মোদী-শাহর ঘনঘন বঙ্গ সফর চাপ বাড়ছে তৃণমূলে

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর ঘন ঘন রাজ্যে আসা একদিকে যেমন বিজেপিকে উজ্জীবিত করছে অন্য দিকে তেমন ভোটের আগে তৃণমূলের চিন্তাও বাড়িয়ে দিচ্ছে । এর ফলে ভোটার আগে রাজনৈতিকভাবে চাপ বাড়ছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের ওপর । সম্প্রতি প্রাধননমন্ত্রী নেতাজির জন্মদিনে কলকাতায় এসেছিলেন। নেতাজির বাড়ি থেকে তিনি রাস্তায় নেমে পথচলতি মানুষের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করেছেন। এরই পাশাপাশি কোচবিহারে এসে পরিবর্তন যাত্রার সূচনা করে গেছেন অমিত শাহ। আর তার সাতদিনের মধ্যেই আবার গতকাল তিনি রাজ্যে এসে নামখানায় সভা এবং সেখান থেকে কলকাতার পরিবর্তন যাত্রার সূচনা করেছেন। আজ শুক্রবার অমিত শাহর সভা রয়েছে জাতীয় গ্রন্থাগারে।সেখান থেকেও তিনি দলের কর্মীদের কাছে নিশ্চই কিছু বার্তা দেবেন।

এদিকে ২২ ফেব্রুয়ারী রাজ্যে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ঐদিন তিনি হুগলির ডানলপ ময়দানে সভা করবেন। বিজেপি সূত্রে জানা গেছে হুগলির এই স্থান প্রধানমন্ত্রীর সভার জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে কারণ এই জেলার সিঙ্গুর থেকেই আন্দোলন করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টাটাদের মোটর গাড়ির কারখানাকে সরিয়ে দেন। তার পর কৃষি জমি রক্ষার দাবি নিয়ে তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় এলেও এ পর্যন্ত রাজ্যে সেভাবে কোনও উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ শিল্প ক্ষেত্রে রাজ্যে হয়নি। বিজেপি এই বিষয়টিকে ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে ইস্যু করে প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে ডানলপ ময়দানের সভা থেকে বার্তা দিতে চায়। বিজেপি ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছে রাজ্যে ক্ষমতায় এসে সিঙ্গুরের শিল্প গড়ে তুলবে তারা।

তাছাড়া দিল্লি সীমান্তে যেভাবে বিতর্কিত কৃষি আইন নিয়ে কৃষকরা আন্দোলন করছেন তার আঁচ বাংলায়তেও পড়েছে। তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বামেরা এই ইস্যুতে বিজেপি ও নরেন্দ্র মোদী সরকারকে বিঁধছে। তাই কৃষিপ্রধান হুগলী জেলায় কৃষকদের কাছে রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে দিয়ে একটা সদর্থক বার্তা দিতে চাইছে বঙ্গ বিজেপি।

এর পর ৭ মার্চ কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আসছেন পরিবর্তন যাত্রার অনুষ্ঠানে। এই পরিবর্তন যাত্রার মধ্যদিয়ে বিজেপি রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলকে অপসারিত করে নিজেদের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে। রাজ্যের ২৯৪টি বিধানসভা কেন্দ্রেই এই পরিবর্তনের রথ ঘুরবে । নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ, জে পি নাড্ডা-র মতো বিজেপি-র শীর্ষনেতৃত্ব এই পরিবর্তন যাত্রার সূচনা করছেন।
আসলে ২০২০-র পুজোর পরই বিজেপি-র তরফে ঘোষণা করা হয়েছিল বাংলায় বিধানসভা নির্বাচনে ২০০ আসনে জয়ী হয়ে রাজ্যের শাসন ক্ষমতায় বিজেপি আসবে। সেই পরিকল্পনাকে সার্থক করতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা সহ অন্যান্য শীর্ষ নেতারা যে বাংলায় আসবেন সেটা বিজেপি-র তরফে ঘোষণা করে হয়েছিল। আর সেই সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপি-র শীর্ষনেতাদের রাজ্যে আসাকে কটাক্ষ করে “বহিরাগত” তকমা লাগিয়ে দিয়েছিলেন অমিত শাহ, নরেন্দ্র মোদী ও জে পি নাড্ডা-র ওপর।

তবে বিজেপি সেই কটাক্ষকের জবাবে তৃণমূলের যুবনেতা আভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে তীব্র সমালোচনায় বিদ্ধ করতে শুরু করে। এরই সঙ্গে সঙ্গে ভাঙ্গন শুরু হয় তৃণমূলের। তাতে তৃণমূল দলটি পূর্বের চাইতে অনেকটাই নড়বড়ে হয়ে পরে, যদিও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন,”যারা গেছে যাক, তাতে দলের কিছু এসে যায় না।” যদিও এটা তৃণমূলের রাজনৈতিক কৌশল ছাড়া এবং বিজেপির এই ক্রমবর্ধমান চাপের কাছে প্রকাশ্যে নতি স্বীকার না করার একটা রাজনৈতিক কৌশল ছাড়া কিছু নয়, না হলে কর্মীদের মনোবল ভেঙে যাবে। তবে মোদী-শাহর ঘনঘন রাজ্যে আসা তৃণমূলের স্নায়ুর চাপ যে বাড়িয়ে দেবেই তাতে কোনও সন্দেহ নেই বলেই রাজনৈতিক মহলের মত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.