ করে ওবিসিদের জন্য বাড়তি সংরক্ষণের বিল বিধানসভায় পাশ করিয়েছিলেন, তারও সুফল তারা পেতে পারে বলে মনে করেছিলেন ভোটপণ্ডিতদের অনেকেই। গত বছরের লোকসভা নির্বাচনের পরে এ বারের বিধানসভা ভোটের ফলেও সেই ইঙ্গিত স্পষ্ট।

বিরোধী জোটে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই’

বিহারে এ বারের ভোটের ফল বলছে ১১টি বিধানসভা আসনে মহাগঠবন্ধনের শরিক দলগুলির মধ্যে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই’ হয়েছিল। তার সবগুলিই গিয়েছে, এনডিএর দখলে। এর মধ্যে বৈশালী, কহালগাঁও, নরকাটিয়াগঞ্জ, সিকন্দ্রা ও সুলতানগঞ্জে আরজেডি বনাম কংগ্রেস, গৌরা-বরাম ও চইনপুরে আরজেডি বনাম বিকাশশীল ইনসান পার্টি এবং বছওয়ারা, রাজাপাখর, বিহারশরিফ ও কারগাহরে কংগ্রেস বনাম সিপিআই লড়াই হয়েছিল।

এর মধ্যে দু’টি আসনে বিরোধী ভোটপ্রাপ্তি জয়-পরাজয়ের ব্যবধানের তুলনায় বেশি। অন্য কয়েকটি আসনেও বিরোধী অনৈক্যের ‘রাজনৈতিক প্রভাব’ পড়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। শুধু বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই নয়, তেজস্বীকে ‘মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী’ ঘোষণা করার প্রশ্নে যে ভাবে বিরোধীদের মধ্যে ফাটল প্রকাশ্যে চলে এসেছিল, তা নিয়ে ভোটপ্রচারে বার বার খোঁচা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বলেছেন, ‘‘কংগ্রেসের কানের গোড়ায় বন্দুক ধরে তেজস্বীকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করতে বাধ্য করা হয়েছে।’’ মোদীর অভিযোগ নিয়ে তেমন উচ্চবাচ্য করেননি কংগ্রেস নেতৃত্ব। বরং তিন মাস আগে ভোটাধিকার যাত্রায় সাড়া মেলার পরেও বিধানসভা ভোটের প্রচার থেকে হঠাৎই নিজেকে কিছুটা গুটিয়ে নিয়েছিলেন রাহুল গান্ধী।

‘নির্ণায়ক’ হলেন চিরাগ পাসোয়ান

২০২০ সালের বিধানসভা ভোটে ১৩৪ আসনে পড়ে মাত্র একটিতে জিতলেও প্রায় ৬ শতাংশ ভোট পেয়েছিল চিরাগ পাসোয়ানের লোক জনশক্তি পার্টি। প্রয়াত রামবিলাস পাসোয়ানের পুত্র এ বার এনডিএ-র সহযোগী হওয়ায় তাদের জয়ের পথ আরও সুগম হয়েছে। লালুপ্রসাদ যাদব-নীতীশ কুমারের সমসাময়িক হলেও বরাবরই জাতীয় রাজনীতিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেছেন চিরাগের পিতা রামবিলাস। বাকি দু’জন যখন রাজ্য-রাজনীতিতে ক্ষমতা দখলের জন্য সক্রিয়, তখন রামবিলাস বার বার জোট বদলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্বেই মনোনিবেশ করেছেন। কিন্তু ২০২০ সালে রামবিলাসের প্রয়াণের পরে বিহারের বিধানসভা ভোটে চিরাগের নেতৃত্বে অখণ্ড এলজেপি আলাদা ভাবে ভোটে লড়েছিল। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, সেই ভোটে বিজেপির বিরুদ্ধে তেমন প্রার্থী দেননি চিরাগ। তিনি নিশানা করেছিলেন নীতীশের জেডিইউকে।

এর পরে ২০২১-এর মধ্যপর্বে এলজেপিতে ভাঙন ধরে। সে সময় বিজেপি এবং জেডিইউ দাঁড়িয়েছিল চিরাগের কাকা পশুপতি পারসের পাশে। সে সময় পারস-সহ লোকসভায় দলের পাঁচ সাংসদ এক দিকে ছিলেন। অন্য দিকে, একা রামবিলাস-পুত্র চিরাগ। সে সময় লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা ‘এলজেপি সংসদীয় দলের’ স্বীকৃতি দিয়েছিলেন পারসের গোষ্ঠী ‘রাষ্ট্রীয় লোক জনশক্তি পার্টি’কে। এনডিএ জোটে তাঁকে স্থান দিয়েছিল বিজেপি। প্রধানমন্ত্রী মোদীও চিরাগকে ব্রাত্য করে পারসকে কেন্দ্রে প্রতিমন্ত্রী করেছিলেন। কিন্তু দলিত পাসোয়ান জনগোষ্ঠীর ভোট চিরাগের দিকে ঝুঁকেছে আঁচ পেয়ে গত লোকসভা ভোটের আগে পারসকে ব্রাত্য করে চিরাগের সঙ্গে জোট করে বিজেপি-জেডিইউ। এলজেপির জন্য বরাদ্দ পাঁচটি আসনই চিরাগ গোষ্ঠীকে ছেড়ে দেওয়া হয়। সবক’টিতেই জেতে এলজেপি (রামবিলাস)। বিধানসভা ভোটের ফলেও প্রমাণিত হয়েছে চিরাগের দলের দুর্দান্ত ‘স্ট্রাইকিং রেট’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.