লোকসভায় আবার টিকিট পেতে জিততে হবে মোদীর ভোট! অন্য নাম বলারও সুযোগ বিজেপি কর্মীদের

সব কিছু ঠিক থাকলে লোকসভা নির্বাচন ঘোষণা হতে এখন মাস তিনেক সময় রয়েছে। তবে তার আগেই আর এক ভোট শুরু করে দিয়েছে বিজেপি। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যার নেতৃত্বে। তাঁর ‘নমো’ অ্যাপের মাধ্যমেই শুরু হয়েছে ভোটাভুটি। আর সেই ভোট নিয়ে বেশ চিন্তায় থাকতে হবে বিজেপি সাংসদদের। মানে, ২০১৯ সালেও যাঁরা জয় পেয়েছেন, তাঁরা ২০২৪ সালের ভোটে দলের টিকিট পাবনে কি না তা নিয়ে চিন্তায় থাকতে হবে সাংসদদের। শুধু বাংলা নয়, গোটা দেশের বিজেপি সাংসদদের কাছেই এই সমীক্ষা বেশ চাপের।

মোদী ক্ষমতায় আসার পর পরই ‘নমো’ অ্যাপ তৈরি করেন। এর পরে এই অ্যাপকে জনপ্রিয় করে তুলতে দলীয় ভাবেও উদ্যোগ নেওয়া হয়। এখন বিজেপির দাবি অনুযায়ী, দলের সব নেতা-কর্মীর মোবাইলেই রয়েছে ‘নমো’ অ্যাপ। আর সেই অ্যাপের মাধ্যমেই দেশের সব সাংসদের কাজ ও জনপ্রিয়তা যাচাই করা হচ্ছে। বিজেপি শিবির সূত্রে খবর, এই ভোটাভুটির উপরে অনেকটাই নির্ভর করতে পারে, আসন্ন নির্বাচনে পদ্ম প্রতীকে কারা লড়তে পারবেন এবং কারা বাদ পড়বেন।

সেটা ঠিক হলে এই ভোট বিজেপির টিকিটে জয়ী সাংসদদের জন্য যেমন চিন্তার, তেমনই হারা আসনে কারা পদ্মের টিকিট পাবেন সেটাও নির্ভর করছে। ‘নমো’ অ্যাপে শুরু হয়েছে তারই সমীক্ষা। নাম দেওয়া হয়েছে ‘জন মন সমীক্ষা’। এই সমীক্ষায় কেন্দ্রীয় সরকারের কাজে কে কতটা খুশি তা জানাতে হবে বিজেপির নেতা-কর্মীদের। সেই সঙ্গে বলতে হবে মোদী সরকারের বিদেশনীতি থেকে অর্থনীতি, কর্মসংস্থানের উদ্যোগ থেকে যোগাযোগ ব্যবস্থা— কোন কাজ কাকে বেশি প্রভাবিত করেছে। কে কেন্দ্রের কোন কোন প্রকল্পের মাধ্যমে উপকৃত তা-ও জানাতে হচ্ছে।

এ সবের পরেই সমীক্ষায় জানতে চাওয়া হচ্ছে লোকসভা আসনের নাম। রাজ্য অনুসারে লোকসভা আসন জানালেই সেখানকার সাংসদদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানা হচ্ছে। ওই সাংসদ নিজের এলাকায় কতটা সময় দেন, তাঁকে নিয়মিত দেখা যায় কি না, এলাকার উন্নতিতে তাঁর ভূমিকা রয়েছে কি না এবং থাকলে কতটা আছে সবই প্রশ্নের মাধ্যমে জানা হচ্ছে। সর্বোপরি সাংসদকে নিয়ে ‘অখুশি’, ‘অল্প খুশি’ না কি ‘খুব খুশি’ সবই জানানো যাচ্ছে।

প্রথম থেকে এই পর্যন্ত শুধু পছন্দের অপশনে টিক করলেই হয়ে যাবে। কিন্তু এর পরেই রয়েছে একটি মোক্ষম প্রশ্ন। সেখানে ওই লোকসভা এলাকার তিন জন জনপ্রিয় বিজেপি নেতার নাম জানতে চাওয়া হচ্ছে। সেই তিনটি নাম লিখে দিতে হচ্ছে অ্যাপের নির্দিষ্ট জায়গায়। এটাই সব চেয়ে চিন্তার বলে মনে করছেন বিজেপি নেতারা। এক রাজ্য নেতা বলেন, ‘‘কেউ কারও কাছের লোক হলেই যে টিকিট পাবেন না, তা স্পষ্ট এই সমীক্ষায়। সেখানে কর্মীরা কাকে সাংসদ হিসাবে চাইছেন সেটা জানানোর সুযোগ রয়েছে। ফলে এখন যিনি সাংসদ রয়েছেন, তাঁর পরিবর্তে কার নাম বেশি করে উঠে আসছে সেটাও অ্যাপ বলে দেবে।’’ ওই নেতার ব্যাখ্যা অনুযায়ী গত নির্বাচনে হেরে যাওয়া আসনেও কে টিকিট পাবেন সেটাও এই সমীক্ষা থেকে বেছে নেওয়া হতে পারে। কারণ, ওই লোকসভা এলাকায় দলের কোনও নেতা প্রভাবশালী হিসাবে ভেবে থাকতে পারেন, তিনিই প্রার্থী হওয়ার যোগ্য। রাজ্য নেতৃত্বও হয়তো তাঁর নামই পাঠালেন। কিন্তু তাঁকে কর্মীরা আদৌ চাইছেন কি না সেটা বলে দেবে মোদীর ‘জন মন সমীক্ষা’।

বাংলাতেও শুরু হয়েছে সমীক্ষা। ইতিমধ্যেই বিজেপি কর্মীদের মোবাইলে এই সমীক্ষার লিঙ্ক পাঠানো শুরু হয়ে গিয়েছে। সেটা না পাঠালেও যাঁদের মোবাইলে ‘নমো’ অ্যাপ রয়েছে তাঁরা সমীক্ষায় যোগদানের নোটিফিকেশন পাচ্ছেন। ফলে ২০১৯ সালে জিতলেও বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ থেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক বা লকেট চট্টোপাধ্যায়-সহ সব সাংসদেরই চিন্তা থাকবে। আবার গত বার পরাজিত হয়েও এ বারের টিকিট প্রার্থীরাও চিন্তায় রয়েছেন। কারণ, সমীক্ষায় স্থানীয় ভোটার নেতা-কর্মীদের মধ্যে জনপ্রিয়তাই যোগ্যতার মাপকাঠি। সেই মাপকাঠিতে নতুন কোনও নামও উঠে আসতে পারে।

গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি একক ভাবে জিতেছিল ৩০৩ আসনে। এনডিএ-র শরিক দলগুলি আরও ৫০টি আসনে জয় পায়। এ বার বিজেপি ৪০০ আসন পাওয়ার লক্ষ্য ঘোষণা করেছে। বিজেপি সূত্রে খবর, প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও এ বার বিজেপি বিশেষ নজর দিতে চায়। জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে এমন প্রার্থীদেরই টিকিট দেওয়া হবে বলে ইতিমধ্যেই বাংলার বিজেপি নেতাদের জানিয়ে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। আর বিজেপি যে প্রবীণদের প্রার্থী করতে চায় না, সে কথাও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আবার পুরনো মুখেদের তুলনায় নতুনদের যে বিজেপি বেশি করে সামনে আনতে চায়, সেটা সম্প্রতি তিন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে দেখিয়ে দিয়েছেন মোদী। রাজনীতিতে দীর্ঘ পরিচিতি সত্বেও মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেননি শিবরাজ সিংহ চৌহান কিংবা বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়ারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.